পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

পাপ্পু যাদব, বিহারের রবিন হুড, অনিশ্চিত একটি মিসাইল - unpredictable missile

ETV ভারতকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জন অধিকার পার্টি (JAP) নেতা পাপ্পু যাদব বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে রাজ্যের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় - 'ভোটকাটুয়া' বলে অভিহিত করেছেন । এছাড়াও, তিনি স্বীকার করেছেন, তিনি একটি অনিশ্চিত মিসাইল, যিনি এলোমেলো পথে অবতরণ করতে পারেন । জানালেন বিহার বিওরোর প্রধান অমিত ভেলারি ।

Pappu Yadav
Pappu Yadav

By

Published : Oct 8, 2020, 10:10 PM IST

পটনা, 8 অক্টোবর : বেশ কিছু সময় আগে একবার পাপ্পু যাদব বলেছিলেন, তিনি যদি রাজনীতিতে না আসতেন, তাহলে সমাজকর্মী হতেন । দুর্ভাগ্যবশত, তিনি রাজনীতিতেই মনোনিবেশ করলেন আর সমাজকর্মও চালিয়ে গেলেন । যদিও তিনি একথাও স্বীকার করেছেন যে, তিনি একটি অপ্রত্যাশিত মিসাইলের মতো, যা যে কোনও দিকে ধাবিত হতে পারে ।

জমিদারদের পরিবার থেকে আসা, জন অধিকার পার্টির (JAP) সভাপতি ETV ভারতকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে স্বীকার করে নিয়েছেন, মানুষ তাঁকে দিগভ্রান্ত বা অনিশ্চিত মিসাইল বললেও তিনি কিছু মনে করেন না । বরং এই তকমায় তিনি গর্বিত ।

যদিও এই দাবির প্রেক্ষিতে কোনও যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা তিনি দেননি কিন্তু জোর দিয়ে বলেছেন, দেশের তরুণরা আদপে অনিশ্চিত মিসাইলের মতোই এবং তিনি বিহারে যুবশক্তির আইকন হয়ে উঠেছেন । তাৎপর্যপূর্ণভাবে, একাধিক সময়ে তিনিই তেজস্বীপ্রসাদ যাদবের মতো যুব নেতাদের সমালোচনা করেছেন ।

RJD-তে থাকার সময় পাপ্পু একাধিকবার, একাধিক ইশুতে লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং দলের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন । এমনকী, একবার তিনি ঘোষণা করেছিলেন, দলে লালু ছাড়া আর কোনও নেতাকে তিনি পরোয়া করেন না ।

শুধু লালু নন । পাঁচ বারের সাংসদ এবং একবারের বিধায়ক পাপ্পু বিহারের বেশিরভাগ নেতার বিরুদ্ধেই চাছাছোলা মন্তব্য করেছেন । মাধেপুরার প্রাক্তন সাংসদ রাজেশ রঞ্জন ওরফে পাপ্পু যাদব, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মানঝিকে একজন ‘নাকারা’ (নিষ্ক্রিয়) ব্যক্তি বলেও অভিহিত করেছিলেন ।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে, তাঁর নিজেরই ডাকাতি থেকে শুরু করে মুক্তিপণ চেয়ে হুমকি দেওয়ার বিতর্কিত ট্র্যাকরেকর্ড আছে । যদিও এটাও সত্যি যে প্রাক্তন এই ডন তাঁর রবিন হুড ব্যক্তিত্বের জন্যও বিখ্যাত ।

কোথা থেকে এত বিপুল অর্থ তিনি পান, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি । তাঁর দাবি, তিনি নিজের জমি বিক্রি করে, সেই টাকা বিপন্ন মানুষদের বণ্টন করে দিয়েছেন ।

পাপ্পু যদিও জানিয়েছেন, তিনি ডনও নন আর রবিন হুডও নন । কিন্তু তিনি সবসময়ই দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা, সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা এবং অনিয়ন্ত্রিত আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজের লড়াই চালিয়ে যাবেন । একাধিক সময় পাপ্পু বলেছেন যে তাঁকে ‘ডন’-এর তকমা সেইসব মানুষই দিয়েছেন, যারা তাঁর মানবদরদী ভাবমূর্তিকে হিংসা করে ।

