ভারত তারুণ্যের দেশ
বিশ্বে আমাদের দেশকে তারুণ্যের দেশ বলা হয় । এদেশে 35 বছর বয়স পর্যন্ত 65 কোটি যুবক রয়েছেন । এর অর্থ, আমাদের দেশে লোকবল রয়েছে, শুধু তাদের যথাযথভাবে পরিচালনা করতে হবে । এমন পরিস্থিতিতে সমাজের উন্নয়নের স্বার্থে যুব সমাজের জন্য সুশিক্ষা ও নানান সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে । বিশ্বের উন্নত দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে, দেশ গঠনের জন্য এবং দেশের অগ্রগতির জন্য যুব সমাজকে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে ।
আন্তর্জাতিক যুব দিবসের ইতিহাস
1999 সালের 17 ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়, আজকের দিনটি আন্তর্জাতিক যুব দিবস হিসেবে পালন করা হবে । এরপর 2000 সালে প্রথমবারের জন্য আজকের দিনে আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত হয় ।
আন্তর্জাতিক যুব দিবসটি কীভাবে পালিত হয়
রাষ্ট্রসংঘ প্রতিবছর আন্তর্জাতিক যুব দিবসের জন্য একটি করে থিম বেছে নেয় । বিশ্বজুড়ে যুব দিবস উপলক্ষ্যে নানান অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় । সাধারণত প্যারেড, কনসার্ট, মেলা, উত্সব, প্রদর্শনী ইত্যাদির আয়োজন করা হয় । যুব দিবসে নানান বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে রাষ্ট্রসংঘ । এই দিনে শিক্ষামূলক রেডিয়ো অনুষ্ঠান বা আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয় ।
আন্তর্জাতিক যুব দিবস 2020-র বার্তা
যুব দিবসে রাষ্ট্রসংঘের এবারের থিম "ইয়ুথ এনগেজমেন্ট ফর গ্লোবাল অ্যাকশন" । কীভাবে স্থানীয়স্তরে, জাতীয়স্তরে এবং বিশ্বে যুব সমাজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সমৃদ্ধ করছে তা এই থিমের লক্ষ্য ।
আন্তর্জাতিক যুব দিবস 2020-র লক্ষ্য হল, গ্লোবাল অ্যাকশন অর্জনে যুব সমাজকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে । তাদের এই বিষয়টিতে আরও বেশি করে নিয়োজিত করতে হবে । যুব সমাজের কর্মদক্ষতাকে আরও শক্তিশালী করে গ্লোবাল অ্যাকশন অর্জনের লক্ষ্য রাখা হয়েছে । যে তিনটি উপায়ে যুব সমাজের কর্মদক্ষতা কাজে লাগানো হবে সেগুলি হল -
- স্থানীয় বা গোষ্ঠীস্তরে যুবদের নিযুক্ত করা
- আইন প্রণয়ন, নীতি এবং তাদের বাস্তবায়ন করতে যুবদের নিযুক্ত করতে হবে
- বিশ্বস্তরে যুব সমাজকে নিযুক্ত করা
সোশাল মিডিয়া প্রচার -
#31ডেজ়অফইউথ নামে একটি সোশাল মিডিয়া প্রচার শুরু হয়েছে । যা চলবে অগাস্ট মাসজুড়ে ।
ভারতীয় যুব সমাজে COVID-১৯-এর প্রভাব
দেশব্যাপী লকডাউন ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও ভারতে বেকারত্বের হার ক্রমাগত বাড়ছে । সেন্টার ফর ইন্ডিয়ান ইকোনমি (CMIE)-র মতে, 17 মে পর্যন্ত ভারতে মোট বেকারত্বের হার ছিল 24 শতাংশ । তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই 24 শতাংশ বেকারত্ব এপ্রিলের শেষেও ছিল । ফলে মে মাসে লকডাউন শিথিল হলেও বেকারত্বের হারে কোনও প্রভাব পড়েনি ।
CMIE-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে বেকারত্বের সংখ্যাও দ্রুত বেড়েছে । 21 মার্চ ভারতে বেকারত্বের হার ছিল 7.4 শতাংশ । যা 5 মে বেড়ে দাঁড়িয়েছে 25.5 শতাংশ । সমীক্ষা অনুযায়ী, 20 থেকে 30 বছর বয়সী 2 কোটি 70 লাখ যুবক-যুবতী এপ্রিলে চাকরি হারিয়েছে । লকডাউনের কারণে ভারতের শহুরে বেকারত্বের হার 30.9 শতাংশ বাড়তে পারে ।
