পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

সুবিধা নয়, অনলাইন ক্লাসে অসুবিধারই সম্মুখীন পড়ুয়া-অভিভাবকরা

অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে স্কুলগুলি ৷ কিন্তু এই অনলাইন ক্লাস সব শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে কি উপযোগী ? বিহারের ভাঙ্গি টোলা গ্রামের দৃশ্য কিন্তু এই প্রশ্নের খানিকটা নেতিবাচক উত্তরই দিচ্ছে ৷

Online education
অনলাইন ক্লাস

By

Published : Jul 27, 2020, 12:59 AM IST

পুর্নিয়া(বিহার), 26 জুলাই : লকডাউনের ফলে যাতে শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনও প্রভাব না পড়ে তার জন্য অনলাইন ক্লাসের অনুমতি দিয়েছে সরকার ৷ সেইমতো অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে স্কুলগুলি ৷ কিন্তু এই অনলাইন ক্লাস সব শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে কি উপযোগী ? বিহারের ভাঙ্গি টোলা গ্রামের দৃশ্য কিন্তু এই প্রশ্নের খানিকটা নেতিবাচক উত্তরই দিচ্ছে ৷

রাজধানী পটনা থেকে 372 কিলোমিটার পথ গেলেই বিহারের অন্যতম একটি জেলা পুর্নিয়া ৷ এই জেলারই একটি গ্রাম ভাঙ্গি টোলা ৷ সেখানে 50-60 টি পরিবার থাকে ৷ এই দরিদ্র পরিবারগুলির বেশিরভাগ মানুষই সাফাই কাজের সঙ্গে যুক্ত ৷ যারা পৌরসভা বা সরকারি দপ্তর বা সদর হাসপাতালে কাজ করেন তাঁরা মাত্র 7-8 হাজার টাকা মাসিক আয় করে ৷ এই ভাঙ্গি টোলা গ্রামের কিছু মহিলাও সাফাই কর্মীর কাজ করে ৷ আর অনেক মহিলা পরিচারিকার কাজ করে ৷

এই পরিবারগুলির 30 শতাংশ শিশুরা স্কুলে যায় না ৷ এখন ডিজ়িটাল শিক্ষার যুগে বাকি 70 শতাংশ শিশুদেরও পড়াশোনার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ৷ কারণ সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষগুলি অনলাইন ক্লাস শুরু করলেও তার সুবিধা এই পড়ুয়ারা পাচ্ছে না ৷ আর সেই কারণেই দরিদ্র শ্রেণির পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সরকারের প্রতি ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ৷

অভিভাবক নানকি দেবী বলেন, "সরকার নিজের কথা ভাবে ৷ আমাদের জন্য সমস্যা তৈরি করে দিয়েছে সরকার ৷ আমরা ছেলেমেয়েদের পড়াতে চাই ৷ সরকারের থেকে আর কিছু চাই না ৷ " অপর এক অভিভাবক রাহুল কুমার বলেন, "আমরা যে কাজই করি, ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে পড়াই ৷ লকডাউনের পর থেকে আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে ভীষণ সমস্যা হচ্ছে ৷"

কতটা সুবিধাজনক অনলাইন ক্লাস ?

সরকার এই অনলাইন ক্লাস নিয়ে আশাবাদী ৷ কিন্তু বাস্তবে এই অনলাইন ক্লাসের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা ৷ দরিদ্র পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে এই অনলাইন ক্লাস কার্যত মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ আর তা শিক্ষক-শিক্ষিকারাও স্বীকার করছেন ৷

ভাঙ্গিটোলা গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়ান শিক্ষিকা পুতুল কুমারী ৷ তিনি বলেন, " দরিদ্র পডু়য়াদের অনলাইনে পড়াশোনায় সমস্যা হয় ৷ কারণ এদের কাছে ফোন নেই ৷ দোকানদারের থেকে ফোন নিয়ে এদের পড়াই ৷"

শিক্ষিকা পুতুল কুমারীর মাধ্যমে ইতিমধ্যে এই গ্রামের ছেলেমেয়েরা অনলাইন ক্লাস করেছেন ৷ এই অনলাইন ক্লাস নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ইতিবাচক ৷ আর সেটা তাদের আত্মবিশ্বাসেই প্রতিফলিত ৷ এক পড়ুয়া অমন কুমার বলে, "লকডাউনে বাড়িতে ফোন নিয়ে পড়াশোনা করি ৷ শিক্ষিকা ফোনের মাধ্যমে পড়ায় ৷ অনলাইনে পড়াশোনা করতে ভালো লাগে ৷ স্কুলের থেকেও বেশি ভালো লাগে অনলাইন ক্লাস ৷ "

অনলাইন ক্লাস করতে যখন দরিদ্র শ্রেণির পড়ুয়ারা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে ঠিক তখনই এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন সরস্বতী বিদ্যা মন্দির স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভোলা প্রসাদ ৷ তিনি বলেন, "আমরা বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাসের অডিয়ো ও ভিডিয়ো করে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিচ্ছি ৷ যার ফলে যাদের কাছে স্মার্ট ফোন নেই তারা অডিয়োর মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা নিতে পারবে ৷ আর যাদের স্মার্ট ফোন আছে তারা ভিডিয়োর মাধ্যমে ক্লাস করতে পারবে ৷"

সমস্ত দেশের সম্পদ শিশুরা ৷ কারণ তাদের সমৃদ্ধির উপরই দেশের প্রগতি নির্ভর করে ৷ ফলে তাদের শিক্ষায় খামতি থেকে গেলে আখেরে ক্ষতি দেশেরই হয় ৷ তাই এই দরিদ্র পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকদের সমস্যা ও আবেদন সরকারের শোনা অত্যন্ত জরুরি ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details