হায়দরাবাদ, 21 ফেব্রুয়ারি: সুপ্রিম কোর্ট একাধিকবার বলেছে যে কোনও ব্যক্তি যত উঁচু পদেই থাকুন না কেন, তাঁর থেকেও উপরে হল আমাদের দেশের সংবিধান ও আইন ৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এই সতর্কবাণীর পরেও অন্ধ্রপ্রদেশে যা হচ্ছে, তা কার্যত একনায়কতন্ত্রেরই নামান্তর । রাজ্যের রাজধানী অমরাবতীর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প আচমকাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । জগনমোহন রেড্ডি সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিস্মিত করেছে সংশ্লিষ্ট মহলকে । সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে অমরাবতীর উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধের লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে জগনমোহন সরকার ৷
অমরাবতী প্রকল্পের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেল - Andhra pradesh
শাসকদলের যুক্তি হল, অমরাবতী বন্যাপ্রবণ এলাকা এবং সেখানে মাটির মান ভালো নয় । তাই ওই এলাকায় নির্মাণকাজে অন্যান্য জায়গার তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে । সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর অভিযোগ, অমরাবতীতে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজে 'অভ্যন্তরীণ লেনদেন' অর্থাৎ ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে দুর্নীতি হচ্ছে ।
বিধানসভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দাবি করা হয়েছে, 'গত পাঁচ বছর ধরে নয় বরং ১০০ বছর ধরে যে ভুল করা হচ্ছিল, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তা সংশোধনের চেষ্টা হয়েছে ।' এতে আরও বলা হয়েছে, 'এই সিদ্ধান্তে অমরাবতীর সঙ্গে কোনও অন্যায় করা হচ্ছে না । বরং রাজ্যের অন্য যে সমস্ত এলাকার সঙ্গে অবিচার করা হচ্ছিল, তা সংশোধন করা হচ্ছে ।' বিষয়টির শেষ এখানেই নয় । নতুন গঠিত রাজ্যের রাজধানী হিসেবে অমরাবতীকে গড়ে তোলার জন্য যে স্বপ্নের প্রকল্প শুরু হয়েছিল, তার জন্য রাজ্যের অনেক কৃষক জমি দান করেছিলেন । স্বেচ্ছায় দেওয়া সেই জমির মোট পরিমাণ ৩৪ হাজার একর । আন্দোলনরত সেই কৃষকদের উপরে পুলিশ কিছুদিন আগে নির্বিচারে লাঠিচার্জ করেছে । হাস্যকর বিষয় এটাই যে, অমরাবতী প্রকল্পের কথা মাথায় রেখে কৃষকদের দান করা জমির উপর তৈরি হয়েছিল রাজ্যের নতুন বিধানসভা । কিন্তু পরবর্তীতে সেই বিধানসভাতেই অমরাবতী প্রকল্প স্তব্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল । এই প্রকল্প নিয়ে কৃষকরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন ৷ কিন্তু বিধানসভায় গৃহীত এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেই সমস্ত কৃষকদের আশা-আকাঙ্খার মৃত্যু পরোয়ানায় কার্যত স্বাক্ষর করা হল বলা যেতে পারে ।
শাসকদলের যুক্তি হল, অমরাবতী বন্যাপ্রবণ এলাকা এবং সেখানে মাটির মান ভালো নয় । তাই ওই এলাকায় নির্মাণকাজে অন্যান্য জায়গার তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে । সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর অভিযোগ, অমরাবতীতে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজে 'অভ্যন্তরীণ লেনদেন' অর্থাৎ ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে দুর্নীতি হচ্ছে । মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডির বক্তব্য, 'গোটা বিষয়টিতে (অমরাবতী প্রকল্প) নতুন করে চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে । দক্ষিণ আফ্রিকার মতো অন্ধ্রপ্রদেশেও প্রশাসন, বিধানসভা ও আইনবিভাগের জন্য তিনটি আলাদা রাজধানী প্রয়োজন ।' মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে বেদবাক্য বলে মেনে নিয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি বস্টন কনসালটেন্সি গ্রুপ । প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়েছে । অতএব এই অঞ্চলে সুসংহত প্রকল্পের নামে বিকেন্দ্রীকরণের কাজে আর কোনও বাধাই থাকল না । প্রশাসনের অঙ্গুলিহেলনে অমরাবতী প্রকল্পের শৈশবেই অপমৃত্যু ঘটল ৷