এখানে কে কখন কোথায় ঘুমিয়ে পড়বে কেউ জানে না ! যাদের ইনসোমনিয়া আছে তাদেরও নিস্তার নেই ৷ আর যে সে ঘুম না, একবার ঘুমোলে জাগতে জাগতে লেগে যেতে পারে সাত থেকে আট ঘণ্টা ৷ এমনকী টানা তিনদিনও ঘুমিয়ে থাকে মানুষ ৷ অবাক লাগছে নিশ্চয়ই ৷ বুদ্ধি প্রশ্ন তুলছে, এমনটা হয় না-কি ? হলে কেন হয় ? ঘটনা কোথাকার ?
দেশের নাম কাজাখস্তান ৷ গ্রামের নাম কালাচি ৷ গ্রামবাসীদের ঘুমিয়ে পড়া রোগই গোটা বিশ্বে পরিচিত করেছে গ্রামটিকে ৷ এমনকী শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখিরাও রক্ষা পায় না "মারণ ঘুম" থেকে ৷ হ্যাঁ, মারণ ঘুমই বটে ৷ কারণ এই ঘুমের মারত্মক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে ৷ তবে, শুরু থেকেই এমনটা ছিল না কালাচিতে ৷ প্রথম ঘটনা প্রকাশ্যে আসে 2013 সালে ৷ কুম্ভকর্ণ-ঘুম রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে তখন থেকেই ৷ কারণ ঘুম ভাঙার পর দেখা দেয় নানান শারীরিক অস্বস্তি ৷ যেমন তীব্র মাথা ব্যথা, বমি ভাব ৷ কারও আবার রক্তচাপ বেড়ে যায় মাত্রহীন ভাবে ৷ স্মৃতি লোপ পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ৷ জানা গিয়েছে, ঘুম ভাঙার পর চরম হ্যালুসিনেশন তৈরি হয় শিশুদের মধ্যে ৷ আজব দৃশ্য দেখে তারা ৷ অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে কয়েক গুণ বেড়ে যায় যৌন আকাঙ্খা ৷ ঘুম ভাঙার পর সাত দিন থেকে এক মাস অবধি থেকে যেতে পারে এমন সব অবস্থা ৷
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম এই রোগের শিকার হন এক মহিলা ৷ নাম লিউভক বেলকোভা ৷ 2010 সাল নাগাদ বাজারে কাজে বেরিয়েছিলেন, সেই সময় হঠাৎই তীব্র ঘুম পায় তাঁর ৷ এর চার দিন পর ঘুম ভাঙে বেলকোভার ৷ তখন তিনি হাসপাতালে ৷ চিকিৎসকেরা জানান, স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর ৷ পরবর্তীকালে কালাচি গ্রামের আরও অনেকের সঙ্গে একই ধরনের ঘটনা ঘটে ৷ যেমন, ভিক্টর কাজাচেনজো ৷ 2014 সালের অগাস্টের একদিন বাইক নিয়ে বেরিয়ে ছিলেন তিনি ৷ তারপর ঘুম ৷ চোখ খুলেছিলেন হাসপাতালের বেডে ৷ সেবার একটানা চারদিন ঘুমিয়ে ছিলেন ভিক্টর ৷ ভিক্টর রাস্তায় শুয়ে ঘুমোচ্ছিলেন, গ্রামবাসীরাই তাঁকে তুলে এনে হাসপাতালে ভরতি করে দেয় ৷ এ তো গেল একজনের ঘুম ৷ কালাচির আস্ত স্কুল পর্যন্ত বেমালুম ঘুমিয়ে পড়েছে ! সেবার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘুম ভাঙে চারদিন পর ৷ একটি পরিসংখ্যান বলছে, শুধু 2010 সালেই 120জন গ্রামবাসী "আজব ঘুমে"র শিকার হয় ৷ পরে শিকার হন আরও মানুষ ৷ কিন্তু মারণ ঘুমের কারণ কী ?