হায়দরাবাদ, 23 জানুয়ারি : বর্তমানে প্লাস্টিক দূষণ একটি অন্যতম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহারে দ্রুত বৃদ্ধি, বিশেষ করে একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বিশ্বে এই সঙ্কট আরও বাড়িয়েছে ৷
প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ার ফলে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে ৷ যেখানে আবর্জনা সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার যোগ্য ব্যবস্থার সে অর্থে কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ ফলে প্লাস্টিক নষ্টতেও কোনও পদক্ষেপ করা যায় না ৷
সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের 2012 সালের হিসেব অনুযায়ী, প্রতিদিন দেশে প্রায় 26 হাজার টন প্লাস্টিক তৈরি হয় ৷ আরও খারাপ হল, একদিনে 10 হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য অসংগৃহীত রয়ে যায় ৷
এই ইশু সম্পর্কে চিন্তিত হার্ট ও অ্যাস্থমা বিশেষজ্ঞ ডঃ শৈলেন্দ্র সাইনিও ৷ তিনি প্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের উপর আলোকপাত করে একটি তথ্য তৈরি করেছেন ৷ তিনি জানান, "মানুষ সমস্ত বর্জ্য একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিকে ভরে রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে যায় ৷ পশুপাখিরা খাবারের সন্ধান করতে করতে সেই সমস্ত বর্জ্যর সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যাগের অংশও খেয়ে ফেলে ৷ যেহেতু, প্লাস্টিক হজম হয় না, তাই পশুদের শরীরেও রোগ বাসা বাঁধতে থাকে ৷ কখনও একারণে তাদের মৃত্যুও হয় ৷ একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিকের সব থেকে বড় সাইড এফেক্ট এটি ।"
ডঃ সাইনি প্লাস্টিক ফেনোমেনন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ৷ শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের সঙ্গে কাজ করা ছাড়াও প্লাস্টিকের ব্যবহার ও পোড়া প্লাস্টিক থেকে তৈরি ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন ৷
তিনি আরও জানান, "আমি যে তথ্য সংগ্রহ করেছি, সেখানে দেখা যাচ্ছে মানুষ বছরে 10 লাখ প্লাস্টিক বোতল কেনে ৷ 80 লাখ কোটি মানুষ প্লাস্টিক ব্যাগ কেনে ৷ এছাড়াও প্রতিদিন 5 লাখ প্লাস্টিক স্ট্র বিক্রি হয় এবং প্রায় 50 লাখ মানুষ প্লাস্টিকের গ্লাস বা কাপ কেনে ।"
শরীরে প্লাস্টিক প্রবেশে হতে পারে ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাকের মতো রোগ প্লাস্টিকের সামগ্রী ঠিক করে নষ্ট না করায় এগুলি পরিবেশের ক্ষতি করে বলে জানান শৈলেন্দ্রবাবু । বলেন, "এই সমস্ত প্লাস্টিক বর্জ্য নর্দমাতে জমে যায় । সেখান থেকে নদী বা খালে গিয়ে পৌঁছলে জলের সঙ্গে বিভিন্ন রাসায়নিক মিশ্রিত হয় । আর এই জল ব্যবহারের ফলেই বিভিন্ন ক্ষতির মুখে পড়তে হয় মানুষকে । এর থেকে ক্যানসারের মতো বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে শরীরে । প্রায় 11 লাখ জলজ প্রাণি বিলুপ্তির একদম শেষ প্রান্তে ৷ প্লাস্টিক এতটাই ক্ষতিকর হতে পারে । ইংল্যান্ডে করা একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতিটি মানুষের শরীরে প্রায় ৭০ হাজার মাইক্রন প্লাস্টিক বিভিন্নভাবে প্রবেশ করে ।"
প্লাস্টিক বা পোড়া প্লাস্টিকের ধোঁয়া শরীরে প্রবেশের ফলে অনেক বড় বড় রোগ বাসা বাঁধতে পারে । শৈলেন্দ্রবাবু জানান, "শরীরে প্লাস্টিক প্রবেশের ফলে ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে ৷ যেহেতু প্লাস্টিক থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ৷ তাই এর ফলে অ্যাস্থমাও হতে পারে ৷ পোড়া প্লাস্টিকের ধোঁয়া থেকে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিসিজ় হতে পারে । যার ফলে ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবেশের ক্ষমতা কমে যায় । "
"এছাড়াও যকৃত ও ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা যায় ৷ চোখ জ্বালা হতে পারে ৷ প্লাস্টিকের রাসায়নিক রক্তে প্রবেশ করলে শুধু উচ্চ রক্তচাপ নয়, হতে পারে হার্ট অ্যাটাকও ।" শৈলেন্দ্রবাবু প্লাস্টিকের সামগ্রীগুলিকে অন্য বিকল্পের সঙ্গে প্রতিস্থাপনের জন্য আবেদনও করেছেন ৷