পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

মারা গেছে আট মাসের সন্তান, ফোনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ভিনরাজ্যের শ্রমিক - লকডাউন

ফোনে কার সঙ্গে যেন কাঁদতে কাঁদতে কথা বলছেন । বার বার বলছেন, বাবা হিসেবে তিনি কতটা ব্যর্থ । তাই তো আট মাসের সন্তানের শেষ দিনেও তিনি কাছে নেই । শেষবারের মতো কোলে তুলে নিতে পারছেন না নিজের অংশটাকে । আসলে এই "বাবা"-র আরও একটা পরিচয় রয়েছে । সেটা হল তিনি ভিনরাজ্যের শ্রমিক । নাম রাম পুকার ।

Migrant Labourer breaks down
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিযায়ী শ্রমিক

By

Published : May 16, 2020, 10:38 AM IST

গাজ়িয়াবাদ, 16 মে : নাগাড়ে কেঁদে চলেছেন । আর ফোনটা কানে নিয়ে কার সঙ্গে যেন কথা বলছেন । বার বার বলছেন, বাবা হিসেবে তিনি কতটা ব্যর্থ । তাই তো আট মাসের সন্তানের শেষ দিনেও তিনি কাছে নেই । শেষবারের মতো কোলে তুলে নিতে পারছেন না নিজের অংশটাকে ।

আসলে এই "বাবা"-র আরও একটা পরিচয় রয়েছে । সেটা হল তিনি ভিনরাজ্যের শ্রমিক । নাম রাম পুকার । নিজের সন্তান ও পরিবারকে দুধে-ভাতে রাখবেন বলেই শ্রমিকের কাজের জন্য বিহারের বেগুসরাই থেকে দিল্লির নওয়ারায় এসেছিলেন । কিন্তু বুঝতে পারেননি এই প্রবাসে এসে এমন আটকা পড়ে যাবেন যে, নিজের আট মাসের সন্তানের শেষ দিনেও তাকে দেখার ভাগ্য হবে না । বুঝতে পারেননি সন্তানকে ভালো রাখার জন্য তার সব প্রচেষ্টা এই লকডাউনের জন্য ব্যর্থ হয়ে যাবে । এই প্রবাসে অসহায় হয়ে পড়বেন তিনি ।

লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর আর পাঁচজন শ্রমিকের মতো রাম পুকারেরও থাকা, খাওয়া, অর্থের সংকট দেখা দিয়েছিল । কিন্তু নিজের সমস্ত আবেগ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন । এই সবকিছুর বাঁধ ভাঙে একটা ফোনে । জানানো হয়, তাঁর আট মাসের ফুটফুটে পুত্রসন্তান আর নেই । তখনই একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন রাম পুকার । স্থির করেন হেঁটেই দিল্লি থেকে বিহারের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি । পরিকল্পনামতোই হাঁটতে শুরু করেন । দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমান্তের কাছে তাঁকে বাধা দেয় পুলিশ । জানায়, এইভাবে হাঁটা যাবে না । বাধ্য হয়ে গাজ়িয়াপুর উড়ালপুলের নিচে আশ্রয় নেন । না খেয়ে তিনদিন সেখানেই বসে থাকেন রাম পুকার । তখনই আর একটা ফোন আসে । পরিবারের তরফে ফোনটা করা হয়েছিল রাম পুকারকে । একদিকে খিদের টান । অন্যদিকে আট মাসের সন্তানকে হারানোর বেদনা । নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেনি । ফোনেই অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন । কাঁদতে কাঁদতে জানান, কতটা অসহায় তিনি ।

রাম পুকারকে এরকম অসহায়ভাবে কাঁদতে দেখে সাহায্যের জন্য প্রথমে হাতটা বাড়ান দিল্লি পুলিশের এক কন্সটেবল । তাঁর পরিস্থিতি পূর্ব দিল্লির জেলাশাসককে জানান । রাম পুকারের এই অবস্থার কথা শুনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনিও । তারপর ট্রেনের টিকিট কেটে দেন রাম পুকারকে । বেগুসরাইয়ে নিজের বাড়িতে যাতে রাম পুকার পৌঁছাতে পারেন তার ব্যবস্থা করেন । এই একজন রাম পুকার সাহায্য পাওয়ায় কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ? আসলে এরকম অনেক রাম পুকার আছেন যাঁরা কোনও না কোনও উড়ালপুলের তলায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন । বাড়ি ফেরার আশায় দিন গুনছেন । অপেক্ষায় রয়েছেন পরিজনদের কাছে টেনে নেওয়ার । কিন্তু এই অপেক্ষার শেষ কবে ? কোথায় ? উত্তর জানা নেই কারও ।

For All Latest Updates

ABOUT THE AUTHOR

...view details