পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

গর্ভাবস্থা এবং COVID- 19 : আমাদের কি দুশ্চিন্তা করা উচিত? - কোরোনার খবর

দিন দিন বাড়ছে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা । এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে গর্ভবতী মহিলাদের সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে । গর্ভবতী মায়ের থেকে তাঁর সন্তানের শরীরে কোরোনা সংক্রমণ হওয়ার এখনও কোনও প্রমাণ না মিললেও মেনে চলতে বলা হচ্ছে কোরোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার সমস্ত নিয়ম ।

corona
গর্ভাবস্থা এবং COVID- 19

By

Published : Apr 18, 2020, 1:50 PM IST

যে কোনও মহিলা এবং তাঁর পরিবারের পক্ষে গর্ভাবস্থা সবচেয়ে আনন্দের সময় । পাশাপাশি এটা যথেষ্ট সংবেদনশীল সময়ও বটে । কারণ এই সময় মহিলাদের অনাক্রম্যতায় নানা ধরনের বদল আসে, যার জেরে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে । ভারত এবং বিশ্বজুড়ে যেভাবে COVID- 19 আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে এই নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে যে কীভাবে অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলাকে এই সংক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখা যায় । এর পাশাপাশি এই আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে যে আদৌ গর্ভস্থ শিশু এবং মায়ের স্বাস্থ্যের উপর এই ভাইরাসের কোনও প্রভাব পড়ে কি না ।

ভারতে প্রতি মাসে অন্তত 2 লাখ মহিলা অন্তঃস্বত্ত্বা হন । এখন COVID 19 -এর বয়স মাত্র কয়েক মাস, তাই এই বিশ্বব্যাপী প্যানডেমিক অবস্থা চলাকালীন গত তিন মাসে যেসব মহিলারা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তাঁদের সিংহভাগই ছিলেন তাঁদের অন্তিম ট্রিমেস্টারে । যে অবস্থায় গর্ভস্থ সন্তানের উপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা ন্যূনতম । "কনজেনিটাল ম্যালফরমেশন" বার বার তখনই ঘটে, যদি প্রথম ট্রিমেস্টার অর্থাৎ যখন গর্ভের মধ্যে শিশুর বেশিরভাগ প্রধান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গড়ে ওঠে । তখন কোনওভাবে সংক্রমণ হয় ।

এখনও পর্যন্ত COVID- 19 এর প্রভাবে "কনজেনিটাল ম্যালফরমেশন" অথবা নিঃস্পন্দ সন্তানের জন্ম দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধির কোনও ঘটনা সামনে আসেনি । চিনে হওয়া সমীক্ষার ফল প্রকাশ্যে আসায় জানা গেছে, শিশুদের উপর কোরোনা ভাইরাসের কোনও গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি । যেমনটা দেখা গেছিল জ়িকা কিংবা রুবেলা সংক্রমণের সময় । জ়িকায় সংক্রামিত মায়েরা যে সব শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ব্যাপক হারে "কনজেনিটাল ম্যালফরমেশন" দেখা গেছিল । কিন্তু বিপরীতভাবে, কোরোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোনও সমীক্ষাতেই এমনটা দেখা যায়নি যে, মা থেকে শিশুর মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড অথবা স্তনদুগ্ধের মাধ্যমে ।

চিনের ইউহানে 33 জন মায়ের উপর করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে তিন জনের জন্ম দেওয়া শিশুরা কোরোনা পজ়িটিভ হয়েছে । এই তিন জনের মধ্যে আবার দু’জনের ক্ষেত্রে চিকিৎসার কোনও প্রয়োজনই হয়নি এবং জন্মের 6 দিন পরই তারা কোরোনা নেগেটিভ এসেছে । তৃতীয় শিশুটি ছিল ‘প্রিম্যাচিওর’। তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় আর তাতেই সে দ্রুত সুস্থ হয়ে যায় । ফলে কোরোনা গর্ভাবস্থাতেই মা থেকে শিশুর মধ্যে সংক্রামিত হয় কি না জানা নেই কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটির কোনও মা বা তাঁর সদ্যোজাত সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর কোনও গুরুতর বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এমন কিছু প্রমাণিত হয়নি । যদিও বিভিন্ন দেশে এই নিয়ে বৃহত্তর স্তরে যে গবেষণা হচ্ছে তাতে প্রমাণ হতে পারে যে কোরোনা সংক্রমণ ভ্রুণে উপর কোনও প্রভাব ফেলে না ।

তাহলে এখনও পর্যন্ত যখন এমন কোনও গবেষণা বা সমীক্ষা নেই, সেক্ষেত্রে একজন গর্ভবতী মহিলা কী করবেন? লকডাউনের জেরে বিশ্বে আগামী 9 মাস পর "বেবি বুম" অর্থাৎ শিশু জন্মের সংখ্যায় বিশাল বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে । কোরোনায় যখন সংক্রমণের শীর্ষে থাকবে, ঠিক তখনই বহু মহিলা গর্ভাবস্থার গোড়ার পর্যায়ে থাকবেন ।