1994 সালে রঞ্জিত রঞ্জনের সঙ্গে পাপ্পুর বিয়ে হয় । রঞ্জিতও কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন সাংসদ । পাপ্পু মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীলকুমার মোদির বিরুদ্ধে আক্রমণ করার সুযোগও ছাড়েননি ।

পাপ্পু বলেছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এবং বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী নিজেদের বাড়িতে বসেছিলেন যেখানে গত বছর বন্যায় পটনাবাসী দুর্ভোগে পড়েন । তখন এই পাপ্পু যাদবই ছিল, যে সারাক্ষণ কঠোর পরিশ্রম করেছিল, খাবার, ওষুধ ও জরুরি নানা জিনিসপত্র বিতরণ করেছিল । ওই দুইজন বিহারের মানুষকে কষ্টের মধ্যে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় । তখন এই পাপ্পু যাদবই ছিল যে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছিল, দুঃখ-কষ্ট এবং যন্ত্রণার কথা শুনেছিল । আমি বিহারের ছেলে এবং বিহারের মানুষের জন্যই আমার সবকিছু ।”

মানবাধিকার নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে ডিপ্লোমা করেন পাপ্পু । পাশাপাশি তাঁর দিল্লির ইন্দিরা গান্ধি ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা বিষয়েও স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা আছে । তাঁর ঠাকুরদা লক্ষ্মীপ্রসাদ মণ্ডল, ছোটবেলায় তাঁকে ‘পাপ্পু’ ডাকনাম দিয়েছিলেন । অন্যকে সাহা়য্য করার তাঁর স্বভাবের জন্য তাঁকে কোসি এলাকার কণ্ঠ বলেও ডাকা হত ।

পাপ্পু একথাও বলেছিলেন যে ‘ভোটকাটুয়া’ শব্দটি তাঁর জন্য নয় । বরং তাঁর দেওয়া দলিলই বিবেচনা করে যে আদৌ তিনি ‘ভোটকাটুয়া’ কিনা ।

পাপ্পু বলেন, "রাজনীতিতে যদি এমন কোনও মানুষ থেকে থাকেন, তাহলে নীতীশ কুমারই হলেন সবচেয়ে বড় ভোটকাটুয়া । বিহারের মানুষ লালুজির নেতৃত্বে 15 বছরের শাসন দেখেছেন এবং নীতীশজির নেতৃত্বে আরও 15 বছরের । এবার বদল হওয়া উচিত এবং এবার বিহারকে শাসন করার জন্য মানুষের আমাকে অন্তত তিন বছর দেওয়া উচিত ।"

1990 সালে পাপ্পু সিংশেরস্থান বিধানসভা আসন থেকে প্রথম বিধায়ক (স্বাধীন) হন । স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে তিনবার তিনি পূর্ণিয়া থেকে সাংসদ হন । 1991, 1996 এবং 1999 সালে দু’বারের জন্য মাধেপুরা থেকে RJD টিকিটে আর শেষে 2014 সালে ।

2008 সালে তাঁকে CPI(M)-এর একবারের বিধায়ক অজিত সরকারের খুনে দোষী সাব্যস্ত করা হয় । 2013 সালে পটনা হাইকোর্ট তাঁকে নিষ্কৃতি দেয় ।

বিহার বিধানসভা ভোটে, ন’টি আলাদা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ফ্রন্ট তৈরি করেন, যার নাম দেন প্রোগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (PDA) । এর হয়ে 243টি আসনে তিনি প্রার্থীও দেন ।

যদিও এটা শুধুমাত্র এক মাসের ব্যাপার এবং সব কিছু স্পষ্ট হবে যখন, তখন দেখা যাবে, সত্যিই পাপ্পু কোনও প্রভাব ফেলতে পারেন কি না? না কি গত বছরের লোকসভা ভোটের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি হয়, যেখানে তাঁর দেওয়া সব প্রার্থীই পরাজিত হয়ে নিজেদের সিকিউরিটি ডিপোজ়িটও হারিয়ে ফেলেন ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details