দিল্লি, 18 সেপ্টেম্বর : চলছে সংসদের বাদল অধিবেশন । আজ পঞ্চম দিন । আজ লোকসভায় নেহরু-গান্ধি পরিবারকে খোঁচা দিয়ে মন্তব্য করেন BJP সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর । পালটা বাক্যবাণ আসে কংগ্রেসের দিক থেকেও । অনুরাগ ঠাকুরকে ছোকরা বলে সম্বোধন করা হয় কংগ্রেস শিবিরের তরফে । আর এর জেরেই দফায় দফায় মুলতুবি হল লোকসভা । পাশাপাশি, লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা শাসকদলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে বলেও অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা ।
বিরোধের সূত্রপাত পি এম কেয়ারস ফান্ড নিয়ে । লোকসভায় তখন ট্যাক্সেশন ও অন্যান্য আইনের সংশোধন সংক্রান্ত বিল নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন অনুরাগ ঠাকুর । নিজের বক্তব্যের মাঝে পি এম কেয়ারস তহবিল নিয়ে কথা শুরু করেন তিনি । প্রসঙ্গত, দেশজুড়ে চলতে থাকা কোরোনা পরিস্থিতির মধ্যেই এই তহবিলের সূচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ।
পি এম কেয়ারস প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেন, "হাইকোর্ট থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট, সব আদালতে পি এম কেয়ারস তহবিল বৈধ বলে জানানো হয়েছে । ছোটো ছোটো শিশুরাও তাদের পিগি ব্যাঙ্কের জমানো টাকা দান করেছে । যখন পি এম কেয়ারস তহবিল নিয়ে কথা হচ্ছে, তখন একবার প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল নিয়েও আলোচনা হোক । 1948 সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ঘটা করে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন । কিন্তু 1948 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত তা নথিভুক্তই হয়নি । পি এম কেয়ারস একটি নথিভুক্ত তহবিল । আপনারা শুধুমাত্র গান্ধি ও নেহরু পরিবারের জন্যই তহবিল তৈরি করেছেন । নেহরু, সোনিয়া গান্ধি প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিলের সদস্য ছিলেন । এর তদন্ত হওয়া উচিত ।"
এরপরই বিরোধী শিবির বিশেষত কংগ্রেসের তরফ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ আসতে থাকে । লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরি তো BJP সাংসদকে "ছোকরা" বলে বসেন । অনুরাগ ঠাকুরকে উদ্দেশ করে বলেন, "হিমাচলের এই ছেলেটি কে ? তিনি কীভাবে এই বিতর্কের মধ্যে নেহরুকে টেনে আনছেন ? আমরা কি নরেন্দ্র মোদির নাম নিয়েছি ? দু-দিনের ছোকরা ..."
দু-পক্ষের বাক্যবাণে তুমুল হইচই শুরু হয়ে যায় লোকসভার ভিতরে । নেহরু ও গান্ধি পরিবারকে নিয়ে মন্তব্য়ের জন্য সাংসদকে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি তোলে কংগ্রেস শিবির । স্লোগান ওঠে, "গোলি মারো মন্ত্রী"-র পদত্যাগের দাবিতেও । প্রসঙ্গত, CAA -এর প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের গুলি করার বিষয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন অনুরাগ ঠাকুর ।
আরও পড়ুন :প্রতিরক্ষা খাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই 74 শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগে শিলমোহর কেন্দ্রের
এদিকে লোকসভার অধিবেশন কক্ষে মুখে মাস্ক পরে থাকার জন্য বিরোধীদের অনুরোধ করেন অধ্যক্ষ ওম বিড়লা । বলেন, "যাঁরা স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নিয়ম মানবেন না, তাঁদের নাম লিখে সংসদের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। "
এরপরই তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন । BJP সাংসদদের আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় । কল্যাণবাবু বলেন, "আপনি যদি চান, আমাদের বাইরে বের করে দিন । কিন্তু আমরা এটা চলতে দেব না ।"
এরপরই অধ্যক্ষ বাধ্য হন লোকসভা মুলতুবি করে দিতে । সমস্যার সমাধান করতে সংসদীয় নেতাদের একটি বৈঠকে বসার জন্যও আহ্বান করেন তিনি । কিন্তু বৈঠক শেষে অধিবেশন শুরু হলে ফের শুরু হয় হই হট্টগোল । ফলে আবারও মুলতুবি করে দিতে হয় লোকসভা ।
পরে অবশ্য অনুরাগ ঠাকুর নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন । বলেন, "তিনি কাউকে আঘাত করার জন্য এইধরনের মন্তব্য করেননি । তাঁর মন্তব্যের জন্য কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে তিনি সে-জন্য দুঃখিত ।"