যুব সমাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ
প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা : 2015 সালে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা শুরু হয় । 2020 সালের মধ্যে এক কোটি মানুষকে ওর আওতায় আনার লক্ষ্যে 2016 সালে সংস্কার করা হয় । সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 2016 থেকে 2020 সাল পর্যন্ত 73 লাখ 47 হাজার প্রধানমন্ত্রীর কৌশল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হাজার হাজার যুবক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন । এই যুবকদের মধ্যে 16 লাখ 61 হাজার যুবককে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে 137 টি বিভিন্ন ব্যবসায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে ।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার আওতায় ব্যবসা শুরু করার জন্য সরকার স্বল্প হারে ঋণ সরবরাহ করে । এই প্রকল্পে, শিশু, কিশোর এবং তরুণ : তিনটি বিভাগে ঋণ দেওয়া হয় । মুদ্রা প্রকল্পের আওতায় 50 হাজার থেকে 10 লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায় । শিশু ঋণের অধীনে 50,000 টাকা পর্যন্ত ঋণ উপলব্ধ । একই সঙ্গে 50 হাজার থেকে 5 লাখ টাকা পর্যন্ত কিশোর ঋণের আওতায় এবং 5 লাখ থেকে 10 লাখ টাকা তরুন ঋণের আওতায় দেওয়া হয় । সরকারের উচ্চাভিলাষী মুদ্রা যোজনার আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় 11 কোটি লোক উপকৃত হয়েছে ।
স্কিল ইন্ডিয়া মিশন
দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সেক্টর এবং রাজ্যগুলিতে একত্রিত করার লক্ষ্যে মিশনটি তৈরি করা হয়েছে । এছাড়া, স্কিল ইন্ডিয়া মিশন কেবল দক্ষতার প্রচেষ্টাকে একীকরণ ও সমন্বিত করার পাশাপাশি গতি এবং মানদণ্ডকে ত্বরান্বিত করবে । স্কিল ইন্ডিয়া মিশনের PMKVY-এর আওতায় সারাদেশে 699.03 লাখ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে । PMKVY-এর আওতায় 2020 সালের মধ্যে এক কোটি যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে । প্রশিক্ষিত যুবকদের মধ্যে 9,28,884 জন তপসিলি জাতি (SC) এবং 2,69,054 জন তফসিলি উপজাতি (ST) বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।
মেক ইন ইন্ডিয়া
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিনিয়োগ, উদ্ভাবন, দক্ষতা বিকাশ, বৌদ্ধিক সম্পদ রক্ষার লক্ষ্যে 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রচার শুরু করেছিলেন । 'মেক ইন ইন্ডিয়া'-র উৎপাদন, অবকাঠামো এবং পরিষেবা কার্যক্রমের 25 টি সেক্টর চিহ্নিত করেছে এবং ইন্টারেক্টিভ ওয়েব-পোর্টাল এবং পেশাদারভাবে বিকাশিত ব্রোশারের মাধ্যমে বিশদ তথ্য ভাগ করা হচ্ছে । প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে উৎপাদন, নির্মাণক্ষেত্রে বড় আকারে FDI খোলা হয়েছে ।
মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের অধীনে কয়েকটি বড় সাফল্য হ'ল:
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে ছয়টি শিল্প করিডোর তৈরি হচ্ছে । এই করিডোরগুলির পাশাপাশি শিল্প শহরগুলিও উঠে আসবে ।
ভারত বিদ্যুতের রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে ।