সম্প্রতি 23 জন প্রবীণ কংগ্রেস নেতার লেখা চিঠিতে নেতৃত্ব সংক্রান্ত বিতর্কটি সামনে এসেছে । নবীন-প্রবীণ বিরোধ কি কংগ্রেসের উত্থানে বাধা সৃষ্টি করছে?
দেখুন, কংগ্রেস দলটার ইতিহাস বলছে তারা তরুণদের তুলে ধরে এবং সাহায্য করে । ইন্দিরা গান্ধির সময় বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা দলে যোগ দিয়েছিলেন । কমল নাথের মতো বেশ কয়েকজন তরুণকে তুলে ধরেছিলেন সঞ্জয় গান্ধি । পরবর্তীতে রাজীব গান্ধি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি ছাড়াও গুলাম নবি আজাদ, আহমেদ প্যাটেল, আনন্দ শর্মা এবং মুকুল ওয়াসনিক দলে যোগ দেন । আদতে সঞ্জয় গান্ধি এবং রাজীব গান্ধির সময় যাঁরা কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন, আজ তাঁদের অনেকেই নিভৃতে চলে গিয়েছেন । রাহুল গান্ধি সক্রিয় রাজনীতিতে আসার পর রাজীব সাতাভ এবং গৌরব গগৈ আমাদের পর তরুণতম নেতা হিসেবে দলে এসেছেন এবং তাঁদের উত্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি । তরুণদের প্রতি স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেস একটু দুর্বল । দলে প্রবীণ বনাম নবীনদের কোনও রকম বিরোধ নেই । আমরা তরুণদের উত্সাহিত করি এবং উন্নতিতে সাহায্য করি । জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতো দু'একটা উদাহরণ অবশ্য আছে । খুব অল্প সময়ের মধ্যে দলকে সে অনেক কিছু দিয়েছিল । আমি একটি ব্যক্তিগত কথা বলব । 1980 সাল । জ্যোতিরাদিত্যর বাবা ( প্রয়াত মাধবরাও সিন্ধিয়া ) এবং আমি তখন সংসদ সদস্য । আমরা মনমোহন সিংয়ের আমলেও সাংসদ হই৷ সে সময় জ্যোতিরাদিত্যও সাংসদ হন । মূল বিষয়টি হচ্ছে ধৈর্য । জ্যোতিরাদিত্য যদি তা দেখাতে পারতেন তাহলে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন । কিন্তু, তিনি অধৈর্য হয়ে দল ছেড়ে চলে গেলেন ।
যদি এটাই হয়, তা হলে 24 অগাস্ট কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কেন গুলাম নবি আজাদকে নিশানা করা হল?
চিঠির বিষয়টি নিয়ে আগে কেউ উদ্বিগ্ন ছিলেন না । একটি বিশেষ সময় এবং সংবাদ মাধ্যমে চিঠিটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় CWC সদস্যরা অত্যন্ত হতাশ হয়েছিলেন । বিষয়টি নিয়ে বিচলিতও হয়েছিলেন তাঁরা । তাঁরা ভাবছিলেন কেন-কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল । আজাদ একজন প্রবীণ-ধূরন্ধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । আজাদ, আহমেদ প্যাটেল এবং অম্বিকা সোনিদের দলে একটা বিশেষ জায়গা আছে । আমরা সব সময় তাঁদের শ্রদ্ধা করি । কোনও বৈঠকে তাঁরা যদি দাঁড়িয়ে থাকেন, আমরা কেউ চেয়ারে বসি না । দলের যে কোনও সমস্যা মেটাতে আজাদ বিশেষ ভূমিকা পালন করেন । আমরা কিছু ভুল করলে আজাদ তা ঠিক করে দেন । আহমেদ প্যাটেলের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায় । যখন চিঠিটা ফাঁস হয়ে গেল এবং পুরো ঘটনার পিছনে আজাদের নাম জড়িয়ে গেল, তখন আমরা ভাবলাম কেন তাঁকে?
তাঁর মন্তব্য নিয়ে আলোচনা হতে পারত । দল সম্পর্কে বেশ কিছু নেতিবাচক কথা শোনা যাচ্ছিল । এগুলি আমাদের কষ্ট বাড়াচ্ছিল । সেই বেদনাই কার্যনির্বাহী সভায় প্রতিফলিত হয় । চিঠি ফাঁস হওয়ায় সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন । এটাই আমাদের আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করেছিল । তবে শেষ পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধি আমাদের সকলকে আশ্বাস দিয়েছেন, সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন বলে।
রাহুল গান্ধি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ফিরে আসার বিষয়ে কি তাঁদের উদ্বেগ রয়েছে?
CWC-এর বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যদি রাহুল দায়িত্ব নিতে রাজি না হন তাহলে ফের একটি সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অধিবেশন ডেকে বিষয়টির সমাধান করা হবে । আমরা চাই রাহুলই দায়িত্ব নিন । এটাই CWC-র সর্বসম্মত প্রস্তাব ছিল । এমনকী, 2019 সালে বর্ধিত CWC-এর অধিবেশনে রাহুলকে তাঁর পদত্যাগ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল । তাঁর নেতৃত্বের উপর কংগ্রেস কর্মীদের পূর্ণ বিশ্বাস আছে । রাহুল যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন তাঁর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল৷ সেটা আমরা অনুভব করি । আজ দেশের সংসদীয় ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে । প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং তাঁর সরকারের কাজ কর্মকে উপযুক্ত জবাব দিচ্ছেন রাহুল । তিনি একজন কংগ্রেস নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন এবং সেই ভাবেই নিজেকে তুলে ধরছেন । বিরোধী নেতার স্থান দখল করছেন । এই পরিস্থিতিতে আমি মনে করে কংগ্রেস এবং দেশের একজন তরুণ নেতার প্রয়োজন । যিনি গোটা দেশ ঘুরে দেখবেন এবং মানুষের সঙ্গে দেখা করবেন । রাহুল সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন । সময় পালটাচ্ছে । রুটির পাশাপাশি ভালোভাবে জীবন ধারণের বিষয়গুলি মানুষ তুলে ধরেছেন । কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে রাহুলের দায়িত্ব গ্রহণের এটাই সঠিক সময় ।
দুই দশক ধরে CWC নির্বাচন না হওয়ার কারণ কী?