পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

আন্তর্জাতিক যুবদিবস : ভারতের যুবকেন্দ্রিক প্রকল্পগুলি একনজরে - ভারতের যুবকেন্দ্রিক প্রকল্পগুলি

2015 সালে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা শুরু হয় । 2020 সালের মধ্যে এক কোটি মানুষকে এর আওতায় আনার লক্ষ্যে 2016 সালে সংস্কার করা হয় । সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 2016 থেকে 2020 সাল পর্যন্ত 73 লাখ 47 হাজার প্রধানমন্ত্রীর কৌশল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হাজার হাজার যুবক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ।

আন্তর্জাতিক যুব দিবস
আন্তর্জাতিক যুব দিবস

By

Published : Aug 12, 2020, 11:38 PM IST

ভারত তারুণ্যের দেশ

বিশ্বে আমাদের দেশকে তারুণ্যের দেশ বলা হয় । এদেশে 35 বছর বয়স পর্যন্ত 65 কোটি যুবক রয়েছেন । এর অর্থ, আমাদের দেশে লোকবল রয়েছে, শুধু তাদের যথাযথভাবে পরিচালনা করতে হবে । এমন পরিস্থিতিতে সমাজের উন্নয়নের স্বার্থে যুব সমাজের জন্য সুশিক্ষা ও নানান সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে । বিশ্বের উন্নত দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে, দেশ গঠনের জন্য এবং দেশের অগ্রগতির জন্য যুব সমাজকে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে ।

আন্তর্জাতিক যুব দিবসের ইতিহাস

1999 সালের 17 ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়, আজকের দিনটি আন্তর্জাতিক যুব দিবস হিসেবে পালন করা হবে । এরপর 2000 সালে প্রথমবারের জন্য আজকের দিনে আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত হয় ।

আন্তর্জাতিক যুব দিবসটি কীভাবে পালিত হয়

রাষ্ট্রসংঘ প্রতিবছর আন্তর্জাতিক যুব দিবসের জন্য একটি করে থিম বেছে নেয় । বিশ্বজুড়ে যুব দিবস উপলক্ষ্যে নানান অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় । সাধারণত প্যারেড, কনসার্ট, মেলা, উত্সব, প্রদর্শনী ইত্যাদির আয়োজন করা হয় । যুব দিবসে নানান বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে রাষ্ট্রসংঘ । এই দিনে শিক্ষামূলক রেডিয়ো অনুষ্ঠান বা আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয় ।

আন্তর্জাতিক যুব দিবস 2020-র বার্তা

যুব দিবসে রাষ্ট্রসংঘের এবারের থিম "ইয়ুথ এনগেজমেন্ট ফর গ্লোবাল অ্যাকশন" । কীভাবে স্থানীয়স্তরে, জাতীয়স্তরে এবং বিশ্বে যুব সমাজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সমৃদ্ধ করছে তা এই থিমের লক্ষ্য ।

আন্তর্জাতিক যুব দিবস 2020-র লক্ষ্য হল, গ্লোবাল অ্যাকশন অর্জনে যুব সমাজকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে । তাদের এই বিষয়টিতে আরও বেশি করে নিয়োজিত করতে হবে । যুব সমাজের কর্মদক্ষতাকে আরও শক্তিশালী করে গ্লোবাল অ্যাকশন অর্জনের লক্ষ্য রাখা হয়েছে । যে তিনটি উপায়ে যুব সমাজের কর্মদক্ষতা কাজে লাগানো হবে সেগুলি হল -

  • স্থানীয় বা গোষ্ঠীস্তরে যুবদের নিযুক্ত করা
  • আইন প্রণয়ন, নীতি এবং তাদের বাস্তবায়ন করতে যুবদের নিযুক্ত করতে হবে
  • বিশ্বস্তরে যুব সমাজকে নিযুক্ত করা

সোশাল মিডিয়া প্রচার -

#31ডেজ়অফইউথ নামে একটি সোশাল মিডিয়া প্রচার শুরু হয়েছে । যা চলবে অগাস্ট মাসজুড়ে ।

ভারতীয় যুব সমাজে COVID-১৯-এর প্রভাব

দেশব্যাপী লকডাউন ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও ভারতে বেকারত্বের হার ক্রমাগত বাড়ছে । সেন্টার ফর ইন্ডিয়ান ইকোনমি (CMIE)-র মতে, 17 মে পর্যন্ত ভারতে মোট বেকারত্বের হার ছিল 24 শতাংশ । তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই 24 শতাংশ বেকারত্ব এপ্রিলের শেষেও ছিল । ফলে মে মাসে লকডাউন শিথিল হলেও বেকারত্বের হারে কোনও প্রভাব পড়েনি ।