ভারতে এখনও পর্যন্ত COVID 19 ভাইরাস আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলার সংখ্যা কম । দিল্লিতে একটিই এমন নিশ্চিত ঘটনা কথা জানা গেছে, যেখানে একজন কোরোনা পজ়িটিভ মহিলা একজন সুস্থ সন্তান প্রসব করেছেন । কিন্তু এ কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, অন্তত 80 শতাংশ কোরোনা সংক্রমণের উপসর্গ স্বল্প থেকে মাঝারি আর তাই এর পরীক্ষাও সম্ভবত করা হয় না । কাজেই গর্ভাবস্থার গোড়ার দিকে কোরোনা সংক্রমণের আশঙ্কা কোনওভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না । এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, গর্ভবতী মহিলাদের যেন নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয় । যা লকডাউনের সময় মুশকিল হতে পারে । যার জেরে হয়তো রুটিন অনুযায়ী মহিলাদের গর্ভাবস্থাকালীন নানা পরীক্ষা করা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা রুটিন পরীক্ষা- নিরীক্ষা করাতেও সমস্যা হতে পারে । কাজেই জরুরি হল এটা নিশ্চিত করা যে, যদি গর্ভবতী মহিলাদের কোরোনার উপসর্গ দেখা দেয় অর্থাৎ জ্বর, কাশি এবং গলাব্যথা, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ।

কোরোনা পজ়িটিভ হলে গর্ভবতী মহিলাদেরও যথাযথ যত্নের ব্যবস্থা করতে হবে । যে সব মহিলা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক স্তরে রয়েছেন, তাঁদের যথাযথ সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে কারণ এখনও পর্যন্ত এই সময় সংক্রমণ হলে কী কী খারাপ প্রভাব দেখা দেয়, তা এখনও স্পষ্ট নয় । মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোওয়া এবং ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ যাঁদের রয়েছে, সেই সব মানুষের সংস্পর্শ এড়ানোর মতো নিয়ম অবশ্যই মেনে চলা উচিত ।

WHO এবং ব্রিটেনের রয়্যাল কলেজ অফ অবস্টেট্রিকস এই বিষয়ে একমত যে, গর্ভবতী মহিলাদের সংক্রমণ এড়াতে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । নিয়মিত ব্যবধানে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত । এই ধরনের পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি বা সংস্থার উচিত এমনভাবে "অ্যাপয়েন্টমেন্ট" নির্ধারণ করা, যাতে একই সময়ে ক্লিনিকে দু’জনের বেশি রোগী না থাকেন । লকডাউনের জেরে মাতৃত্বকালীন পরিষেবা, ডেলিভারি পরিষেবা এবং রক্ত দানের আকাল দেখা গেছে । স্বাস্থ্যকর্মীদের উচিত হবু মায়েদের এই জরুরি অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়া এবং কখন কাকে ডাকতে হবে কিংবা কোথায় যেতে হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া ।

কোরোনা পজ়িটিভ হবু মায়েদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য রুটিন মেনে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে স্বাস্থ্যকর্মীদের । তাঁদের প্রতি স্বাস্থ্যকর্মীরা যেন কোনও বৈষম্য না করেন । সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে । এবং তার পাশাপাশি নিয়ম মেনে সব ধরনের মাতৃত্বকালীন পরিষেবাও প্রদান করতে হবে । COVID- 19-এ আক্রান্ত হলেই যে C সেকশন সার্জারি করতে হবে, এমন কখনওই নয় । বরং তা এড়িয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয় যতক্ষণ না চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । কোরোনা পজ়িটিভ মায়েরা তাঁদের শিশুদের স্তনদুগ্ধ পান করাতেই পারেন তবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে যেমন সবসময় মুখে মাস্ক পরে থেকে, হাত ধুয়ে এবং শিশুর সঙ্গে যত কম সম্ভব ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলতে হবে । যদি সম্ভব হয়, কোনও কোরোনা পজিটিভ মা তাঁর কোরোনা নেগেটিভ শিশুকে "এক্সপ্রেসড ব্রেস্ট মিল্ক"-ও সেবন করাতে পারেন । মা কোরোনা পজ়িটিভ হলে, COVID- 19 সংক্রান্ত সব নিয়মাবলী অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে । যেমন- আইসোলেশনে থাকা এবং শুধুমাত্র স্তনদুগ্ধ পান করানোর সময় তার ব্যতিক্রম ঘটানো । সমস্ত কোরোনা পজ়িটিভ মায়েদের তাঁদের সন্তানদের নির্দেশিকা মেনে নির্দিষ্ট ব্যবধানে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো উচিত । যথাযথ সতর্কতা এবং যত্ন নিলে এটা নিশ্চিত হবে যে গর্ভবতী মহিলারা আর কোরোনা আক্রান্ত হবেন না । আর তাঁদের সন্তানরাও এই প্যানডেমিক অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচবে । প্যানডেমিক অবস্থা যত বড় আকার নেবে, সদ্যোজাত সন্তানদের উপর ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব তত স্পষ্ট হবে এবং এর পাশাপাশি নিঃস্পন্দ সন্তানের জন্ম, গর্ভপাত প্রভৃতি গুরুতর বিষয় নিয়ে যথাযথভাবে ভাইরোলজ- নির্ভর গবেষণাও করতে হবে । দ্রুত এনিয়ে বিশেষ ধরনের সমীক্ষা এবং নজরদারি চালু করা উচিত ।

(মতামত ব্যক্তিগত)

- প্রতিবেদনটি লিখেছেন ড: ক্রান্তিসুরেশ ভোরা

MD, MPH, PhD

(অ্যাডিশনাল প্রফেসর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ, গান্ধিনগর । ড: ক্রান্তি একজন ধাত্রী বিদ্যাবিশারদ, জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ USA থেকে MPH, এবং USA–র মেরিল্যান্ড কলেজ পার্কের ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড থেকে PhD । প্লওয়ান, WHO বুলেটিন এবং JHPN-এর মতো প্রসিদ্ধ জার্নালে লিখেছেন তিনি ।)

ABOUT THE AUTHOR

...view details