পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Dec 27, 2019, 12:01 PM IST

ETV Bharat / bharat

সাধারণ মানুষের থেকে দূরত্বই কি ঝাড়খণ্ডে গেরুয়া বিপর্যয়ের কারণ ?

রঘুবর দাস 2014 সালের নির্বাচনে হাজার ভোটে জিতেছিলেন, কিন্তু এবারের ভোটে আদিবাসী ভোট হাতছাড়া হওয়ার ফল পেয়েছেন ৷ পরাজিত হয়েছেন । এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে দল তৃণমূল স্তরের থেকে কতটা দূরে সরে গেছিল । স্থিতিশীল সরকারের ধরনা যে সব ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না, এবারের ভোট তাই প্রমাণ করে দিল ।

Hemant Soren
হেমন্ত সোরেন

সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে ভোটের ফল দেখিয়ে দেল সংশ্লিষ্ট এলাকায় BJP-র জনপ্রিয়তার প্রকৃত চিত্র । ভোটের আগে দলের নেতারা ধরে নিয়েছিলেন এবার তাঁরা 81টি আসনের মধ্যে কম করে 65টি আসন পাবেন । কিন্তু ফলপ্রকাশের পর আসল ছবিটা ধরা পড়ল ৷ দেখা গেল মাত্র 25টি আসন পেয়েছেন তাঁরা । যা নিঃসন্দেহে গেরুয়া শিবিরের অস্তিত্ব সংকটের সামিল ।

2014 সালের থেকে এবার ভোটের হার 2.4 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল । কিন্তু তারা হারিয়েছে এক ডজন আসন, যা BJP-নেতাদের হতাশার কারণ । 2014 সালে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (JMM)-র সঙ্গে কংগ্রেস দূরত্ব তৈরি করেছিল । কিন্তু, এবার ভোটের আগে তারা জোটবদ্ধ ভাবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয় । এবারের ফল সামনে আসার পর বোঝা গেল কংগ্রেস গতবার কতটা কৌশলগত ভুল করছিল । এবারের ভোটে কংগ্রেস-16টি, JMM-30টি এবং RJD-1টি আসন পায় । এই মিলিত জোট ম্যাজিক ফিগারের থেকে 6টি আসন বেশি পেয়েছে । রঘুবর দাসকে গতবার মুখ্যমন্ত্রী করে BJP বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়ক্ষেত্রে একটি স্থায়ী সরকার গঠনের । তাদের দাবি ছিল, এর ফলে রাজ্যের উন্নতি দ্রুত করা সম্ভব হবে । অর্জুন মুণ্ডার মতো আদিবাসী নেতাকে ঝাড়খণ্ড থেকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নিয়ে আসা হয়েছিল । এর তাৎক্ষণিক ফল হিসেবে আদিবাসীদের থেকে ক্রমেই সরে আসছিল BJP । আদিবাসী ভোট হারানো এবারে তাদের ধরাশায়ী হওয়ার অন্যতম কারণ । 2014 সালে অল ইন্ডিয়া ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন 5টি এবং BJP 37টি আসন পেয়ে সহজেই ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে গেছিল । কিন্তু, এবার AJSU সঙ্গে জোট করতে পারেনি BJP ৷ কারণ তাদের কয়েকটি দাবি BJP-র পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না । যাই হোকে, এবারের ভোটে মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস ছাড়াও আরও ছয় জন মন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন । রঘুবর দাস 2014 সালের নির্বাচনে হাজার ভোটে জিতেছিলেন, কিন্তু এবারের ভোটে আদিবাসী ভোট হাতছাড়া হওয়ার ফল পেয়েছেন ৷ পরাজিত হয়েছেন । এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে দল তৃণমূলস্তর কতটা দূরে সরে গেছিল । স্থিতিশীল সরকারের ধরনা যে সব ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না, এবারের ভোট তাই প্রমাণ করে দিল ।

