পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

লকডাউনে বাড়ছে সাইবার অপরাধ, ব্রাউজ়িংয়ের সময় সাবধান

লকডাউনের এই সময়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ফোনের ব্যবহার বাড়ছে । আর এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ফাঁদ পাতছে সাইবার অপরাধীরা । মুহূর্তেই হাতিয়ে নিচ্ছে সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিজ্ঞানী ও সাইবার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ পেন্ডিয়ালা কৃষ্ণ শাস্ত্রী ।

By

Published : Apr 17, 2020, 9:38 PM IST

Published : Apr 17, 2020, 9:38 PM IST

ছবি
ছবি

লকডাউনের জেরে কার্যত স্তব্ধ দেশ । বন্ধ প্রায় সমস্ত পরিষেবা । বন্ধ রয়েছে অফিস ও কর্পোরেট হাউজ়গুলি। এই পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ লোকজনই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন। কিন্তু সাবধান । দেশের এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা । মুহূর্তেই তাদের হাতে চলে যাচ্ছে আমাদের কম্পিউটারের সমস্ত তথ্য ।

সাইবার চ্যালেঞ্জ

  • লকডাউনের সময় অপরাধীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে
  • নেটিজ়েন - ব্রাউজ়িংয়ের আগে সাবধান থাকুন

একজন সফটওয়ার কর্মচারী । বর্তমানে বাড়ি থেকে কাজ করছেন তিনি । মেল খুললেন । মেলের বিষয়- COVID-19 ৷ কিন্তু, তিনি বুঝতে পারলেন না যে, মেলটি খুলে হ্যাকারকে তাঁর ল্যাপটপে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করার রাস্তা খুলে দিলেন ৷ তারপর যে সফটওয়ার সংস্থায় ওই কর্মী কাজ করেন, সাইবার অপরাধীরা সেই সংস্থার অভ্যন্তরীণ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি দেখতে শুরু করে এবং ওই সফটওয়ার সংস্থাটির সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে ৷

অষ্টম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়ার জন্য তার কম্পিউটারটি খুলল । স্ক্রিনে একটি বার্তা দেওয়া ছিল। লেখা ছিল নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা না হলে সিস্টেমটি স্বাভাবিকভাবে কাজ শুরু করবে না ৷ শুধুমাত্র ব্যবহারকারীরাই বুঝতে পারেন যে তাঁদের কম্পিউটারটিতে কেউ অনুপ্রবেশ করেছে ৷ যাকে বলা হয় - ‘Ransome Ware’ ৷

লকডাউনের জেরে ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুরু হয়েছে । পাশাপাশি বৈদ্যুতিন সরঞ্জামগুলির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে । আর এই পরিস্থিতিকে সাইবার অপরাধীরা তাদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করছে । শুধুমাত্র আর্থিকভাবেই প্রতারণা করা হচ্ছে না আজকাল মহিলারা "শাড়ি চ্যালেঞ্জ"-এ অংশ নিচ্ছেন ৷ যেখানে তাঁদের পুরোনো একটি ছবিতে ভালো শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে ৷ তবে এই ছবিগুলি সাইবার অপরাধীরা বিয়ের বিভিন্ন পরিচিত ওয়েবসাইটগুলিতে দিয়ে অপব্যবহার করছে এবং সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করে চ্যাট ও বন্ধুত্বের নামে অন্য ব্যবহারকারীদের প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে । সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "এই ছবিগুলি পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটেও আপলোড করা হচ্ছে । লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর থেকে সোশাল মিডিয়ায়, মূলত ফেসবুকে মহিলাদের অ্যাকাউন্ট থেকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানোর পরিমাণ আগের তুলনায় 12 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে । এই বন্ধুত্বের অনুরোধের অধিকাংশটাই ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে আসছে ৷ এখন "শাড়ি চ্যালেঞ্জ"-এর মতো "পারিবারিক চ্যালেঞ্জ"-ও খুব বিখ্যাত হয়েছে । যেখানে স্ত্রী ও স্বামীকে তাঁদের ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে হচ্ছে । সাইবার অপরাধীরা এই ফটোগুলি চুরি করছে এবং স্বামীর মুখটি বদলে দিয়ে বিভিন্ন অবৈধ সাইটে আপলোড করছে । এরপর তারা সংশ্লিষ্ট মহিলাকে হুমকি দেওয়া শুরু করবে এবং ব্ল্যাকমেল করবে ৷ ওই মহিলাকে বলা হবে, "তিনি স্বামী ছাড়া অন্য কোনও পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন এবং তিনি চরিত্রহীন, এই বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হবে ৷"

