যে কোনও মহিলা এবং তাঁর পরিবারের পক্ষে গর্ভাবস্থা সবচেয়ে আনন্দের সময় । পাশাপাশি এটা যথেষ্ট সংবেদনশীল সময়ও বটে । কারণ এই সময় মহিলাদের অনাক্রম্যতায় নানা ধরনের বদল আসে, যার জেরে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে । ভারত এবং বিশ্বজুড়ে যেভাবে COVID- 19 আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে এই নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে যে কীভাবে অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলাকে এই সংক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখা যায় । এর পাশাপাশি এই আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে যে আদৌ গর্ভস্থ শিশু এবং মায়ের স্বাস্থ্যের উপর এই ভাইরাসের কোনও প্রভাব পড়ে কি না ।
ভারতে প্রতি মাসে অন্তত 2 লাখ মহিলা অন্তঃস্বত্ত্বা হন । এখন COVID 19 -এর বয়স মাত্র কয়েক মাস, তাই এই বিশ্বব্যাপী প্যানডেমিক অবস্থা চলাকালীন গত তিন মাসে যেসব মহিলারা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তাঁদের সিংহভাগই ছিলেন তাঁদের অন্তিম ট্রিমেস্টারে । যে অবস্থায় গর্ভস্থ সন্তানের উপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা ন্যূনতম । "কনজেনিটাল ম্যালফরমেশন" বার বার তখনই ঘটে, যদি প্রথম ট্রিমেস্টার অর্থাৎ যখন গর্ভের মধ্যে শিশুর বেশিরভাগ প্রধান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গড়ে ওঠে । তখন কোনওভাবে সংক্রমণ হয় ।
এখনও পর্যন্ত COVID- 19 এর প্রভাবে "কনজেনিটাল ম্যালফরমেশন" অথবা নিঃস্পন্দ সন্তানের জন্ম দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধির কোনও ঘটনা সামনে আসেনি । চিনে হওয়া সমীক্ষার ফল প্রকাশ্যে আসায় জানা গেছে, শিশুদের উপর কোরোনা ভাইরাসের কোনও গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি । যেমনটা দেখা গেছিল জ়িকা কিংবা রুবেলা সংক্রমণের সময় । জ়িকায় সংক্রামিত মায়েরা যে সব শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ব্যাপক হারে "কনজেনিটাল ম্যালফরমেশন" দেখা গেছিল । কিন্তু বিপরীতভাবে, কোরোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোনও সমীক্ষাতেই এমনটা দেখা যায়নি যে, মা থেকে শিশুর মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড অথবা স্তনদুগ্ধের মাধ্যমে ।
চিনের ইউহানে 33 জন মায়ের উপর করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে তিন জনের জন্ম দেওয়া শিশুরা কোরোনা পজ়িটিভ হয়েছে । এই তিন জনের মধ্যে আবার দু’জনের ক্ষেত্রে চিকিৎসার কোনও প্রয়োজনই হয়নি এবং জন্মের 6 দিন পরই তারা কোরোনা নেগেটিভ এসেছে । তৃতীয় শিশুটি ছিল ‘প্রিম্যাচিওর’। তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় আর তাতেই সে দ্রুত সুস্থ হয়ে যায় । ফলে কোরোনা গর্ভাবস্থাতেই মা থেকে শিশুর মধ্যে সংক্রামিত হয় কি না জানা নেই কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটির কোনও মা বা তাঁর সদ্যোজাত সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর কোনও গুরুতর বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এমন কিছু প্রমাণিত হয়নি । যদিও বিভিন্ন দেশে এই নিয়ে বৃহত্তর স্তরে যে গবেষণা হচ্ছে তাতে প্রমাণ হতে পারে যে কোরোনা সংক্রমণ ভ্রুণে উপর কোনও প্রভাব ফেলে না ।
তাহলে এখনও পর্যন্ত যখন এমন কোনও গবেষণা বা সমীক্ষা নেই, সেক্ষেত্রে একজন গর্ভবতী মহিলা কী করবেন? লকডাউনের জেরে বিশ্বে আগামী 9 মাস পর "বেবি বুম" অর্থাৎ শিশু জন্মের সংখ্যায় বিশাল বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে । কোরোনায় যখন সংক্রমণের শীর্ষে থাকবে, ঠিক তখনই বহু মহিলা গর্ভাবস্থার গোড়ার পর্যায়ে থাকবেন ।
ভারতে এখনও পর্যন্ত COVID 19 ভাইরাস আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলার সংখ্যা কম । দিল্লিতে একটিই এমন নিশ্চিত ঘটনা কথা জানা গেছে, যেখানে একজন কোরোনা পজ়িটিভ মহিলা একজন সুস্থ সন্তান প্রসব করেছেন । কিন্তু এ কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, অন্তত 80 শতাংশ কোরোনা সংক্রমণের উপসর্গ স্বল্প থেকে মাঝারি আর তাই এর পরীক্ষাও সম্ভবত করা হয় না । কাজেই গর্ভাবস্থার গোড়ার দিকে কোরোনা সংক্রমণের আশঙ্কা কোনওভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না । এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, গর্ভবতী মহিলাদের যেন নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয় । যা লকডাউনের সময় মুশকিল হতে পারে । যার জেরে হয়তো রুটিন অনুযায়ী মহিলাদের গর্ভাবস্থাকালীন নানা পরীক্ষা করা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা রুটিন পরীক্ষা- নিরীক্ষা করাতেও সমস্যা হতে পারে । কাজেই জরুরি হল এটা নিশ্চিত করা যে, যদি গর্ভবতী মহিলাদের কোরোনার উপসর্গ দেখা দেয় অর্থাৎ জ্বর, কাশি এবং গলাব্যথা, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ।