দিল্লি, 21 অগাস্ট : দিনের শুরুটা দেখে হয়তো রাতের অন্ধকারের আভাস পাওয়া যায় ৷ দিনের আলো-ই হয়তো রাতের অন্ধকারের গাঢ়ত্ব জানান দেয় ৷ সম্ভবত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের গ্রেপ্তারির নাটকে এটাই হতে পারে দিনের ট্যাগ লাইন ৷
নাটক-প্রতিবাদ-জল্পনা-27 ঘণ্টা পর আত্মপ্রকাশ কিছুই বাকি রইল না চিদম্বরম-ঘটনাপ্রবাহে ৷ অবশেষে CBI-র হাতে গ্রেপ্তার হলেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ৷ যেন ইতিহাসেরই বৃত্ত সম্পূর্ণ হল ৷ 2010 সাল সোহরাবউদ্দিন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অমিত শাহকে ৷ তখন পি চিদম্বরম ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ আর আজ চিদম্বরমকে গ্রেপ্তার করা হল, যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷
INX মিডিয়া দুর্নীতি মামলায় খাঁড়াটা ঝুলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই ৷ অভিযোগ ছিল, 4.5 কোটির বদলে 350 কোটি টাকা বেআইনি পথে দেশে আনার মূল ষড়যন্ত্রী ছিলেন প্রাক্তন এই অর্থমন্ত্রী ৷ নিজের ছেলে কার্তি চিদম্বরমের সংস্থাকে বেআইনিভাবে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে ৷ এই অভিযোগে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিজেদের হেপাজতে নিয়ে তদন্ত করার আর্জি জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI ৷ এই আর্জির বিরুদ্ধে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে গেছিলেন চিদম্বরম ৷ কিন্তু মঙ্গলবারই সেই আর্জি খারিজ করে দিয়ে চিদম্বরমকেই মূল চক্রান্তকারী বলে উল্লেখ করে আদালত ৷ তারপরই তাঁর বাড়িতে পৌঁছান CBI ও ED-র আধিকারিকরা ৷ কিন্তু বাড়িতে পাওয়া তো দূরের কথা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মোবাইল টাওয়ারের হদিশ পর্যন্ত পাননি তাঁরা ৷ এরপর বেশ কয়েক দফায় অভিযান চালানোর পর চিদম্বরমের বাড়িতেই লুকআউট নোটিশ লাগিয়ে দিয়ে আসে CBI ৷ দু'ঘণ্টার মধ্যে CBI দপ্তরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ৷
মঙ্গলবার যেখানে শেষ হয়েছিল বুধবার সকাল যেন সেখান থেকেই শুরু হল চিদম্বরম-পর্ব ৷ মঙ্গলবারই হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে গেছিলেন চিদম্বরমের আইনজীবী কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিংভিরা ৷ জরুরি ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতির এজলাসে মামলার শুনানির আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা ৷ কিন্তু অযোধ্যা মামলার দৈনিক শুনানিতে ব্যস্ত প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর তরফে জানানো হয়, কোনও ভাবেই এই আবেদন রক্ষা করা সম্ভব নয় ৷ পাশাপাশি শুক্রবার শুনানির দিন ঘোষণা করা হয় ৷ পরিস্থিতি যা দাঁড়ায় তাতে যেকোনও মুহূর্তে গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল ৷
চিদম্বরমের বাড়িরে সামনে কড়া নিরাপত্তা ইতিমধ্যেই সহ-যোদ্ধার পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন রাহুল গান্ধি-প্রিয়াঙ্কা গান্ধিরা ৷ সুপ্রিম কোর্টে শুনানির দিন শুক্রবার ঘোষণা হওয়ার পরই মাত্র আধঘণ্টার নোটিশে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকে কংগ্রেস ৷ জানানো হয় সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন অভিষেক মনু সিংভি, কপিল সিব্বলরা ৷ শুরু হয় সাংবাদিক বৈঠক ৷ ঠিক তখনই নাটকীয় মোড় নেয় চিদম্বরম-পর্ব ৷ 27 ঘণ্টা পর প্রকাশ্যে আসেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ৷ দাবি করেন তিনি নির্দোষ ৷ তাঁর কথায়, "আমি কোথাও পালিয়ে যাইনি ৷ দিল্লিতেই ছিলাম ৷ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম ৷"
সাংবাদিক বৈঠক সেরে তড়িঘড়ি নিজের জোরবাগের বাড়িতে ফেরেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ প্রায় একই সঙ্গে তাঁকে ধাওয়া করে বাড়ি পৌঁছায় 15-20 জনের CBI আধিকারিকদের দল ৷ তখন প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ির দরজা বন্ধ ছিল ৷ পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকেন কয়েকজন ৷ ভিতর থেকে তাঁরা দরজা খোলেন ৷ বাড়ির ভিতরে ঢোকেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসাররা ৷ ঠিক তখনই বাড়ির অপর প্রান্তে উপস্থিত ED-র আধিকারিকরা ৷ দফায় দফায় চলে চিদম্বরমকে জেরা ৷ 28 ঘণ্টা পর গ্রেপ্তার করা হয় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৷ নিজেদের গাড়িতে করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দপ্তরে নিয়ে যায় CBI ৷ আগামীকাল সম্ভবত তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে ৷
চিদম্বরমের গাড়িতে কংগ্রেস সমর্থক চিদম্বরমকে যখন গ্রেপ্তার করতে তাঁর জোরবাগের বাড়ির সামনে হাজির CBI-ED এবং দিল্লি পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ৷ তখন তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভে কংগ্রেস সমর্থকরা ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে সরব হন তাঁরা ৷ রাস্তায় বসে রীতিমতো বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা ৷ যদিও সব বাধা উপেক্ষা করেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিজেদের গাড়িতে করে দপ্তরের দিকে রওনা দেয় CBI ৷