হিমালয় অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে আঞ্চলিক বিবাদ থাকা সত্ত্বেও চিন সম্প্রতি লাদাখে ঢুকে পড়েছে ৷ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে যখন চিনা সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) পেরিয়ে চলে এসেছে৷ প্যাংগং সো, ডেমচক, গালওয়ান উপত্যকা এবং দৌলতবেগ ওলডিতে ভারতীয় ও চিনা সেনা মুখোমুখি বাদানুবাদে জড়িয়েছে ৷ গালওয়ান উপত্যকায় সাম্প্রতিক গোলমালের জেরে 20 জন ভারতীয় জওয়ান মারা গিয়েছেন ৷ এরই মধ্যে চিন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় নিজেদের অধিকার দাবি করেছে ৷
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) হল 3440 কিলোমিটারের একটা চিহ্নিতকরণ এলাকা । যার মাধ্যমে ভারতীয় সেনার দখলে থাকা এবং চিনা সেনার দখলে থাকা অঞ্চলকে আলাদা করা হয়৷ যেহেতু LAC একাধিক জায়গায় ওভারল্যাপ করে আছে, তাই চিনা নিজেদের অবৈধ দাবি সবসময় জানায় ৷ প্রায়শই বিবাদ এবং মুখোমুখি বাদানুবাদ এখানকার সাধারণ ঘটনা ৷ LAC তিনটি অংশে বিভক্ত৷ পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্য৷
পশ্চিম অংশ (উত্তর-পূর্বে কারাকোরাম পাস থেকে ডেমচক পর্যন্ত 1570 কিলোমিটার বিস্তার লাভ করে আছে) ৷ 1950 সাল থেকে আকসাই চিন হল ভারত ও চিনের সবচেয়ে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা ৷ এর এলাকায় প্রায় 38 হাজার কিলোমিটার ৷ 1957 সালে চিন ওই এলাকা দখল করে ৷ কিন্তু ভারত বারবার দাবি করে এসেছে যে, ওই এলাকা লাদাখের অংশ ৷ 1962 সালে চিন আকসাই চিন বরাবর একটি রাস্তা তৈরি করে৷ ওই রাস্তা সরাসরি তিব্বত ও জিনজিয়াংয়ের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে৷ ডেমচক একটা গ্রাম এবং ভারত ও চিনের মধ্যে বিতর্কিত ডেমচক সেক্টরে সেনা মোতায়েনও রয়েছে৷ ডেমচকের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সীমান্ত বিস্তৃত রয়েছে বলে ভারতীয়রা দাবি করে৷ যেখানে ভারত ও চিনের সেনারা নিয়মিত মুখোমুখি বাদানুবাদে জড়ায় ৷
পূর্ব অংশ (সিকিম থেকে মায়ানমারের সীমান্ত পর্যন্ত 1325 কিলোমিটার এলাকা)৷ সবচেয়ে বিতর্কিত অঞ্চল রয়েছে অরুণাচল প্রদেশে৷ কিন্তু চিন অরুণাচল প্রদেশকে তাদের অংশ বলে কয়েক দশক ধরে দাবি করে আসছে৷ আপার সুবর্ণসিরি ডিভিশনের একটা অংশ হল অ্যাসাফিলা৷ যা জঙ্গল ও পার্বত্য এলাকা নিয়ে তৈরি৷ 1962 সালের চিন-ভারত যুদ্ধের সময় এই এলাকা চিনের দখলে চলে যায়৷ বর্তমানে এই এলাকায় কোনও দেশের কর্তৃত্ব নেই৷ তিব্বতে চিনা মিলিটারি ঘাঁটি মিগইটুনের ঠিক উলটোদিকে রয়েছে লংজু৷ এই এলাকাও আপার সুবর্ণসিরি ডিভিশনের মধ্যে পড়ে৷ 1959 সালে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA) ও অসম রাইফেলসের সঙ্গে প্রথম সামরিক যুদ্ধ এখানেই হয় ৷ ভারত লংজু পুনরুদ্ধার করতে পারেনি৷ কিন্তু তার থেকে 10 কিলোমিটার দক্ষিণে মাজা এলাকায় একটা পোস্ট তৈরি করে ৷ তাওয়াংয়ের প্রায় 60 কিলোমিটার আগে অবস্থিত নামকা চু নদী উপত্যকা৷ এখানেই 1962 সালের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল৷ সামডোরোং চু হল একটা ক্ষুদ্র নদী, যা নামকা চু-র পূর্ব দিকে অবস্থিত ৷ এই এলাকা তাওয়াং জেলার কা ফো এলাকার মধ্যে পড়ছে ৷ 1986 সালে চিনের সেনাবাহিনী এই এলাকা দখল করে নেয়৷ 1986 সালের পরবর্তী অংশে পালটা প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনা ইয়ংস্টে (তাওয়াং জেলার একটি অংশ) দখল করে নেয় ৷
মধ্য অংশ (ডেমচক থেকে নেপালের সীমান্ত সংলগ্ন 545 কিলোমিটার এলাকা) হল হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ৷ উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার পশুচারণ ক্ষেত্রও ওই এলাকার মধ্যে পড়ে ৷ এই এলাকাতেও চিনা আক্রমণের ইতিহাস রয়েছে ৷