ঝাড়খণ্ড রাজ্যটির বয়স 14 বছর । এ'টি দেশের প্রথম উপজাতি অধ্যুষিত রাজ্য যেখানে ভোট নিয়ে একাধিক রাজনৈতিক বিরোধ-উত্তেজনা রয়েছে । অতি সম্প্রতি 288 আসনের মহারাষ্ট্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এক দফায় ভোট হয়েছে । কিন্তু মাত্র 81টি আসনের ঝাড়খণ্ডের ক্ষেত্রে এই সাহস দেখাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন । এখানে পাঁচ দফায় ভোট হয়েছিল ৷ এর অন্যতম কারণ ছিল রাজ্যের সাম্প্রতিকতম জঙ্গি কার্যকলাপ । এই পরিস্থিতি বুঝিয়ে দেয় 2014 সালের থেকে বর্তমান অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি । সে'বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভোট প্রচারে গিয়ে একটি প্রশ্ন তুলেছিলেন, যদি অস্ট্রেলিয়া সম-পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে এত উন্নতি করতে পারে, তাহলে ঝাড়খণ্ড পারবে না কেন ? সেদিন উপস্থিত জনগণ সমম্বরে বলে উঠেছিল, 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ'৷ জনগণের সেই উচ্ছ্বাস জিতিয়েছিল রঘুবর দাসকে ৷ স্থায়ী-স্থিতিশীল সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি । কিন্তু দ্রুত সেই মোহভঙ্গ হয় ৷ রঘুবর দাস দায়িত্ব নেওযার পরই রাজ্যের নতুন জমি আইন কার্যকর করেন ৷ তাতে আদিবাসী মানুষগুলোর মনে নতুন আশঙ্কা দেখা দেয় । BJP সব সময় উচ্চ-ভোটব্যাংক এবং OBC-র দিকে নজর দিয়েছে ৷ তাদের কাছে আনার চেষ্টা করেছে । আবার গো-রক্ষক কর্মসূচির জন্য অ-হিন্দু ভোটব্যাংক তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । প্রসঙ্গত, বলে রাখা ভালো, গো-রক্ষকদের তাণ্ডবের ফলে 22 জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা নিঃসন্দেহে মোদি-শাহদের কাছে বড় ধাক্কা । কম করে 9 বার ঝাড়খণ্ডে ভোট প্রচারে গেছিলেন নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ । নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সেখানকার মানুষদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু তাও দেখা গেল কাজের কাজ কিছু হল না । ঝাড়খণ্ডের মানুষ পাঁচ বছরের মধ্যে পুরোনো সরকারকে ফেলে দিল ।

এতদিন দেশের নানা প্রান্তে BJP ঝড় লক্ষ্য করা গেছিল । ছোটো হোক বা বড়, প্রতিটি রাজ্যে গেরুয়া ঝড় কংগ্রেসমুক্ত ভারতের ডাক দিয়েছিল । ডিসেম্বর 2017, দেশের মোট আসনের 71 শতাংশ ছিল তাদের দখলে । তাদের ঝড়ের গতিতে উত্থান শুধু বিস্ময়কর ছিল তাই-ই নয়, বিরোধীরা ভোটের বাজার থেকে মুছে যাচ্ছিল । কিন্তু এক বছরের মধ্যেই ছবিটা হঠাৎ করেই পালটে গেল । মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে ধাক্কা খেল BJP । যদিও কর্নাটকে জোট বেঁধে কোনওক্রমে নিজেদের অবস্থান বজায় রেখেছে । দুষ্যন্ত চৌতালার সঙ্গে সমঝোতা করে হরিয়ানাতে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে । দু'বছর আগে ঝড়ের গতিতে উত্থানের সঙ্গে দু'বছর পরের ছবিটা পুরোপুরি বদলে গেছে । এ বিষয়ে একটাই কথা বলা যায়, BJP দেশীয় স্তরে যে চিন্তাভাবনা করছে, আঞ্চলিকস্তরের তার সঙ্গে কোনও মিল নেই । ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে স্থানীয় নেতার অভাব ভালো ভাবেই টের পাচ্ছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব । যেভাবে বিরোধীরা জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই চালিয়ে প্রথমে মহারাষ্ট্র এবং পরে ঝাড়খণ্ডে BJP-কে রুখে দিল, তা আগামী দিনে বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল । সন্দেহ নেই, বর্তমান পরিস্থিতি আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ বহুগুণ বাড়িয়ে দিল ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details