2020 সালের 29 জুলাই চালু হওয়া নয়া শিক্ষানীতি (2020) ব্যপ্তিতে সুদূরপ্রসারী এবং এর লক্ষ্য দেশের শিক্ষার পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজানো । বাস্তবিকভাবেই প্রাথমিক এবং উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঢেলে সাজানোর জন্য এর রূপায়ণ হয়েছে। পরিকাঠামোগত এবং শিক্ষাবিজ্ঞানগত বৈশিষ্ট্যও এই নীতির অন্তর্ভুক্ত। নয়া শিক্ষানীতিতে আটটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
- স্কুলিং এবং এলিমেন্টারি স্কুলিং অর্থাৎ পড়ুয়াদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে শিক্ষাদান এবং মৌলিক শিক্ষার বন্দোবস্ত
- স্কুল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড রিসোর্সেস অর্থাৎ বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো এবং সম্পদ
- হোলিস্টিক ডেভলপমেন্ট অফ স্টুডেন্টস অর্থাৎ পড়ুয়াদের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ
- ইনক্লুসিভিটি অর্থাৎ সর্বব্যাপী বৈশিষ্ট্য
- অ্যাসেসমেন্টস অর্থাৎ বিশ্লেষণ
- কারিকুলাম অ্যান্ড পেডাগগিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্থাৎ পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষাবিজ্ঞানগত রূপরেখা
- টিচার ফর রিক্রুটমেন্টস/টিচার এডুকেশন অর্থাৎ নিয়োগ করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা/ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাঠ্যক্রম
- রোল অফ গর্ভমেন্ট ডিপার্টমেন্টস/বডিস/ইনস্টিটিউশনস অর্থাৎ সরকারি দপ্তর/কর্তৃপক্ষ/প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা
শিক্ষার এই প্রধান বিভাগগুলির রূপান্তর ঘটিয়ে সরকার চাইছে শিক্ষাক্ষেত্রের ভিত আরও মজবুত করতে এবং 2035 সালের মধ্যে গ্রস এনরোলমেন্টের অনুমান বাড়িয়ে 50 শতাংশ করতে। শিক্ষা ব্যবস্থায় উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সৃষ্টিশীলতা আনার মাধ্যমে সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হল ‘ভারতকে বিশ্বব্যপী জ্ঞানের সেরাশক্তি’ হিসাবে গড়ে তুলতে। শিক্ষাবিজ্ঞানের নিরিখে এর জন্য জরুরি হল প্রাথমিক এবং উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রমে বড়সড় তথা গভীর বদল আনা। স্কুল স্তরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা হল মাতৃভাষার উন্নতি। কারণ, অন্তত পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষাকেই শিক্ষাদানের প্রধান মাধ্যম হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সমান গুরুত্বপূর্ণ হল ‘লিবারেল আর্টস’-এর উপর জোর দেওয়া, যা শিক্ষাগত শৃঙ্খলা এবং কারিগরি জ্ঞানের সংমিশ্রণ। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ‘লিবারেল আর্টস’ দৃষ্টিভঙ্গি আরোপের মাধ্যমে কারিগরি জ্ঞানের প্রচার করা হয়। স্কুল শিক্ষাকে ভিত্তিগঠনকারী স্তর (বয়স 3 থেকে 8 বছর), প্রস্তুতি স্তর (বয়স 8 থেকে 11 বছর), মধ্যবর্তী স্তর (বয়স 11 থেকে 14 বছর) এবং মাধ্যমিক স্তর (14 থেকে 18 বছর)।
‘লিবারেল আর্টস’ দৃষ্টিভঙ্গি আরোপ করা এবং সহগামী কারিগরি শিক্ষার উপর যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা উচ্চশিক্ষাতেও প্রসারিত করা হচ্ছে যেখানে একে প্রতিপালন করা হচ্ছে ‘চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম’ (CBCS)-এ। উচ্চশিক্ষায় ‘লিবারেল আর্টস’ প্রোগ্রামে শিক্ষাগত শৃঙ্খলার সঙ্গে কারিগরি জ্ঞানের সংমিশ্রণ রয়েছে এবং এটিতে কোনও পড়ুয়ার কোনও একটি বিশেষ বিষয়ের উপর কর্মদক্ষতা দাবি করে না। এছাড়াও তিন বছরের স্নাতক স্তরের শিক্ষাকে, কলা এবং বিজ্ঞান বিভাগে বাড়িয়ে চার বছর করে দেওয়া হয়েছে। যদিও পড়ুয়ার কাছে বিকল্প রয়েছে এক বছর (সার্টিফিকেট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে), দু’বছর (ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম) অথবা তিন বছর (ডিগ্রি প্রোগ্রামে) পর কোর্স ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারার। শুধুমাত্র যারা গবেষণায় কেরিয়ার গড়তে চায়, তাদেরই চতুর্থ বর্ষের পড়াশোনা শেষ করতে হবে। পড়ুয়াদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তারা যতদূর পড়েছে, সেই ক্রেডিট ‘সেভ’ করা এবং কিছু সময় পর ফিরে এসে কোর্সে ‘রিজয়েন’ করার বিকল্পও আছে ।
শিক্ষানীতিতে দেশের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলির সামগ্রিক স্তরে পরিকাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে। যার সূচনাতেই রয়েছে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে নাম বদলে শিক্ষামন্ত্রক হওয়া। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের হাতে থাকা রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ (RSA) হবে সেই শীর্ষ কর্তৃপক্ষ যারা দেশে শিক্ষার সম্পদ ও দক্ষতার উৎপত্তি, সংবহন এবং চালনা সংক্রান্ত সমস্ত স্তর এবং প্রক্রিয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, নজরদারি চালাবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে। এর আওতায় থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং শীর্ষ আমলারা। এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের মাধ্যমে RSA শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ, পর্যালোচনা এবং নজরদারি সংক্রান্ত সমস্ত পরিকল্পনাগুলিকে পরিচালনা করবে। এর আওতাতেই পৃথকভাবে শিক্ষার জন্য তহবিল গড়া হবে, শিক্ষার মানোন্নয়নের মাপকাঠি নির্ধারণ করা হবে, কৃতিত্ব আরোপ করা হবে এবং উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান (HEI) গুলিকে নিয়ন্ত্রণও করা হবে। বেসরকারি এবং সরকারি HEI-গুলির জন্য একই নজরদারি কর্তৃপক্ষ এবং ফলাফল বিশ্লেষণের একই মাপকাঠি গড়ে তোলা হবে। অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য তিন ধরনের বিকল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে-
- মাল্টিডিসিপ্লিনারি তথা বহুবিভাগীয় রিসার্চ ইউনিভার্সিটি
- মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিচিং ইউনিভার্সিটি
- অটোনোমাস মাল্টিডিসিপ্লিনারি কলেজ