পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

কোরোনা নয়, লকডাউন কেড়ে নিয়েছে 380-র বেশি প্রাণ - কণিকা শর্মা

সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে মালগাড়ি পিষে দিয়েছে 16 জন ঘুমন্ত শ্রমিককে । তবে মৃত্যুর সংখ্যা এখানেই শেষ নয়, তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত লকডাউনের কারণে মৃত্যু 383জনের (10মে পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী)। এবং এই মৃত্যুর কারণ কোরোনা সংক্রমণ নয় ।

labourer
লকডাউনে মৃত্যু

By

Published : May 12, 2020, 12:04 PM IST

Updated : May 12, 2020, 1:00 PM IST

দিল্লি, 12 মে : ঘরে-বন্দী ভারত । COVID-19 মোকাবিলায় দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার । দেশের একাংশ ঘরে থেকে সুস্থ থাকার কথা ভেবেছে, অন্য এক অংশের ছবি নাড়িয়ে দিয়েছে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে । লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরেই প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক মাইলের পর মাইল হেঁটে ভিন রাজ্য থেকে নিজ রাজ্যে ফিরেছেন-ফিরছেন ।

মাঝ পথে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের । অনেক প্রাণ কেড়েছে দুর্ঘটনাও । যেমন, সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে মালগাড়ি পিষে দিয়েছে 16 জন ঘুমন্ত শ্রমিককে । তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত লকডাউনের কারণে মৃত্যু 383 জনের (10মে পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী)। এবং এই মৃত্যুর কারণ কোরোনা সংক্রমণ নয় ।

হাজার হাজার কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে দুই শ্রমিকের । বিহারের দুই পরিযায়ী শ্রমিক ফেরার সময় আজ সকালে তাঁদের গাড়ি চাপা দেয় । একজনের ঘটনাস্থানেই মৃত্যু হয় । অন্যজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভরতি করা হয় । গাড়িটি গতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরেই ধাক্কা দিয়েছে বলে অভিযোগ । গাড়িচালক পলাতক । অন্যদিকে রায়বারেলিতে সাইকেলে করে বাড়ি ফেরার সময় 25 বছরের শিবকুমার দাসকে গাড়িতে ধাক্কা দেয় । ঘটনাস্থানেই তাঁর মৃত্যু হয় ।

মধ্যপ্রদেশের 20 জন পরিযায়ী শ্রমিক রেললাইন ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন । ক্লান্ত হয়ে রেললাইনেই ঘুমিয়ে পড়েন । 8 মে একটি মালগাড়ির ধাক্কায় 16 জনের মৃত্যু হয় । পরিবার ছেড়ে মহারাষ্ট্র গিয়েছিলেন কাজের খোঁজে । লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ , প্রায় অনাহারে দিন কাটছিল । ওই দলের এক শ্রমিক জানিয়েছিলেন, বাড়ি ফেরার আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি । তাই বাধ্য হয়েই হেঁটে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত ।

কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত ভারতে মৃত্যু 2,293 জনের । তেজেশ জি.এন, কণিকা শর্মা এবং আমনের সমীক্ষা অনুযায়ী একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয় । সেই রিপোর্টে মৃত্যুর সংখ্যা এবং কারণ উল্লেখ করা হয় । 10 মে পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে এই রিপোর্টটি বানানো হয়েছে । (আজ সকালে দুই পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু নথিভুক্ত নয় ।)

অনাহার এবং আর্থিক দুরবস্থা -47

হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে এবং লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে26

পুলিশ নির্মমতা এবং অন্যান্য হিংসাত্মক ঘটনায় –12

বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় গাফিলতি –40

সংক্রমণের ভয়ে, একাকিত্ব এবং ঘর-বন্দী থাকার অবসাদে আত্মহত্যার সংখ্যা –83

মদ বিক্রি বন্ধে মৃত্যু এবং আত্মহত্যা –46

পরিযায়ী শ্রমিকরা হেঁটে ফেরার সময় পথ দুর্ঘটনা এবং ট্রেন দুর্ঘটনায় –74

লকডাউনের সময় অপরাধমূলক ঘটনায় মৃত্যু (সাম্প্রদায়িক নয়) –14

যেসব মৃত্যুর কারণ পাওয়া যায়নি বা আরও তথ্য আসা বাকি –41

(তথ্যঋণ -NON VIRUS DEATHS )

তেজেশ জি.এন, কণিকা শর্মা এবং আমন একাধিক তথ্য জোগাড় করেন । তাঁরা নিজেদের “ফ্রিলান্স স্কলারস অ্যান্ড স্টুডেন্ট ভলানটিয়ারস যাঁরা অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড গবেষণা এবং আর্থ-সামাজিক অধিকারে আগ্রহী” বলে পরিচয় দেন । তাঁরা প্রতিদিন একটি ওয়েবসাইটে এই তথ্য আপডেট করেন । লকডাউনের সময় মানুষের মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করেন, যাঁদের কোরোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়নি । সেই নথিতে তাঁরা মৃত্যু কারণ হিসেবে আত্মহত্যা , চিকিৎসার গাফিলতি, পুলিশ নির্মমতা, পথ দুর্ঘটনার মত কারণকে উল্লেখ করেছেন ।

কণিকা শর্মা অ্যামেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে একটি বিশেষ ক্ষেত্রের উপর গবেষণামূলক কাজ করছেন । তিনি এই বিষয়ে বলেন, “লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা তথ্য জোগাড় করা শুরু করি । দেখা যায় অনেক মৃত্যুর খবর আসছে । হেঁটে বাড়ি ফেরার সময় বা চিকিৎসার গাফিলতিতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে । যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক ।”

কোরোনা সংক্রমণের ফলে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে । যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুর হার আগের থেকে কম । 24 ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে 83 জনের । সুস্থ হয়েছেন এখনও পর্যন্ত 22,455 জন । এইদিকে লকডাউনের কারণে কাজ হারিয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক । দেশের অর্থনীতিও ধুঁকছে বলে বারবার ইঙ্গিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা । পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিস্থিতির জন্য বিরোধীরা কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন । চালু হয়েছে বিশেষ ট্রেন পরিষেবা ।

লড়াই চলছে-চলবেও । লকডাউন উঠে গেলেও বিপদ আছে । আবার চললেও তার ফল ভালো হবে না, তাও স্পষ্ট । সব মিলিয়ে এক নতুন লড়াই । অস্তিত্ব বজায় রাখার লড়াই । প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই । আগামী বাসযোগ্য করার লড়াই ।

Last Updated : May 12, 2020, 1:00 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details