পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

বৃষ্টির জল সঞ্চয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন হরিয়ানার ভিদুকি গ্রামের - rain water conservation

হরিয়ানার পালওয়াল জেলা বৃষ্টির জল সঞ্চয়ে উদাহরণ স্থাপন করেছে ৷ পালওয়াল জেলার ভিদুকি গ্রামের বাসিন্দারা জল সংরক্ষণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই গ্রামের বাসিন্দাদের জল সংরক্ষণ কাজের প্রশংসা করেছেন ৷

palwal panchayat of haryana
পালওয়াল জেলার ভিদুকি গ্রাম

By

Published : Jul 29, 2020, 10:07 AM IST

পালওয়াল (হরিয়ানা), 29 জুলাই : জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজন হল জল ৷ পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ-ই জল ৷ কিন্তু ভূ-গর্ভস্থ জলের অপব্যবহার, জল অপচয়ের ফলে লাখ লাখ মানুষ তৃষ্ণা মেটাবার পানীয় জল পাচ্ছে না ৷ কিছু মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ফলে অন্য বহু মানুষ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ৷ বহু জায়গায় ভূ-গর্ভস্থ জল শুকিয়ে যাচ্ছে এবং বেশ কিছু জায়গায় ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর আরও নিচে নেমে গিয়েছে ৷ কোনও কোনও জেলায় জলস্তর বিপদ সীমার কাছাকাছি চলে গিয়েছে ৷ যদি এই বিষয়ে নজর দেওয়া না হয়, তাহলে সেখানে একসময় মরুভূমির সৃষ্টি হবে ৷ সুতরাং উত্তর প্রজন্মের জন্য আশু প্রয়োজন প্রতি জলবিন্দু সংরক্ষণ করা ৷

প্রকৃতির মধ্যে জলের সবচেয়ে বড় উৎস হল বৃষ্টির জল ৷ এই বৃষ্টির জল সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা দরকার ৷ জল সংকট থেকে মুক্তির জন্য বৃষ্টির জল যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করা দরকার ৷ হরিয়ানার পালওয়াল জেলা বৃষ্টির জল সঞ্চয়ে উদাহরণ স্থাপন করেছে ৷ পালওয়াল জেলার ভিদুকি গ্রাম জল সংরক্ষণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ৷ এই গ্রামের বাসিন্দারা বৃষ্টির প্রতিটি জলবিন্দু সংরক্ষণ করছে ৷ তাঁদের এই কাজের কথা দেশের প্রত্যেকে আলোচনা করছে ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই গ্রামের বাসিন্দাদের জল সংরক্ষণ কাজের প্রশংসা করেছেন ৷

বেশ কয়েক বছর আগের কথা ৷ বর্ষা এলেই পালওয়ালের ভিদুকি গ্রামের বাসিন্দারা অসুবিধার সম্মুখীন হতেন ৷ এই গ্রামে নিকাশি ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ ৷ সেজন্য গ্রামের বিভিন্ন স্থানে জল জমে যেত ৷ গ্রামে সরকারি গার্লস স্কুল যাওয়ার রাস্তায় বৃষ্টির জলের সঙ্গে নোংরা জল জমে থাকত ৷ এমনকী স্কুলের খেলার মাঠে জল জমে থাকত ৷

বৃষ্টির জল সঞ্চয়ে উদাহরণ স্থাপন করেছে হরিয়ানার ভিদুকি গ্রাম

2016 সাল ৷ সত্যদেব গৌতম গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত হন ৷ তিনি B.Tech ও MBA করেছেন ৷ এই গ্রামকে পালটে দেওয়ার কথা তিনি একসময় স্বপ্ন দেখতেন ৷ এজন্য লাখ টাকার বেতনের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন ৷ এই গ্রামকে নিয়েই তাঁর প্রতিদিন স্বপ্ন তৈরি করা৷ তিনি প্রথমেই গার্লস স্কুলে জল সঞ্চয় প্রকল্প চালু করেন ৷ স্কুলের ছাদ থেকে পড়া জল সংরক্ষণ করার জন্য তিনি ছাদের সঙ্গে একটি পাইপ যুক্ত করেন ৷ এছাড়া স্কুলের রাস্তা ও জলজমে থাকা এলাকাকে ড্রেনের মাধ্যমে যুক্ত করেন ৷ এবং স্কুলের এক অংশে প্রায় 8 ফুট প্রশস্ত এবং 10 ফুট লম্বা 3টি ভূগর্ভস্থ জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণ করেন ৷

কীভাবে জল সঞ্চয় করা যায়? তিনটি জলের ট্যাঙ্কই একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত ৷ প্রথম দুটি ট্যাঙ্ক জলকে পরিশ্রুত করার কাজে ব্যবহৃত হয় ৷ নোংরা জলের সঙ্গে মিশে থাকা কঠিন পদার্থ প্রথম ট্যাঙ্কে পরিশ্রুত হয় ৷ দ্বিতীয় ট্যাঙ্কে জলের সঙ্গে মিশে থাকা সূক্ষ্ম পদার্থগুলো পরিশ্রুত হয় ৷ একই সময়, 120 মিটার গভীর নলকূপ যা তৃতীয় ট্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত থাকে তা দিয়ে সমস্ত পরিশ্রুত জল ভূগর্ভে চলে যায় ৷ এটি উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে মাটিতে জল প্রেরণের আগে, জল পরিশোধন করার জন্য এটি পরিস্রাবণের একটি সিস্টেমের মাধ্যমে ছাঁকা হয়।

ট্যাঙ্কে বিভিন্ন স্তরে তিন ধরনের ধাতব পাথর রাখা হয়েছে। ধাতব পাথরের পরে সূক্ষ্ম দানাদার পাথর স্থাপন করা হয়েছে ৷ এরফলে জলের সঙ্গে মিশে থাকা বিভিন্ন সূক্ষ্ম অপদ্রব্যগুলিও ফিল্টার হয় এবং খাঁটি পরিষ্কার জল মাটির ভিতরে যায়। গ্রামের হরিজন বস্তিতেও সত্যদেব গৌতম আরও একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন ৷ জল সংরক্ষণের ফলে এই বস্তির 80টি বাড়িতে নতুন জীবন সঞ্চার হয় ৷ নিকাশি ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ থাকায় একসময় এই বস্তির বাড়িগুলির সামনে জল জমে থাকত ৷ কিন্তু জল সঞ্চয় প্রকল্প এখানে হওয়ার ফলে রাস্তায় আর জল জমে থাকছে না ৷ বৃষ্টিপাতের পরে, সমস্ত জল ড্রেনের মধ্য দিয়ে সংগৃহীত হয়ে ট্যাঙ্কে পৌঁছে যায় এবং ধীরে ধীরে মাটিতে ফোঁটা ফোঁটা করে জল চলে যায় ৷ বর্ষার সময় ভরা পুকুর থেকে জল উপচে আগে রাস্তায় চলে আসত ৷ সত্যদেব গৌতম শুধু বৃষ্টির জল সঞ্চয় করাই নয়, পুকুর থেকে জলের উপচে পড়ার সমস্যাও দূর করেন ৷ তিনি জমির সঙ্গে সোয়াজ ক্যানেলের সাহায্যে পুকুরের সঙ্গে যুক্ত করে দেন ৷

যখনই বর্ষার সময় এই পুকুরের জল একটি নির্দিষ্ট স্তরের উপরে পৌঁছে যায়, তখন পাম্প-সেট স্থাপনের মাধ্যমে নিকাশি পাইপের মাধ্যমে জল জমিতে চলে যায়। গ্রামপ্রধান প্রায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে গ্রামের মাঠগুলিতে প্রতি 200 থেকে 300 মিটার দূরত্বে প্রায় 6 ফুট প্রশস্ত এবং 10 ফুট দীর্ঘ গর্ত করেন। নিকাশি পাইপ এই গর্তগুলির সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যখনই কৃষকদের জলের প্রয়োজন হয় তখন কৃষকরা এই গর্তগুলিতে পাইপ লাগিয়ে সেই জল তাঁদের জমিতে সেচকাজে ব্যবহার করতে পারেন । প্রায় দেড় বছর আগে ভিদুকি গ্রামের বাইরের ৪ একর জমিতে একটি পুকুরও খনন করা হয়েছিল। এই পুকুরটিতে সম্পূর্ণ অপরিশোধিত জল জমা করা হয় ৷ বৃষ্টির জল এতে জমা হয় ৷ পুকুরের জল কৃষি কাজে ব্য়বহার করা হয় ৷ যদিও ভূগর্ভস্ত জলস্তর ঠিক রাখা মূল লক্ষ্য ৷ বর্ষাকালে, জল যদি নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে যায়, তবে এই দুটি ছোটো পুকুরের জল খালে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। সত্যদেবের চেষ্টার ফলে বর্ষাকালে গ্রামে আর জল জমে না ৷ সত্যদেবের কাজের প্রশংসা করেছেন জেলাশাসক জিতেন্দ্র কুমার৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details