CMIE-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে বেকারত্বের সংখ্যাও দ্রুত বেড়েছে । 21 মার্চ ভারতে বেকারত্বের হার ছিল 7.4 শতাংশ । যা 5 মে বেড়ে দাঁড়িয়েছে 25.5 শতাংশ । সমীক্ষা অনুযায়ী, 20 থেকে 30 বছর বয়সী 2 কোটি 70 লাখ যুবক-যুবতী এপ্রিলে চাকরি হারিয়েছে । লকডাউনের কারণে ভারতের শহুরে বেকারত্বের হার 30.9 শতাংশ বাড়তে পারে ।

যুব সমাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ

প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা : 2015 সালে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা শুরু হয় । 2020 সালের মধ্যে এক কোটি মানুষকে ওর আওতায় আনার লক্ষ্যে 2016 সালে সংস্কার করা হয় । সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 2016 থেকে 2020 সাল পর্যন্ত 73 লাখ 47 হাজার প্রধানমন্ত্রীর কৌশল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হাজার হাজার যুবক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন । এই যুবকদের মধ্যে 16 লাখ 61 হাজার যুবককে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে 137 টি বিভিন্ন ব্যবসায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে ।

প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা

প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার আওতায় ব্যবসা শুরু করার জন্য সরকার স্বল্প হারে ঋণ সরবরাহ করে । এই প্রকল্পে, শিশু, কিশোর এবং তরুণ : তিনটি বিভাগে ঋণ দেওয়া হয় । মুদ্রা প্রকল্পের আওতায় 50 হাজার থেকে 10 লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায় । শিশু ঋণের অধীনে 50,000 টাকা পর্যন্ত ঋণ উপলব্ধ । একই সঙ্গে 50 হাজার থেকে 5 লাখ টাকা পর্যন্ত কিশোর ঋণের আওতায় এবং 5 লাখ থেকে 10 লাখ টাকা তরুন ঋণের আওতায় দেওয়া হয় । সরকারের উচ্চাভিলাষী মুদ্রা যোজনার আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় 11 কোটি লোক উপকৃত হয়েছে ।

স্কিল ইন্ডিয়া মিশন

দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সেক্টর এবং রাজ্যগুলিতে একত্রিত করার লক্ষ্যে মিশনটি তৈরি করা হয়েছে । এছাড়া, স্কিল ইন্ডিয়া মিশন কেবল দক্ষতার প্রচেষ্টাকে একীকরণ ও সমন্বিত করার পাশাপাশি গতি এবং মানদণ্ডকে ত্বরান্বিত করবে । স্কিল ইন্ডিয়া মিশনের PMKVY-এর আওতায় সারাদেশে 699.03 লাখ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে । PMKVY-এর আওতায় 2020 সালের মধ্যে এক কোটি যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে । প্রশিক্ষিত যুবকদের মধ্যে 9,28,884 জন তপসিলি জাতি (SC) এবং 2,69,054 জন তফসিলি উপজাতি (ST) বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।

মেক ইন ইন্ডিয়া

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিনিয়োগ, উদ্ভাবন, দক্ষতা বিকাশ, বৌদ্ধিক সম্পদ রক্ষার লক্ষ্যে 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রচার শুরু করেছিলেন । 'মেক ইন ইন্ডিয়া'-র উৎপাদন, অবকাঠামো এবং পরিষেবা কার্যক্রমের 25 টি সেক্টর চিহ্নিত করেছে এবং ইন্টারেক্টিভ ওয়েব-পোর্টাল এবং পেশাদারভাবে বিকাশিত ব্রোশারের মাধ্যমে বিশদ তথ্য ভাগ করা হচ্ছে । প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে উৎপাদন, নির্মাণক্ষেত্রে বড় আকারে FDI খোলা হয়েছে ।

মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের অধীনে কয়েকটি বড় সাফল্য হ'ল:

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে ছয়টি শিল্প করিডোর তৈরি হচ্ছে । এই করিডোরগুলির পাশাপাশি শিল্প শহরগুলিও উঠে আসবে ।

ভারত বিদ্যুতের রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে ।

2017-18 সালের মধ্যে নেপাল, বাংলাদেশ ও মায়ানমারে রপ্তানি করা হয়েছে 7203 MU ।

2016 সালের 21 সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর বৃহত্তম 648 মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি চালু হয়েছিল ।

দুটি ডিজ়াইন ব্রেকিং প্রোটোটাইপ লোকোমোটিভসমূহ ডেস্কটপ WAGC 3 এবং WAG 1111 ক্লাসের যথাক্রমে 10,000 এবং 12,000 hp -এর ডিজ়েল লোকোমোটিভকে আপগ্রেড-ইলেট্রিক লোকোমোটিভে রূপান্তরিত করে দেশীয়ভাবে উন্নত করা হয় ।

এশিয়ার বৃহত্তম মেডটেক অঞ্চল (AMTZ) অন্ধ্র প্রদেশে স্থাপন করা হয়েছে ।

2014 সালের জুন মাস থেকে 2018 সালের অগাস্টের মধ্যে 88 টি কোল্ড চেইন প্রকল্প চালু করা হয়েছে । এর ফলে 3.9 লাখ টনের অতিরিক্ত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে ।