বাড়ি থেকে কাজ করার সময় সতর্ক থাকুন

বাড়ি থেকে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা WiFi-এর উপর নির্ভর করেন । সংস্থাগুলি সুরক্ষিত "ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি" (VNS)-র মাধ্যমে তাদের কাজ করিয়ে নেয় ৷ WiFi-এর অ্যাকসেস পয়েন্ট যদি অসুরক্ষিত হয়, তাহলে তা দিয়েই সাইবার অপরাধীরা সহজেই কোনও সংস্থার নেটওয়ার্ক হ্যাক করতে পারে ৷ ব্যক্তি যে সংস্থার হয়ে কাজ করছেন, ওই ব্যক্তির ল্যাপটপ থেকে সংস্থার লেনদেন ও গ্রাহকের তথ্য চুরিও করা হচ্ছে ৷ তারপর ব্যক্তিগত ও আর্থিক লাভের জন্য সেই তথ্য ওই অপরাধীরা ব্যবহার করছে ৷ এমনই অভিযোগ সামনে এসেছে ৷

তথ্যের নামে প্রতারণা

প্যানডেমিকের এই পরিস্থিতিকে পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছে প্রতারকরা ৷ একজন ব্যবহারকারীকে একটি মেল পাঠানো হয় ৷ তাতে একটি অ্যাটাচমেন্ট থাকে ৷ সেখানে উল্লেখ করা থাকে যে মেলটিতে কোরোনা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে ৷ নিজের অজান্তে, ব্যবহারকারীরা যদি কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলে ওই অ্যাটাচমেন্ট খোলেন, তাহলে সেখানে থাকা ভাইরাস তখনই কম্পিউটার বা মোবাইলের সফটওয়্যারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যায় । এর ফলে সিস্টেমটি খারাপ হয়ে যায় ৷ স্ক্রিনটি ফাঁকা ও স্থির হয়ে যায় ৷ তার পরে স্ক্রিনে একটি বার্তা ফুটে ওঠে ৷ যাতে লেখা থাকে- সিস্টেমটি ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে ৷ অন্যথায় সিস্টেম এবং সিস্টেমের সমস্ত তথ্য নষ্ট হয়ে যাবে । ওই অ্যাটচমেন্টের সঙ্গে Keylogger সফটওয়্যার থাকে, যা সিস্টেমে সংযুক্ত হয়ে কী বোর্ডে প্রেস করা প্রতিটি তথ্যকেই জেনে নেয় ৷ এরও ফলাফল একই হয় ৷ এখানে ব্যবহারকারীর প্রতিটি পাসওয়ার্ড, পিন ও অন্যান্য গোপনীয় তথ্য অপরাধীদের কাছে স্থানান্তরিত হয় ৷ যা তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে ।

প্রতিরোধই হল সেরা সতর্কতা । দুঃখিত হওয়ার চেয়ে নিরাপদ থাকা ভালো :

সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া ব্যবহারকারীদের ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার করে সাইবার অপরাধীরা COVID-19 এর জেরে তৈরি হওয়া বর্তমান পরিস্থিতিকে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করছে ৷ ব্যবহারকারীদের কোনও ব্যক্তিগত তথ্য সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া উচিত নয় । মহিলাদের বিশেষত অতিরিক্ত সচেতন হওয়া উচিত । অজানা উৎস থেকে আসা কোনও মেল কখনওই খোলা বা ডাউনলোড করা উচিত নয় । এমন কোনও সংস্থার থেকে ভিডিও গেমস এবং অন্য কোনও অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করাও উচিত নয় । যোগাযোগ নেই এমন অজানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যগুলি শিশুরা খুললে বিপদ হতে পারে । আমাদের সমস্ত বৈদ্যুতিন সরঞ্জামে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে অ্যান্টি-ভাইরাস সর্বশেষতম আপডেট করে নেওয়া উচিত । অপারেটিং সিস্টেমটিও নিয়মিত আপডেট করতে হবে । কোনও পরিস্থিতিতেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ এবং পিনের তথ্য কাউকে বলবেন না ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details