পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

দেশের ভিতরেই আরও বিরোধিতার মুখে পড়ে কোণঠাসা নেপালের প্রধানমন্ত্রী

ওলির কার্যকলাপ, যাকে চিনপন্থী বলেই দেখা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-নেপাল সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে । ওলির পদক্ষেপের পরই ভারতের তরফে কড়া প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয় । বিদেশ মন্ত্রক জানায়, এই পদক্ষেপ অসমর্থনযোগ্য ।

nepal pm on stickier wicket after more opposition from within
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি

By

Published : Jul 3, 2020, 11:36 AM IST

দিল্লি : নেপালের ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (NCP) আরও কয়েকজন সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সরকার চালানোর কৌশল নিয়ে । আর তাতেই স্পষ্ট হয়ে গেল, আগামী দিনগুলিতে হিমালয়ের দেশের এই প্রধানমন্ত্রীর সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে আছে ।

যদিও বুধবার কাঠমাণ্ডুতে চলতি স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে শুধুমাত্র পাঁচজন সদস্যই এ নিয়ে কথা বলেছেন । তবুও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এঁদের সকলেই প্রধানমন্ত্রী পদে ওলির স্থায়িত্ব নিয়ে নিজেদের অভিযোগ-আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন । সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অন্তত তাই বলছে ।

দা কাঠমাণ্ডু পোস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, তিন জন নেতা–পেশল খাতিওয়াড়া, মাতৃকা যাদব এবং লীলামণি পোখরেল ওলির ইস্তফা দাবি করেছেন । আর বাকি দু’জন নন্দা কুমার প্রাসিন এবং যোগেশ ভট্টরাই আবেদন করেছেন, ওলি যেন সরকার চালানোর কৌশল সংশোধন করেন ।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বৈঠকটি আয়োজিত হয়েছিল। তবে তিন সদস্যের মন্তব্যের পর বৈঠক স্থগিত হয়ে যায় । বৃহস্পতিবার 11টায় তা ফের শুরুর কথা ছিল ।

ওলির কার্যকলাপ, যাকে চিনপন্থী বলেই দেখা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-নেপাল সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে ।

গত মাসে ওলির উদ্যোগেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে দেশের নতুন একটি রাজনৈতিক মানচিত্র পাশ হয়েছিল । যেখানে কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরাকে নেপালের অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছিল । যা আদপে ভারতের অধিকৃত এলাকার মধ্যে পড়ে । প্রসঙ্গত তার আগেই মে মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং লিপুলেখ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি সড়কপথের সূচনা করেছিলেন । কৈলাস মানস সরোবরের উদ্দেশে যাত্রাকারী পুণ্যার্থীদের জন্যই এই সড়কপথ তৈরি হয় ।

ওলির পদক্ষেপের পরই ভারতের তরফে কড়া প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয় । বিদেশ মন্ত্রক জানায়, এই পদক্ষেপ অসমর্থনযোগ্য ।

তারপর রবিবার ওলি অভিযোগ করেন, ভারত তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে ।

শনিবার কাঠমাণ্ডুতে এক অনুষ্ঠানে ওলি বলেছিলেন, “সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আমার অবস্থানের জন্য দিল্লির উঠেপড়ে লাগা, নেপালে এক শ্রেণির মানুষের রাজনীতি এবং এই দুইয়ের আঁতাতে আমার পদ যেতে বসেছে । কিন্তু এমন ভাবার কোনও কারণ নেই যে এই অপচেষ্টায় তারা সফল হবে ।”

পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশে কোভিড-19 পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁর ব্যর্থতার জন্যই বিরোধীরা ছাড়াও নিজের দল NCP-তেই ওলি সমালোচিত হয়েছিলেন । আর সেই সব কিছু থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতেই ওলি এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন ।

মঙ্গলবার, স্ট্যান্ডিং কমিটির একটি বৈঠকে NCP-র সহকারী চেয়ারম্যান এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কুমার দহল (প্রচণ্ড) এবং শীর্ষ নেতা যেমন মাধবকুমার নেপাল, ঝালা নাথ খানাল, বামদেব গৌতম এবং নারায়ণ কাজি শ্রেষ্ঠাসহ আরও 11 জন প্রধানমন্ত্রী পদে ওলির পদত্যাগ দাবি করেন ।

বুধবারের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকের পর কাঠমাণ্ডুর রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ হরি রোকা ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন, ওলি তাঁর নিজের দলেই বর্তমানে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন । কারণ 45 জন সদস্যের কমিটির মাত্র 15 জনই তাঁকে সমর্থন করছেন ।

নেপালের রাজধানী শহর থেকে ফোনে রোকা ইটিভির সাংবাদিককে বলেন, “ PM বলছেন, যদি তাঁরা এভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে প্ররোচনা করতে থাকেন, তাহলে তিনি দল ভেঙে দেবেন ।”

বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ওলি আপাতদৃষ্টিতে চাইছেন, পার্লামেন্টে আস্থাভোট হোক । এই নিয়ে তাঁর যুক্তি, স্ট্যান্ডিং কমিটি তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসায়নি ।

এমন দাবিও উঠেছে যে ওলি যেকোনো একটি পদ ছেড়ে দিন । হয় তাঁর প্রধানমন্ত্রীর পদ । আর না হয় NCP-র সহকারী চেয়ারম্যানের পদ ।

রোকার মতে, ওলি যদি প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান, সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা জোরালো যে দহল এবং আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এবং NCP-র চেয়ারম্যানের পদ বণ্টিত হতে পারে ।

2018 সালে NCP ক্ষমতায় এসেছিল ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (জোটবদ্ধ মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) এবং দহলের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপালের (মাওবাদী ক্যাডার) সংযুক্তিকরণের ফলে।

দিল্লির অবজ়ার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’ নেবারহুড রিজিওনাল স্টাডিজ় ইনিশিয়েটিভের সিনিয়র ফেলো কে ওয়াইহোম মনে করেন, NCP-র মধ্যেই অভ্যন্তরীণ স্তরে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে । আর দুই শিবিরের মধ্যে এই লড়াইয়ের একটি সমর্থন করছে দহলকে ।

ইটিভি ভারতকে ওয়াইহোম বলেছেন, “এই দুই শিবিরের মধ্যে মতবিরোধ আরও তুঙ্গে উঠেছে কোভিড-19 নিয়ন্ত্রণে ওলির ভূমিকার জন্য ।”

তিনি এও বলেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে ওলির সরব হওয়ার আরও একটি কারণ এই যে, নেপালের রাজনৈতিক সমীকরণে চিনের ভূমিকা ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে । ওয়াইহোম বলেছেন, “নেপাল ভারতের বিরুদ্ধে অতীতেও চিন তাস খেলেছে । কিন্তু গোপনে । তা প্রকাশ্যে আসতে দেয়নি কখনও ।”

ওয়াইহোম আরও বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে । গত দু’বছর ধরে বেজিং খোলাখুলি বলছে যে তারা এই খেলায় অংশ নিতে চায় । এতে নেপালের ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণটাই আমূল বদলে গিয়েছে । অন্তত ভারতের সঙ্গে নেপালের সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী বিচার করলে ।”

নেপালে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে এবং কাঠমাণ্ডু থেকে তিব্বতের কেরাং পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে চিন বিনিয়োগ শুরু করেছে । আর এই সবই হচ্ছে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের নিজস্ব ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর (BRI) আওতায় ।

অন্যদিকে 2015 সালে অর্থনৈতিক অবরোধের ঘটনার প্রেক্ষিতে (যেখানে কাঠমাণ্ডুর অভিযোগ ছিল, এর পিছনে দিল্লির হাত রয়েছে) হিমালয়ের এই দেশে ভারত-বিরোধী আবেগ এখনও তীব্র রয়েছে ।

ওলি সরকার এই আবেগকে অস্ত্র করেই ক্ষমতা দখল করেছে । তা সে যতই ভারত নেপালের অগ্রগতির পথে সহযোগিতাকারী বৃহত্তম দেশ হোক না কেন । কিংবা দুই দেশের মধ্যে যতই মানুষে-মানুষে এবং সাংস্কৃতিক বন্ধনে কয়েক শতক পুরোনো সম্পর্ক থাকুক না কেন!

(প্রতিবেদনটি লিখেছেন অরুণিম ভুইঞাঁ)

For All Latest Updates

ABOUT THE AUTHOR

...view details