পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Aug 31, 2020, 5:55 AM IST

Updated : Aug 31, 2020, 7:57 AM IST

ETV Bharat / bharat

কংগ্রেসে নবীন-প্রবীণ সমস্যা নেই, রাহুলের দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিত: হরিশ রাওয়াত

প্রবীণ কংগ্রেস নেতা হরিশ রাওয়াত দাবি করলেন, সংগঠনের মধ্যে নবীন এবং প্রবীণের মধ্যে ক্ষমতা দখলের কোনও লড়াই নেই । প্রাচীন দলটার লাগাম ধরার জন্য রাহুলকে অনুরোধ করেন তিনি । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বরিষ্ঠ সাংবাদিক অমিত অগ্নিহোত্রী৷

Interview of Harish Rawat
হরিশ রাওয়াত

সম্প্রতি 23 জন প্রবীণ কংগ্রেস নেতার লেখা চিঠিতে নেতৃত্ব সংক্রান্ত বিতর্কটি সামনে এসেছে । নবীন-প্রবীণ বিরোধ কি কংগ্রেসের উত্থানে বাধা সৃষ্টি করছে?

দেখুন, কংগ্রেস দলটার ইতিহাস বলছে তারা তরুণদের তুলে ধরে এবং সাহায্য করে । ইন্দিরা গান্ধির সময় বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা দলে যোগ দিয়েছিলেন । কমল নাথের মতো বেশ কয়েকজন তরুণকে তুলে ধরেছিলেন সঞ্জয় গান্ধি । পরবর্তীতে রাজীব গান্ধি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি ছাড়াও গুলাম নবি আজাদ, আহমেদ প্যাটেল, আনন্দ শর্মা এবং মুকুল ওয়াসনিক দলে যোগ দেন । আদতে সঞ্জয় গান্ধি এবং রাজীব গান্ধির সময় যাঁরা কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন, আজ তাঁদের অনেকেই নিভৃতে চলে গিয়েছেন । রাহুল গান্ধি সক্রিয় রাজনীতিতে আসার পর রাজীব সাতাভ এবং গৌরব গগৈ আমাদের পর তরুণতম নেতা হিসেবে দলে এসেছেন এবং তাঁদের উত্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি । তরুণদের প্রতি স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেস একটু দুর্বল । দলে প্রবীণ বনাম নবীনদের কোনও রকম বিরোধ নেই । আমরা তরুণদের উত্সাহিত করি এবং উন্নতিতে সাহায্য করি । জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতো দু'একটা উদাহরণ অবশ্য আছে । খুব অল্প সময়ের মধ্যে দলকে সে অনেক কিছু দিয়েছিল । আমি একটি ব্যক্তিগত কথা বলব । 1980 সাল । জ্যোতিরাদিত্যর বাবা ( প্রয়াত মাধবরাও সিন্ধিয়া ) এবং আমি তখন সংসদ সদস্য । আমরা মনমোহন সিংয়ের আমলেও সাংসদ হই৷ সে সময় জ্যোতিরাদিত্যও সাংসদ হন । মূল বিষয়টি হচ্ছে ধৈর্য । জ্যোতিরাদিত্য যদি তা দেখাতে পারতেন তাহলে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন । কিন্তু, তিনি অধৈর্য হয়ে দল ছেড়ে চলে গেলেন ।

​যদি এটাই হয়, তা হলে 24 অগাস্ট কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কেন গুলাম নবি আজাদকে নিশানা করা হল?

চিঠির বিষয়টি নিয়ে আগে কেউ উদ্বিগ্ন ছিলেন না । একটি বিশেষ সময় এবং সংবাদ মাধ্যমে চিঠিটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় CWC সদস্যরা অত্যন্ত হতাশ হয়েছিলেন । বিষয়টি নিয়ে বিচলিতও হয়েছিলেন তাঁরা । তাঁরা ভাবছিলেন কেন-কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল । আজাদ একজন প্রবীণ-ধূরন্ধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । আজাদ, আহমেদ প্যাটেল এবং অম্বিকা সোনিদের দলে একটা বিশেষ জায়গা আছে । আমরা সব সময় তাঁদের শ্রদ্ধা করি । কোনও বৈঠকে তাঁরা যদি দাঁড়িয়ে থাকেন, আমরা কেউ চেয়ারে বসি না । দলের যে কোনও সমস্যা মেটাতে আজাদ বিশেষ ভূমিকা পালন করেন । আমরা কিছু ভুল করলে আজাদ তা ঠিক করে দেন । আহমেদ প্যাটেলের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায় । যখন চিঠিটা ফাঁস হয়ে গেল এবং পুরো ঘটনার পিছনে আজাদের নাম জড়িয়ে গেল, তখন আমরা ভাবলাম কেন তাঁকে?

তাঁর মন্তব্য নিয়ে আলোচনা হতে পারত । দল সম্পর্কে বেশ কিছু নেতিবাচক কথা শোনা যাচ্ছিল । এগুলি আমাদের কষ্ট বাড়াচ্ছিল । সেই বেদনাই কার্যনির্বাহী সভায় প্রতিফলিত হয় । চিঠি ফাঁস হওয়ায় সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন । এটাই আমাদের আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করেছিল । তবে শেষ পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধি আমাদের সকলকে আশ্বাস দিয়েছেন, সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন বলে।

রাহুল গান্ধি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ফিরে আসার বিষয়ে কি তাঁদের উদ্বেগ রয়েছে?

CWC-এর বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যদি রাহুল দায়িত্ব নিতে রাজি না হন তাহলে ফের একটি সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অধিবেশন ডেকে বিষয়টির সমাধান করা হবে । আমরা চাই রাহুলই দায়িত্ব নিন । এটাই CWC-র সর্বসম্মত প্রস্তাব ছিল । এমনকী, 2019 সালে বর্ধিত CWC-এর অধিবেশনে রাহুলকে তাঁর পদত্যাগ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল । তাঁর নেতৃত্বের উপর কংগ্রেস কর্মীদের পূর্ণ বিশ্বাস আছে । রাহুল যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন তাঁর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল৷ সেটা আমরা অনুভব করি । আজ দেশের সংসদীয় ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে । প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং তাঁর সরকারের কাজ কর্মকে উপযুক্ত জবাব দিচ্ছেন রাহুল । তিনি একজন কংগ্রেস নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন এবং সেই ভাবেই নিজেকে তুলে ধরছেন । বিরোধী নেতার স্থান দখল করছেন । এই পরিস্থিতিতে আমি মনে করে কংগ্রেস এবং দেশের একজন তরুণ নেতার প্রয়োজন । যিনি গোটা দেশ ঘুরে দেখবেন এবং মানুষের সঙ্গে দেখা করবেন । রাহুল সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন । সময় পালটাচ্ছে । রুটির পাশাপাশি ভালোভাবে জীবন ধারণের বিষয়গুলি মানুষ তুলে ধরেছেন । কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে রাহুলের দায়িত্ব গ্রহণের এটাই সঠিক সময় ।

দুই দশক ধরে CWC নির্বাচন না হওয়ার কারণ কী?

এটা জনসমক্ষে বিতর্ক করার বিষয় নয়, দলীয় কর্মসূচি । জেলা-পর্যায়ে বিভিন্ন নেতা এবং কংগ্রেস কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে । আজাদ নতুন কিছু বলছেন না, এগুলি পুরনো কংগ্রেসের ধারণা । আসলে, রাহুলই যুব কংগ্রেসের উদ্বোধন করেছিলেন এবং যুব শাখায় অভ্যন্তরীণ নির্বাচন শুরু করেছিলেন । রাহুল যদি দায়িত্ব গ্রহণ করেন তবে তিনি অবশ্যই অভ্যন্তরীণ দলীয় নির্বাচনের পছন্দ করবেন। তবে আজ দেশ যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়েছে সে দিকে আমাদের নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি । আমরা সকলেই নীতিগতভাবে একমত যে, অভ্যন্তরীণ নির্বাচন হওয়া উচিত, তবে আমরা এর সময় নির্ধারণ করব ।

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উত্থাপিত বিষয়গুলি একত্র করা গিয়েছে?

চিঠির বিষয় নিয়ে CWC-র বৈঠকে আলোচনা হয়েছে । আমার মনে হয় সোনিয়াজি সব শেষে তাঁর মন্তব্য পেশ করবেন । শুধু আমি নই, কংগ্রেস নিয়ে চিন্তিত আজাদও । বিষয়টিকে তুলে ধরার মধ্যে কোনও ভুল ছিল বলে আমি মনে করি না । আগামী ছয় মাসের মধ্যে AICC-এর অধিবেশন বসবে । অন্য কিছু হবে কি না, তা আমি বলতে পারব না, তবে আমার মনে হয় রাহুলের সভাপতি পদে ফিরে আসা উচিত । আমরা একটি গঠনমূলক বিরোধী দল হিসেবে থাকতে চাই, যারা বেকারত্ব-অসহিষ্ণুতা-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মোদি সরকারের উপর চাপ বাড়াতে পারবে ।

কংগ্রেস কেন আক্রমণাত্মক বিরোধী দল হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারছে না?

গত দুই বছর ধরে এমন এক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমরা দেখছি, যা কংগ্রেসের পরিচিত নয় । BJP এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশের রাজনীতিকে বিভক্ত করতে সফল হয়েছে । 2017 সালে উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের নির্বাচন আমরা দেখেছি । আমাদের আশা ছিল সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে যোগ করে উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় আসবে UPA৷ একই আশা ছিল উত্তরাখণ্ডের বিষয়ে । কিন্তু, ভোট প্রচারের সময় মোদির কবরিস্থান-শমশান জাতীয় মন্তব্য মেরুকরণ করেছিল । ফল স্বরূপ আমরা পরাজিত হয়েছি । গুজরাত নির্বাচনে বেকারত্ব-অর্থনৈতিক মন্দার মতো বিষয়গুলি নিয়ে লড়াই করার চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু, 2019 সালে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পুলওয়ামা হামলা হয় । প্রধানমন্ত্রী এবং সংবাদ মাধ্যমগুলি সীমান্ত টপকে বালাকোট হামলার কথা জানায় । দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে সময় কংগ্রেসকে পাকিস্তানপন্থী হিসেবে তুলে ধরা হয় । ভারতীয় ঐতিহ্য সমতার কথা বলে । কিন্তু, BJP সম্প্রদায়কে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিকে বিভক্ত করতে সফল । এটা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত পিচ৷ সে কারণেই আমরা 2019 সালের নির্বাচনে পরাজিত হই ।

বিগত কয়েক দশকে কংগ্রেস সভাপতির কার্যকলাপের কি পরিবর্তন ঘটেছে ?

ইন্দিরা গান্ধির সময় থেকে সভাপতির কর্মপদ্ধতি একই রয়েছে । রাজীব গান্ধি, পিভি নরসিমা রাও, সীতারাম কেশরী, সোনিয়া গান্ধি এবং রাহুল গান্ধির আমলে তার কোনও পরিবর্তন আসেনি । গত 12 বছর ধরে সোনিয়ার নেতৃত্বে রাহুল কাজ করে চলেছেন । কাজের শৈলী এবং অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই । তবে বিগত বছরগুলিতে যা পরিবর্তন হয়েছে, তা হল দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি-পরিবেশ । পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে ।

পরিস্থিতি পরিবর্তনের বিষয়ে আপনি কি আশাবাদী ?

মানুষ যখন রুটি-মাখন, চাকরির অভাব, অর্থনীতির মতো বিষয়গুলি নিয়ে ভাবতে শুরু করবেন তখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে । সে দিন মানুষ কংগ্রেসের কাজের প্রশংসা করবে । RSS প্রধান মোহন ভাগবত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশে বিভেদের পরিবেশ তৈরি করেছেন । কংগ্রেসের একটা উত্তর আছে । তবে কংগ্রেস নিজস্ব পিচে খেলবে৷ সেখানে কেউ তাকে হারাতে পারবে না ।

Last Updated : Aug 31, 2020, 7:57 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details