দিল্লি, 8 অগাস্ট : দীর্ঘদিন ধরে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ উন্নয়নের পাদপ্রদীপ থেকে বঞ্চিত ছিল ৷ সংবিধানের 370 ধারা প্রত্যাহারের ফলে সেখানে উন্নয়নের আলো ছড়িয়ে পড়বে ৷ দেশবাসীকে এক নতুন জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷
5 অগাস্ট (সোমবার) জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সংবিধানের 370 ধারা প্রত্যাহার করা হয় ৷ 370 ধারার এক নম্বর উপধারার প্রয়োগ করে জম্মু ও কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহারের নির্দেশিকায় সই করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৷ পরে রাজ্যসভায় জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ তাতে ছিল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রস্তাব ৷ বিরোধীদের হই-হট্টগোল সত্ত্বেও সংসদের উচ্চকক্ষে বিলটি পাশ করাতে সরকারকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি ৷ পরদিন লোকসভাতেও সহজেই বিলটি পাশ হয়ে যায় ৷ বিষয়টি নিয়ে টুইটারে প্রতিক্রিয়া দেন প্রধানমন্ত্রী ৷
এরপর আজ জাতিব উদ্দেশে ভাষণ দেন নরেন্দ্র মোদি ৷ তাঁর ভাষণের পুরোটা জুড়েই ছিল 370 ধারা প্রত্যাহার ও জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের উন্নয়ন ৷ 370 ধারা প্রত্যাহারের ফলে জম্মু ও কাশ্মীরে এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তাঁর কথায়, "370 ধারা প্রত্যাহারের মাধ্যমে দেশ এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য নতুন শুরু ৷ "
370 ধারার কারণে সে রাজ্যের মানুষকে কী ভাবে বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে, বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে, তা বলেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "370 ধারার কারণে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের লোকেদের ক্ষতি হচ্ছিল ৷ লোকের জীবনে কী লাভ হয়েছে লোক বলতে পারতেন না ৷ তাঁরা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন ৷ প্রায় 42 হাজার নির্দোষের মানুষের মৃত্যু হয়েছে ৷ আগের সরকারগুলি আইন বানিয়ে প্রশংসা নিত ৷ কিন্তু, তারাও দাবি করতে পারত না, জম্মু ও কাশ্মীরেও সেই আইন লাগু হবে ৷ দেশের দেড় কোটি মানুষ বঞ্চিত হতেন ৷ বাচ্চাদের কী দোষ? দেশের অন্য রাজ্যে মেয়েরা যে অধিকার পেতেন, জম্মু ও কাশ্মীরের মেয়েরা সেই অধিকার পেতেন না ৷ জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল ৷ এখন সেখানকার মানুষের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ৷ দেশের অন্য রাজ্য দলিত, সংখ্যালঘুদের রক্ষার্থে আইন ছিল ৷ তা জম্মু ও কাশ্মীরে ছিল না ৷ দেশের অন্য রাজ্যে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত ছিল ৷ কিন্তু, জম্মু ও কাশ্মীরে তা কিছু কাগজ থেকে ঝুলত ৷ 370 ও 35 A বিলোপের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে ৷" তিনি আরও বলেন, "দেশের গণতন্ত্র অত্যন্ত মজবুত ৷ কিন্তু, সেখানকার মানুষ বিধানসভা ও পঞ্চায়েতে ভোট দিতে পারতেন না ৷ লড়াই করতে পারতেন না ৷ তাঁরা দেশভাগের পর পাকিস্তান থেকে এদেশে এসেছিলেন ৷ এদের সঙ্গে কি অন্যায় চলতে থাকত? "
370 ধারা প্রত্যাহারের আগে থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে ৷ কিছু এলাকায় 144 ধারা জারি করা হয়েছিল ৷ এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "370 ধারা থেকে মুক্তি একটি সত্য ৷ ইতিহাসের জন্য কিছু পদক্ষেপ করা উচিত ছিল, তা সেখানকার মানুষ মেনে নিয়ে সেই সমস্যার মুখোমুখি করছেন ৷ ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন ৷ যারা সেখানে ঝামেলার চেষ্টা করছে তাদের সেখানকার লোকেরাই বোঝাচ্ছেন ৷ ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে ৷"
"শান্তি ও সমৃদ্ধিশীল জম্মু-কাশ্মীর বানাব, এটা আমাদের স্বপ্ন ৷" বললেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী বলেন, 370 ধারা প্রত্যাহারের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের যুবসমাজের কাছে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল ৷ তিনি বলেন, "জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের স্থানীয় যুবকরা রোজগারের সুযোগ পাবে ৷ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সেখানে শিল্প গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করা হবে ৷ " আর প্রযুক্তি যে ভারতের নতুন দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাও ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "এখানের যুবসমাজ তেজস্বী ৷ যত প্রযুক্তির উন্নতি হবে, তত জীবিকার সুযোগ বাড়বে ৷ প্রযুক্তির সঙ্গে যারা যুক্ত তাঁদের কাছে আর্জি, কী ভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রযুক্তির উন্নতি করা হয় তা ভাবনাচিন্তা করে দেখুন ৷" জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের উন্নয়নের জন্য সাধারণ মানুষ, যুবসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "নিজের এলাকার বিকাশে এগিয়ে আসুন ৷" জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের সামনে পর্যটনের সুযোগ রয়েছে ৷ তিনি বলেন, "জম্মু ও কাশ্মীরের পৃথিবীর সবথেকে বড় পর্যটনকেন্দ্র হওয়ার সুযোগ রয়েছে ৷ সেজন্য দেশের প্রতিটি মানুষের সাহায্য চাই ৷ পৃথিবীর স্বর্গকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়ে বিশ্বের দরবারে নাম তুলবে ৷ "
জম্মু ও কাশ্মীরকে পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্তেরও ব্যাখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "অনেক ভেবেচিন্তে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়েছে ৷ জম্মু ও কাশ্মীর থেকে যখন থেকে রাজ্যপালের শাসনে রয়েছে, তখন থেকে তার কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ৷ এর ফলে, সেখানে ভালো প্রশাসন রয়েছে ৷ ভালো কাজ হয়েছে ৷ দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা প্রকল্প শুরু হয়েছে ৷ কার্য প্রথায় নতুন উদ্যোগ আনার চেষ্টা করেছি ৷ ITI, অ্যান্টি করাপশন বিওরো হয়েছে ৷ এয়ারপোর্টের আধুনিকীকরণ, রেলের উন্নতির কাজ শুরু হয়েছে ৷ " স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে জম্মু ও কাশ্মীরকে পুনরায় রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হতে পারে ৷ আজ একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তাঁর মন্তব্য, "আমার মনে হয় না, জম্মু ও কাশ্মীরে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে রাখতে হবে ৷ লাদাখকে রাখতে হবে ৷ লাদাখের উন্নয়নের দায়িত্ব এখন কেন্দ্রের ৷ জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে তাঁদের সুখ-দুঃখ, সমস্যা আমাদের সকলের ৷ জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের মানুষের চিন্তা আমাদের সবার চিন্তা ৷ "
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমা পেলেও জম্মু ও কাশ্মীরের মূল রাজনৈতিক কাঠামোয় কোনও পরিবর্তন হবে না ৷ তিনি বলেন, "আপনাদের জনপ্রতিনিধি আপনাদের দ্বারাই, আপনাদের মধ্যে থেকেই হবে ৷ আগের মতো ক্যাবিনেট হবে, বিধায়ক হবে, মুখ্যমন্ত্রী হবে ৷ জম্মু ও কাশ্মীরের জনতা গুড গর্ভনেন্সের সঙ্গে নিজের লক্ষ্যকে পার করবে ৷ জম্মু ও কাশ্মীরে ভোট হবে ৷ আমি জম্মু ও কাশ্মীরকে ভরসা দিচ্ছি, শান্তির বাতাবরণে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ মিলবে ৷ " তাঁর অভিযোগ, দশকের পর দশক ধরে পরিবারতন্ত্র জম্মু ও কাশ্মীরের যুব সমাজকে নেতৃত্বের সুযোগ দেননি ৷ এখন তাঁরা উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবেন ৷ নতুন উচ্চতা দেবেন ৷
সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে রুখতে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের বলিদানের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "পাকিস্তানের সন্ত্রাস আটকাতে সেখানকার দেশভক্তরাই কাজ করছেন ৷ জম্মু ও কাশ্মীর আমাদের দেশের মুকুট, গর্ব ৷ তা রক্ষার্থে সেখানকার বীর ছেলেমেয়ে শহিদ হয়েছেন ৷ পুঞ্চের মৌলবি গুলাবদিন 1965 সালে পাকিস্তানের অনুপ্রবেশের খবর দিয়েছিলেন ৷ লাদাখের কর্নেল সোনম ওয়াংঞ্চু শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করেছেন ৷ রাজৌরির রুকসামা কউসর বড় এক সন্ত্রাসবাদীকে মেরেছিলেন ৷" পাশাপাশি, দেশের অন্য প্রান্তে বীর জওয়ানদেরও প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের মানুষের জন্য মোতায়েন সেনা, পুলিশ, প্রশাসনের লোকেরা যেভাবে পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন তা প্রশংসনীয় ৷ এটাই আমার বিশ্বাস বাড়িয়েছে, পরিবর্তনের ভরসা জুগিয়েছে ৷ " তাঁর আশ্বাস, "জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে উচ্ছেদ করব ৷ "
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে উচ্ছেদ করব ৷ আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর ৷ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, 370 ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জম্মু ও কাশ্মীর সহ সারা ভারতের আর্থিক উন্নতিতে সাহায্য করবে ৷ দেশের মানুষকে আহ্বান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "শান্তি ও সমৃদ্ধিশীল জম্মু-কাশ্মীর বানাব, এটা আমাদের স্বপ্ন ৷ সবাই মিলে দেখিয়ে দিই, জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের সামর্থ্য কতটা ৷ নতুন জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের নির্মাণ করব ৷ "