বরেলি, লখনউ এবং কচ্ছে তিনটি টেক্সটাইল মেগা ক্লাস্টার স্থাপন করা হচ্ছে, যার ফলে 14505 কারিগর উপকৃত হবেন ।

বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও

এই স্কিমের লক্ষ্য শিক্ষার মাধ্যমে মেয়েদের সামাজিক ও আর্থিকভাবে আত্মনির্ভর করা । বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও হল ভারত সরকারের একটি প্রকল্প, যার লক্ষ্য সচেতনতা তৈরি করা এবং ভারতে মেয়েদের দক্ষতা বাড়ানো । প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি 100 কোটি টাকা দিয়ে চালু করা হয়েছিল । 2014-15 সাল থেকে 2018-19 সাল পর্যন্ত বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পে সরকার মোট 648 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে । এর মধ্যে জেলা ও রাজ্যগুলিকে পাঠানো হয়েছে 159 কোটি টাকা । HMIS ও MoHFW-এর তথ্য অনুযায়ী, 2016-17 থেকে 2018-19 আর্থিক বছরের মধ্যে জাতীয় স্তরে জন্মকালে লিঙ্গের অনুপাত (SRB) 926 থেকে 931 এ উন্নীত হয়েছে ।

ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশন

ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রোগ্রাম ভারতকে ডিজিটাল দুনিয়ায় শক্তিশালী করতে এবং তা অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে ভারত সরকারের একটি প্রধান কর্মসূচি । জাতীয় অপটিকাল ফাইবার নেটওয়ার্ক (NOFN) প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে প্রায় 2,50,000 টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয় । এর মধ্যে 2020 সালের 24 জানুয়ারি পর্যন্ত মোট 134248 গ্রাম পঞ্চায়েতকে এই পরিষেবার জন্য তৈরি করা হয়েছে ।

স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া

স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ভারত সরকারের একটি প্রধান উদ্যোগ । এর মূল লক্ষ্য, ভারতে উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তাদের জন্য একটি শক্তিশালী পরিবেশ গড়ে তোলা । 2019 সালের 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত, 555 টি জেলার 26,804 টি স্টার্টআপ DPIIT দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে । 24,848 টি স্টার্টআপের মাধ্যনে 3, 06, 848 জনের কর্মসংস্থান হয়েছে । গড়ে প্রতি স্টার্টআপে 12 জন কর্মীর রয়েছে ।

ফিট ভারত আন্দোলন

জাতীয় ক্রীড়া দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি 'ফিট ইন্ডিয়া ক্যাম্পেইন' চালু করেছেন । এটি একটি দেশব্যাপী প্রচার অভিযান যাঁর লক্ষ্য মানুষকে তাঁদের প্রতিদিনের জীবনে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং খেলাধুলায় উৎসাহিত করা । UGC একটি চিঠি জারি করে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে 'ফিট ইন্ডিয়া আন্দোলনের' প্রস্তুতির জন্য জানান । সরকারি কর্মকর্তা, ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (IOA), জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন, বেসরকারি সংস্থা এবং ফিটনেস প্রোমোটারদের সমন্বয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল । ফিট ইন্ডিয়ার বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়াই ছিল এই কমিটির কাজ । পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, সরঞ্জাম সহায়তা, কোচ নিয়োগ, কোচদের প্রশিক্ষণ এবং বৃত্তিপ্রাপ্তদের জন্য 2019-20 অর্থবর্ষে 10.85 কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয় । কালারিপায়ত্তু, গাটকা এবং থাং-টা মিলিয়ে 335 জন পদকপ্রাপককে এক বছরের জন্য প্রতি মাসে 10 হাজার টাকা বৃত্তি দেওয়া হয় । NSF-এর পরামর্শ অনুযায়ী, 2019 সালের 1 অক্টোবর থেকে 185 জন অ্যাথলিট বৃত্তি পাচ্ছেন ।

10 জন যাঁরা গোটা বিশ্বের যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করেছেন

1. মালালা ইউসুফজ়াই (পাকিস্তানে নারীশিক্ষার জন্য কাজ করছেন )

2. গ্রেটা থানবার্গ ( পরিবেশ প্রেমী)

3. আনন্দ কুমার (গণিতবিদ)

4. অরণ্য জোহার (সোশাল মিডিয়ার সেনসেশন)

5. অয়ন চাওলা (সবথেকে কম বয়সি CEO)

6. রিতেশ আগরওয়াল (ওয়ো রুমস-এর CEO)

7. আফরোজ় শাহ (পরিবেশবিদ)

8. পি ভি সিন্ধু (ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়)

9.অদিতি গুপ্ত (ভারতীয় লেখিকা ও মেন্সট্রুপিডিয়া কমিকের কো-ফাউন্ডার)

10. লক্ষ্মী আগরওয়াল (অ্যাসিড আক্রান্তদের জন্য লড়াই করছেন)

ABOUT THE AUTHOR

...view details