অনুচ্ছেদ 370 তুলে নেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার বদলে বাস্তব পরিস্থিতি বলছে যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর মারাত্মক রাজস্ব হারের সমস্যায় ভুগছে এবং গত এক বছরে সেখানে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ 2019 সালের 5 অগাস্ট কেন্দ্র ঐতিহাসিক জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল, 2019 সংসদে পাস করায় ৷ ফলে, সেখানকার বিশেষ মর্যাদা ও একই সঙ্গে রাজ্যের তকমা তুলে নেওয়া হয় ৷ রাজ্যসভায় অনুচ্ছেদ 370-এর অবলুপ্তির কথা ঘোষণা করার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীর হল ভারতের মুকুট-মণি (মুকুটে থাকা রত্ন) ৷ আমাদের পাঁচ বছর সময় দিন ৷ আমরা এই রাজ্যকে দেশের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত রাজ্যে পরিণত করব ৷’’
তার পর থেকে এক বছর কেটে গেল ৷ এই রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভালো নয়, যতটা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ৷ ঘটনা হল, এই রাজ্যের বাসিন্দারা মনে করেন এটার মান আরও নেমে গিয়েছে ৷ বাস্তব পরিস্থিতি বলছে যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (UT) জম্মু ও কাশ্মীর মারাত্মক রাজস্ব হারের সমস্যায় ভুগছে এবং গত এক বছরে সেখানে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৷
শিল্প বিপদে রয়েছে
শেখ আসিক আহমেদ, কাশ্মীর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (KCCI)-র সভাপতি ETV Bharat-এর সঙ্গে কথা বলার সময় জানান যে সরকারের দমন নীতি এবং COVID-19 প্যানডেমিকের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের গত এক বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ৷ স্মৃতি হাতড়ে তিনি জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীর লকডাউন ও সাধারণ মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ প্রত্যক্ষ করা শুরু করে গত বছর অনুচ্ছেদ 370 ও 35এ তুলে নেওয়ার পর থেকে ৷ যা চলেছিল প্রায় সাত মাস ৷ এরপর 2020 সালের মার্চ মাস থেকে শুরু হয়ে যায় কোরোনা ভাইরাসের জেরে চালু হওয়া লকডাউন ৷ আহমেদ জানান যে কাশ্মীরের অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতির জেরে বড় ও ছোটো ব্যবসায়িক সংস্থাগুলি কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে ৷ তার জেরে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৷
জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ইকোনমিক কনফেডারেশনের কো-কনভেনর আরবার আহমেদ খান ETV Bharat-কে বলেন, ‘‘পরিবহন ও পর্যটন-সহ সমস্ত ব্যবসায়িক ক্ষেত্র 12 মাসের লকডাউনের জন্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ এই ধুঁকতে থাকা অর্থনৈতিক অবস্থা ও বৃদ্ধি পেতে থাকা বেকারত্বের জন্য প্রত্যেকেই মারাত্মক সমস্যার মুখে পড়ছেন ৷’’ তাৎপর্যপূর্ণভাবে আতিথেয়তা ও পর্যটন শিল্পের তরফে অনুচ্ছেদ 370 তুলে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছিল ৷ কারণ, তারা ভেবেছিল নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে গেলে এই শিল্পের লাভ হবে ৷ কিন্তু এই দীর্ঘায়িত লকডাউন তাদের সব আশায় জল ঢেলে দিয়েছে ৷ উল্লেখ্য, এই শিল্প রাজ্যকে GDP-এর ১৫ শতাংশ দেয় ৷
আবদুল রশিদ, হাউজবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি বলেন, ‘‘গত এক বছরে আমাদের হাউজবোট শিল্প ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ৷" বেসরকারি বিনিয়োগের অবস্থা এখনও খারাপ জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে যুক্ত করার পদক্ষেপে এই রাজ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ হবে বলে আশা করা হচ্ছিল ৷ ঘটনাচক্রে গত বছর নভেম্বরের প্রথম পনেরো দিনে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছিল ৷ যাতে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শিল্পস্থাপনের জন্য বিনিয়োগকারীরা আকর্ষিত হয় ৷ ‘বড় ঘটনা’ শীঘ্রই ঘটবে এমন একটা পরিস্থিতিও তৈরি করা হয়েছিল ৷ পরে প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট করা হয় যে ওই ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীর গ্লোবাল ইনভেস্টরস সামিট ২০২০-র জন্য ৷ যা 2020 সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ৷ জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবিন্দর কুমার বলেন, ‘‘আমরা জমি চিহ্নিত করছিলাম, যা শিল্প তৈরির জন্য কাজে লাগতে পারে ৷ জম্মু ও কাশ্মীরকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে পরিণত করার বিষয়টি প্রমাণ করবে ওই সম্মেলন ৷’’