আর গান্ধি কমিটি কয়েক বছর আগে পরামর্শ দিয়েছিল, যে সমবায় ব্যাঙ্কগুলির প্রশাসনিক সংস্কার করতে এবং দুর্নীতি শেষ করতে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপ করা উচিত । গত বছর পঞ্জাব-মহারাষ্ট্র কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে 11614 কোটি টাকার দুর্নীতি সামনে আসায় চমকে উঠেছিল গোটা দেশ । এই দুর্নীতির মধ্যে সাত রাজ্যের ৯ লাখেরও বেশি গ্রাহকদের অর্থ যুক্ত করা হয়েছিল ।
কেন্দ্র সম্প্রতি সংসদে ব্যাঙ্কিং বিধি (সংশোধনী) বিল পাস করেছে, যাতে সমবায় ব্যাঙ্কিংয়ের ওপর মানুষের ভরসা ফিরে আসে । দেশজুড়ে 1 হাজার 482টি শহুরে এবং 58টি আন্তঃরাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কে আমানতকারীর সংখ্যা 8.6 কোটি । সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে বিনিয়োগ করা মোট অর্থের পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকা । অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে 277টি শহুরে সমবায় ব্যাঙ্কের অবস্থা দুর্বল, 105টি ব্যাঙ্ক বিনিয়োগের ন্যূনতম লক্ষ্যপূরণ করতে পারেনি, এবং 325টি ব্যাঙ্কের 15 শতাংশেরও বেশি নন-পারফর্মিং অ্যাসেট রয়েছে । সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার পুঁজি টানার নতুন পথ খুলছে, পরিচালন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষা করছে, এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নজরদারির পথ প্রশস্ত করেছে । ফেডারেশন অফ মহারাষ্ট্র এবং অন্যান্যরা ঘোষণা করেছে, যে কেন্দ্র সমবায়ের স্বায়ত্তশাসন এবং সমস্ত সদস্যের সমান ভোটাধিকার মেনে নেওয়ায় তারা সন্তুষ্ট।কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানে পরিস্থিতির উন্নতির আশা বাস্তব থেকে অনেক দূরে বলেই মনে হচ্ছে ।
পঙ্গু এবং দুর্নীতি জর্জরিত PMC ব্যাঙ্ককে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানের আওতায় আনার এক বছর পর, আমানতকারীদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে এবং তাঁদের অবস্থা গরম কড়া থেকে জ্বলন্ত উনুনে এসে পড়ার মতো । আসলে RBI কর্মচারীদের কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় 200 কোটি টাকা সমবায় ব্যাঙ্কগুলোতে আটকে রয়েছে, আর কীভাবে সবকিছু ঠিক করা যাবে, তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক ধোঁয়াশা । রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জন্ম হয়েছিল 1935 সালে, আর 1947 সালে যখন দেশ স্বাধীন হয়, কয়েকশো ব্যাঙ্ক তাদের আর্থিক দুরবস্থা তুলে ধরে। রেকর্ড বলছে, 1947 থেকে 1969-এর মধ্যে 665টি এবং তারপর থেকে 2019 পর্যন্ত 37টি ব্যাঙ্ক ফেল করেছে । যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে আরবিআই তার নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণক্ষমতা সত্ত্বেও ব্যাঙ্ক ফেল হওয়া আটকাতে পারেনি । RBI সঙ্কটগ্রস্ত সমবায় ব্যাঙ্কগুলোকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে যুক্ত করছে । তারা অসহায়ভাবে তাকিয়া থাকে যখন সেই ব্যাঙ্কগুলোতেও ব্যাপক দুর্নীতি চলে। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ)-এর পরিমাণ 2018-র মার্চ পর্যন্ত ছিল 9.61 লাখ কোটি টাকা ।
এই প্রসঙ্গ টেনে CAG রাজীব মহর্ষির প্রশ্ন, “RBI এই সঙ্কটের জন্য দায়ী কি না?” গত পাঁচ বছরে কেন্দ্র আর্থিকভাবে ধুঁকতে থাকা ব্যাঙ্কগুলোকে সহায়তা হিসেবে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা দিয়েছে। গভীর দুর্নীতি ধরতে পাঁচ বছর লেগে যাওয়া থেকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পেশাদারি দক্ষতা ও নজরদারির ক্ষমতা প্রকাশ পাচ্ছে! আজ একটা বৃহত্তর প্রয়োজন হল যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জোরাল সংস্কার আনুক ।