বোধহয় এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখি মায়ের গল্প । যে তার সন্তানদের আগলাতে আগলাতে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে । অক্টোপাস । ভাবতে হয়ত অদ্ভুত লাগতে পারে । কিন্তু এটাই সত্যি । এই সামুদ্রিক প্রাণীর গল্পটা এই মহাজাগতিক বিশ্বের যে কোনও মায়ের থেকেই বেদনাদায়ক । প্রায় 56 হাজার ডিমকে সমুদ্রের তলদেশে একটি ছোট্ট পাথর ঘেরা জায়গায় সামলে রাখে এই প্রাণী । তারপর শুরু হয় দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা । সন্তানদের জন্ম দিতে দিতে একসময় নিজেই শেষ হয়ে যায় ।
কেমন দেখতে হয় মা অক্টোপাস
অক্টোপাস প্রজাতির মধ্যে সর্ববৃহৎ হয় স্ত্রী অক্টোপাস । ওজন হয় 70 কেজি । লম্বায় 7 মিটার । পাঁচবছরের জীবদ্দশায় একবার প্রসব করে এরা । তবে ক্ষেত্র বিশেষে দু'বারও প্রসব করে । প্রথম প্রথম চার-পাঁচ মাস এই বিশাল সংখ্যক ডিমকে নিজের শরীরের সঙ্গে বহন করে নিয়ে চলে মা অক্টোপাস ।
কীভাবে ডিমগুলিকে আগলায় মা অক্টোপাস
এনিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন জীব বিজ্ঞানী জিম কোসগ্রোভ । তাঁর গবেষণাপত্র অনুযায়ী, শরীরের সঙ্গে বয়ে নিয়ে চলা এই ডিমগুচ্ছ তথা নিজের বাচ্চাদের সুস্থ রাখতে সমুদ্রের তলদেশে একটি নিরাপদ স্থান খোঁজে মা অক্টোপাস । মূলত জলের তলায় নুড়ি-পাথর ঘেরা সুরক্ষিত গুহা সদৃশ জায়গার মধ্যে আশ্রয় নেয় এবং ডিমগুলিকে পাহারা দেয় । যাতে কোনও সমুদ্র তারা বা বড় মাছ ওই ডিমগুলি না খেয়ে ফেলে । এই জায়গাটিকে বলা হয় অক্টোপাস ডেন । মাঝেমধ্যে নিজের পা দিয়ে ওই ডিমগুলির উপর জল দেয় মা অক্টোপাস । যাতে ডিমগুলি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় । ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থেকে বাঁচতে পারে । তারপর শীতকালের মাঝামাঝি সময়ে জলের তাপমাত্রা যথাযথ হলে সেই ডিমগুলিকে ছেড়ে দেয় । ধীরে ধীরে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় । এরপরও আরও ছ'মাস এভাবেই আগলাতে থাকে মা অক্টোপাস । নিজের সিফন দিয়ে জলে তরঙ্গ তৈরি করে ও পর্যাপ্ত বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা করে ।
কেমন দেখতে হয় শিশু অক্টোপাস
বাচ্চাগুলি 6 মিলিমিটার দীর্ঘ হয় । এদের ওজন 0.029 গ্রামের আশপাশে থাকে। তাদেরও ছোটো ছোটো আটটি পা থাকে ।
জন্ম দেওয়ার পর নিঃশেষ হয়ে যায় মা অক্টোপাস
নিরাপদে থাকার জন্য সমু্দ্রের তলদেশে প্রায় 4 হাজার 600 ফুট গভীরে বাস করে মা অক্টোপাস । দীর্ঘ সময় সন্তানদের আগলাতে আগলাতে একসময় ওজন কমে যায় তার । ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যায় । গায়ের উজ্জ্বল লাল রং ধূসর হয়ে যায় । কারণ তখন শুধু একটাই উদ্দেশ্য থাকে । তা হল সন্তানদের খেয়াল রাখা । এই সময় প্রায় ছ'মাস কিছুই না খেয়ে থাকে মা অক্টোপাস । এমনকী ডিমগুলো ছেড়ে এদিক-ওদিক নড়া-চড়াও করে না । ধীরে ধীরে ডিম থেকে বেরোতে শুরু করে শিশু অক্টোপাস আর নিঃশেষ হয়ে যায় মায়ের প্রাণ ।