দিল্লি, 30 মে : 2019-এর লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে BJP । গতবছর ঠিক আজকের দিনেই দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসে BJP নেতৃত্বাধীন NDA । তাই সেই উপলক্ষে আজ দেশবাসীকে খোলা চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । এই একবছরে তাঁর সরকারের করা একাধিক পদক্ষেপ, সাফল্য, বড় সিদ্ধান্তগুলির উল্লেখ করেন চিঠিতে । পাশাপাশি কোরোনার বিরুদ্ধে জয়লাভ নিয়ে যে তিনি আত্মবিশ্বাসী তাও জানান ।
চিঠিতে তিনি লেখেন,
প্রিয় বন্ধুগণ,
এক বছর আগে ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক সুবর্ণ অধ্যায়ের সংযুক্তি হয় । কয়েক দশক পর দেশের মানুষ কোনও সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে দ্বিতীয়বারের জন্য নির্বাচিত করে । এই অধ্যায় লিখতে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন । আজকের দিনে ভারত ও ভারতের গণতন্ত্রের প্রতি আপনাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার জন্য জায়গা তৈরি করেছেন ।
পরস্থিতি যদি স্বাভাবিক থাকত তাহলে আমি আপনাদের মাঝে গিয়ে আশীর্বাদ চাইতাম । কিন্তু কোরোনা ভাইরাসের জেরে বিশ্বে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে এই চিঠি লিখতে বাধ্য হচ্ছি এবং আপনাদের আশীর্বাদ চাইছি । গত এক বছরে আপনাদের স্নেহ, আশীর্বাদ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাকে নতুন করে শক্তি ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে । এই সময়ে আপনারা গণতন্ত্রের সম্মিলিত শক্তি প্রদর্শন করেছেন, যা গোটা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
2014 সালে মানুষ বিশাল পরিবর্তনের জন্য ভোট দান করেছিলেন । আপনারা নীতি ও ব্যবস্থা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে ভোট দিয়েছিলেন । সেই পাঁচ বছরে দেশ নিজেকে জড়তা ও দুর্নীতির গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেছিল । এই পাঁচ বছরে দেশ দেখেছিল, কীভাবে গরিবদের জীবনযাপন সহজ করতে প্রশাসন পরিবর্তন এনেছে ।
এই সময়সীমায় একদিকে বিশ্বের কাছে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় । অন্যদিকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থা করে, বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস ও বিদ্যুৎ পরিষেবা দিয়ে, বাড়ি ও শৌচালয় তৈরি করে গরিবদেরও মর্যাদা দেওয়া হয় । এই সময়সীমার মধ্যেই সার্জিকাল ও এয়ার স্ট্রাইক হয়েছে । এক পদ এক পেনসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এক দেশ এক করের ব্যবস্থা করা হয়েছে । চাষিদের জন্য MSP-র অধীনে ফসল বিক্রির মতো কয়েক দশকের দাবি পূরণ করা হয়েছে । এই সময়সীমা দেশের বিভিন্ন চাহিদা মেটানোয় নিয়োজিত করা হয়েছে ।
2019-এ আপনাদের আশীর্বাদের কারণেই দেশের জন্য বড় স্বপ্ন, বড় আশা ও আকাঙ্ক্ষা করা সম্ভব হয়েছে । গত এক বছরে যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে সেগুলি ওই বড় স্বপ্নগুলিরই প্রতিচ্ছবি । সাধারণ মানুষের শক্তি দ্বারাই দেশের শক্তি উজ্জ্বল হয়েছে । গত এক বছরে দেশ একাধিক স্বপ্ন দেখেছে । বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ওই স্বপ্নগুলির অনেকটাই পূরণ হয়েছে । এই ঐতিহাসিক সফরে প্রত্যেক সম্প্রদায়, প্রত্যেক ক্ষেত্র ও প্রত্যেকে আলাদা করে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে । "সবার সাথ, সবার বিকাশ" এই মন্ত্রের সাহায্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, বিশ্ব ও অন্তর্দেশীয় সব ক্ষেত্রেই দেশ এগিয়েছে ।
শেষ এক বছরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আলোচিত হয়েছে । তাই স্বাভাবিকভাবেই সেই সাফল্যগুলি স্মৃতিতে থেকে যায় । সে তা জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য 370 ধারা প্রত্যাহার হোক বা রাম মন্দির নিয়ে পুরানো দ্বন্দ্ব । তিন তালাক হোক বা নাগরিকত্ব(সংশোধনী) আইন সব সাফল্যই আপনারা মনে রেখেছেন । এই সাফল্যমণ্ডিত সিদ্ধান্তগুলি ছাড়াও আর কিছু সিদ্ধান্ত ও পরিবর্তন রয়েছে যেগুলি ভারতের উন্নয়নের সফরে নতুন গতি দিয়েছে । মানুষের প্রত্যাশা পূরণে নতুন উদ্দেশ্য দান করেছে । ডিফেন্স স্টাফের প্রধান পদের সংযুক্তি সশস্ত্র সেনা বাহিনীগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়েছে । একইসময়ে ভারত গগনযান মিশনের প্রস্তুতি তরান্বিত করছে ।
এই সময়সীমায় আমাদের গুরুত্ব ছিল গরিব, চাষি, মহিলা ও যুব সমাজের ক্ষমতায়ন করা । আজ প্রত্যেক চাষিকে "প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির" আওতায় আনা হয়েছে । শেষ এক বছরে এই প্রকল্পের আওতায় 72 হাজার কোটির টাকার বেশি 9.5 কোটি চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে । গ্রামের 15 কোটির বেশি মানুষের পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে "জল জীবন মিশন" চালু করা হয়েছে । সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে 50 কোটির বেশি গবাদি পশুর টীকাকরণের জন্য প্রচারের কাজ চলছে ।
দেশের ইতিহাসে প্রথম সরকার অসংগঠিত ক্ষেত্রের চাষি, ফার্মের শ্রমিক, ছোটো দোকানদার ও কর্মীদের 60 বছর পরে মাসিক 3 হাজার টাকা পেনসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । মৎস্যজীবীদের সুবিধার্থে একটি পৃথক দপ্তর গঠন করা হয়েছে । একইভাবে ব্যবসায়িক এন্টারপ্রাইজ়গুলির সময়মতো সমস্যা সমাধানে জাতীয় বাণিজ্যিক বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । স্বনির্ভর দলের সঙ্গে যুক্ত প্রায় 7 কোটি বোনকে আরও আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে । সম্প্রতি গ্যারান্টি ছাড়াই প্রাপ্ত লোনের পরিমাণ 10 লাখ থেকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে 20 লাখ করা হয়েছে । আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার কথা মাথায় রেখে 450 টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । তার জন্য কাজ চলছে ।
সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য আইন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে সরকার কাজ করে চলেছে । উপভোক্তা সুরক্ষা আইন, চিট ফান্ড আইনে সংশোধন এবং মহিলা ও শিশু সুরক্ষায় আরও আইন দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে ।