মধ্যপ্রদেশ, 28 মার্চ : দিনটা ছিল 23 মার্চের রাত । একদিকে বাকি দেশ যখন কোরোনা সঙ্কটে মনঃসংযোগ করেছে, তখন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন শিবরাজ সিংহ চৌহান । রাজভবনে একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল লালজি ট্যান্ডন । পরের দিন, আস্থা ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করেন, যে আস্থাভোট বয়কট করেন কংগ্রেস বিধায়করা । 15 মাসের ব্যবধানে, রেকর্ড গড়ে চতুর্থবার মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদে ফিরলেন চৌহান । এরই সঙ্গে এমন একটা রাজ্যের ক্ষমতা তাঁরা দখল করলেন, যেখানে বিধানসভা ভোটে তাঁরা হেরে গিয়েছিলেন ।
মধ্যপ্রদেশে রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু যখন বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া গত 10 মার্চ দলত্যাগ করেছিলেন । এরপরেই, সিন্ধিয়ার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কংগ্রেসের 6 মন্ত্রী সহ 22 জন বিধায়ক ইস্তফা দেন । অধ্যক্ষ, 6 জন মন্ত্রীর ইস্তফা গ্রহণ করলেও, বিধায়কদের ইস্তফা তখনই গ্রহণ করা হয়নি । বেশিরভাগ কংগ্রেস বিধায়ককে বেঙ্গালুরুতে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে, কংগ্রেসের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁদের BJP-র চাপে 'বন্দি' থাকতে হয় । খুব তাড়াতাড়িই মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল বিধানসভার অধ্যক্ষকে চিঠি লিখে 16 মার্চ ফ্লোর টেস্টের আয়োজন করতে বলেন । অধ্যক্ষ N P প্রজাপতি আস্থা ভোটে বিলম্ব করায়, BJP সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়, যাতে অধ্যক্ষকে দ্রুত ফ্লোর টেস্টের আয়োজন করার নির্দেশ দেওয়া হয় ।
19 মার্চ, বিচারপতি D Y চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ, দু'দিনের শুনানির পর নির্দেশ দেয়, যে পরের দিন অধ্যক্ষকে বিশেষ অধিবেশন ডেকে আস্থা ভোট করাতে হবে । ফ্লোর টেস্টের কয়েক ঘণ্টা আগে পদত্যাগ করেন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ । 22 জন বিধায়কের পদত্যাগের ফলে, গরিষ্ঠ সংখ্যাটা কমলনাথের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের দিকে ছিল না । মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার আসন সংখ্যা 230 (দু'জনে মৃত্যুর ফলে খালি হওয়া দুটি আসন সহ), যেখানে কংগ্রেসের ছিল 114 জন বিধায়ক (সপা, বসপা ও নির্দল মিলিতে 7 বিধায়কের অতিরিক্ত সমর্থন সহ ), আর BJP-র ছিল 107 জন বিধায়ক । যখন 22 জন বিধায়কের পদত্যাগের ফলে বিধানসভার শক্তি কমে 208 হয়ে গেল, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাপকাঠি হল 104, যা BJP-কে সরকার গঠনের দাবি পেশের সুযোগ করে দেয় ।
মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতিক অসত্যতা দলত্যাগ বিরোধী আইনকে পাশ কাটানোর একটি নতুন পদ্ধতি তুলে ধরে । সংবিধানের দশম তফশিল (যা দলত্যাগ বিরোধী আইন বলেই পরিচিত) আনা হয় 1985 সালে, সংবিধানের 52 তম সংশোধনের মধ্যে দিয়ে । তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রাজীব গাঁধী । এর উদ্দেশ্য ছিল সেই সময়কার " আয়া রাম গয়া রাম " রাজনীতির মোকাবিলা করা, যেখানে বিধায়করা এক দলের অন্য দলের দিকে নির্বিচারে ঝাঁপ দিতেন (হরিয়ানার বিধায়ক গয়া রামের নামে এই নামকরণ । তিনি একদিনে তিনবার তাঁর দল বদলে ছিলেন!)। দশম তফশিলে এমন সংস্থানও রয়েছে, যেখানে একজন জনপ্রতিনিধি অযোগ্য বলেও চিহ্নিত হতে পারেন । যেখানে বহু বছর ধরে রাজনৈতিক দলবদলকে রুখতে দলত্যাগ-বিরোধী আইনের উপযোগিতা প্রমাণ হয়েছে, সেখানে সম্প্রতি এই আইনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কৌশলও ব্যবহার করা হচ্ছে ।যেখানে একদল বিধায়ককে পদত্যাগ করিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমিয়ে, তারপর সরকার ফেলে দেওয়া হচ্ছে।