দিল্লি : নেপালের ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (NCP) আরও কয়েকজন সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সরকার চালানোর কৌশল নিয়ে । আর তাতেই স্পষ্ট হয়ে গেল, আগামী দিনগুলিতে হিমালয়ের দেশের এই প্রধানমন্ত্রীর সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে আছে ।
যদিও বুধবার কাঠমাণ্ডুতে চলতি স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে শুধুমাত্র পাঁচজন সদস্যই এ নিয়ে কথা বলেছেন । তবুও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এঁদের সকলেই প্রধানমন্ত্রী পদে ওলির স্থায়িত্ব নিয়ে নিজেদের অভিযোগ-আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন । সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অন্তত তাই বলছে ।
দা কাঠমাণ্ডু পোস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, তিন জন নেতা–পেশল খাতিওয়াড়া, মাতৃকা যাদব এবং লীলামণি পোখরেল ওলির ইস্তফা দাবি করেছেন । আর বাকি দু’জন নন্দা কুমার প্রাসিন এবং যোগেশ ভট্টরাই আবেদন করেছেন, ওলি যেন সরকার চালানোর কৌশল সংশোধন করেন ।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বৈঠকটি আয়োজিত হয়েছিল। তবে তিন সদস্যের মন্তব্যের পর বৈঠক স্থগিত হয়ে যায় । বৃহস্পতিবার 11টায় তা ফের শুরুর কথা ছিল ।
ওলির কার্যকলাপ, যাকে চিনপন্থী বলেই দেখা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-নেপাল সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে ।
গত মাসে ওলির উদ্যোগেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে দেশের নতুন একটি রাজনৈতিক মানচিত্র পাশ হয়েছিল । যেখানে কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরাকে নেপালের অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছিল । যা আদপে ভারতের অধিকৃত এলাকার মধ্যে পড়ে । প্রসঙ্গত তার আগেই মে মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং লিপুলেখ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি সড়কপথের সূচনা করেছিলেন । কৈলাস মানস সরোবরের উদ্দেশে যাত্রাকারী পুণ্যার্থীদের জন্যই এই সড়কপথ তৈরি হয় ।
ওলির পদক্ষেপের পরই ভারতের তরফে কড়া প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয় । বিদেশ মন্ত্রক জানায়, এই পদক্ষেপ অসমর্থনযোগ্য ।
তারপর রবিবার ওলি অভিযোগ করেন, ভারত তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে ।
শনিবার কাঠমাণ্ডুতে এক অনুষ্ঠানে ওলি বলেছিলেন, “সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আমার অবস্থানের জন্য দিল্লির উঠেপড়ে লাগা, নেপালে এক শ্রেণির মানুষের রাজনীতি এবং এই দুইয়ের আঁতাতে আমার পদ যেতে বসেছে । কিন্তু এমন ভাবার কোনও কারণ নেই যে এই অপচেষ্টায় তারা সফল হবে ।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশে কোভিড-19 পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁর ব্যর্থতার জন্যই বিরোধীরা ছাড়াও নিজের দল NCP-তেই ওলি সমালোচিত হয়েছিলেন । আর সেই সব কিছু থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতেই ওলি এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন ।
মঙ্গলবার, স্ট্যান্ডিং কমিটির একটি বৈঠকে NCP-র সহকারী চেয়ারম্যান এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কুমার দহল (প্রচণ্ড) এবং শীর্ষ নেতা যেমন মাধবকুমার নেপাল, ঝালা নাথ খানাল, বামদেব গৌতম এবং নারায়ণ কাজি শ্রেষ্ঠাসহ আরও 11 জন প্রধানমন্ত্রী পদে ওলির পদত্যাগ দাবি করেন ।
বুধবারের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকের পর কাঠমাণ্ডুর রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ হরি রোকা ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন, ওলি তাঁর নিজের দলেই বর্তমানে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন । কারণ 45 জন সদস্যের কমিটির মাত্র 15 জনই তাঁকে সমর্থন করছেন ।