পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

চাঁদেই মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র দেখতে চান আন্নাদুরাই

পথ দেখিয়েছিল চন্দ্রযান 1 ৷ তা পথে এগিয়েই আজ স্বপ্নপূরণের মুখে দাঁড়িয়ে চন্দ্রযান-2 ৷ চন্দ্রযান 1-এর প্রোজেক্ট ডিরেক্টর জানালেন অচিরেই মানুষ চাঁদে বসবাস করবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি ৷

By

Published : Sep 6, 2019, 7:42 PM IST

Published : Sep 6, 2019, 7:42 PM IST

Updated : Sep 6, 2019, 10:11 PM IST

আন্নাদুরাই

চেন্নাই, 6 সেপ্টেম্বর : স্বপ্ন দেখিয়েছিল চন্দ্রযান-1 ৷ আর তা পূরণের পথে চন্দ্রযান-2 ৷ আর মাত্র কিছুক্ষণের অপেক্ষা ৷ তারপরই আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ৷ চাঁদের মাটিতে পা দেবে চন্দ্রযান-2 থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ল্যান্ডার বিক্রম ৷ সারা দেশবাসীর মতো ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন চেন্নাইয়ের একজন ৷ তিনি এম আন্নাদুরাই ৷ চন্দ্রযান 1-এর প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ৷ তারমধ্যেই একান্তভাবে কথা বললেন ETV ভারতের সঙ্গে ৷ মিশন চন্দ্রযান 2-এর ফলে খুব শীঘ্রই মানুষ চাঁদে উপনিবেশ স্থাপন করবে বলে বিশ্বাস তাঁর ৷

আন্নাদুরাইয়ের বিশ্বাস, ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে মিশন চন্দ্রযান 2 ৷ জানালেন, এই মিশনের যে লক্ষ্য তার বীজ রোপণ করেছিল চন্দ্রযান- 1 ৷ কিন্তু, কীভাবে? বিষয়টি খুলে বললেন আন্নাদুরাই ৷ তাঁর কথায়, "চাঁদে জলের অস্তিত্ব যে রয়েছে সেই খোঁজ পেয়েছিল চন্দ্রযান-1 ৷ তা চাঁদের মেরু অঞ্চলের কাছেই ছিল ৷ যা ফের একবার চাঁদের দিকে নজর ঘুরিয়ে দিয়েছিল ৷ "

এই সংক্রান্ত আরও খবর :চাঁদের মাটিতে পা রাখবে বিক্রম, প্রহর গুনছে দেশ

এর আগে, চাঁদের মাটিতে অ্যামেরিকা, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, চিন পা রাখলেও সবকটিই ছিল পৃথিবীর উপগ্রহের নিরক্ষরেখার কাছে ৷ সেখানে চাঁদের অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে নামবে ল্যান্ডার বিক্রম ৷ কী কারণে তা এত গুরুত্বপূর্ণ, সেই ব্যাখ্যাও দিলেন চন্দ্রযান 1-এর প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ৷ তাঁর কথায়, "যেখানে একাধিকবার মানুষের পা পড়েছে, সেখানে নামবে না চন্দ্রযান-2 ৷ ভবিষ্যতে যেখানে মানুষ যেতে পারেন সেখানেই নামবে ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের ল্যান্ডার বিক্রম ৷ তাই এটা চন্দ্রযান 1-এর পরবর্তী মিশন ৷ এটা ভবিষ্যতে মানুষ নিয়ে যাওয়ার আগের ধাপ ৷" কত বছর লাগবে? আন্নাদুরাইয়ের বিশ্বাস, চন্দ্রযানের 2-এর ফলে আগামী 3-4 বছরে একাধিক চন্দ্রাভিযান হবে ৷ তাই চাঁদের মাটিতে যেদিন মানুষ বসবাস শুরু করবে সেই দিনটা আর বেশি দূরে নেই ৷

এই সংক্রান্ত আরও খবর :কী ভাবে চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে বিক্রম, দেখাল ISRO

এখানেই শেষ নয়, মিশন চন্দ্রযান 2-এর ফলে মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিক উন্মোচিত হবে ৷ বাড়বে আন্তর্জাতিক অভিযানের সংখ্যা ৷ আন্তর্জাতিক স্তরে বাড়বে ISRO-র গ্রহণযোগ্যতা ৷ তিনি বলেন, "বাণিজ্যিকভাবে দেখতে গেলে, ট্রেডমার্ক পাবে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ৷ এখনও অনেক সংস্থা ISRO-র অভিযানে সামিল হতে চাইছে ৷ সে উপগ্রহ তৈরি হোক বা উৎক্ষেপণ করা হোক ৷ " জোয়ার আসবে দেশের মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণায় ৷ যুব প্রজন্মের মধ্যে মহাকাশ নিয়ে বাড়বে আকর্ষণ ৷ চন্দ্রযান 1-এর প্রোজেক্ট ডিরেক্টরের কথায়, "আগামী প্রজন্ম, আগামী পদক্ষেপ ও ভারতের পুরো বিজ্ঞান দলের কাছে চন্দ্রযান-2 হল একটি মাইলস্টোন ৷"

কীভাবে নাম হল চন্দ্রযান ?

পথ চলাটা শুরু হয়েছিল 2000 সালের 15 অগাস্ট ৷ লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশ ভাষণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ী ঘোষণা করেছিলেন, চাঁদে পাড়ি দেবে ভারতও ৷ যদিও তখন নামকরণ হয়নি ৷ আন্নাদুরাই জানান, প্রাথমিকভাবে চন্দ্রযান নয়, অন্য একটি নাম ভাবা হয়েছিল ৷ তাঁর কথায়, "আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তবে, তা গৃহীত হয়নি ৷ তিনি নাম দেন, চন্দ্রযান 1 ৷ " আর এই নামের মধ্যেই লুকিয়েছিল আরও একটি ইঙ্গিত ৷ আর তাতেই উত্তেজিত হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা ৷ সেই উত্তেজনা যেন এখনও অনুভব করেন আন্নাদুরাই ৷ সেই রেশ ধরেই বললেন, "প্রধানমন্ত্রী নামের সঙ্গে 1 যোগ করেছিলেন ৷ অর্থাৎ ভবিষ্যতে আরও অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি ৷ তাতে আমরা অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম ৷"

এই সংক্রান্ত আরও খবর :চাঁদের ঠিক দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ নয় ল্যান্ডার বিক্রমের, বোঝালেন জ্যোতির্পদার্থবিদ

আগে বাজেট আরও কম ছিল, পরে বেড়েছে

মিশন চন্দ্রযান 2-এর খরচ হয়েছে মাত্র 978 কোটি ৷ এত কম খরচে চন্দ্রাভিযানের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে ISRO ৷ তবে, প্রাথমিকভাবে বাজেট আরও কম ছিল বলে জানান আন্নাদুরাই ৷ আর সেই অংকটা কয়েক কোটি কম নয়, প্রায় অর্ধেক ৷ কী কারণে এক লাফে বাজেট দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে তা জানান আন্নাদুরাই ৷ তাঁর কথায়, "আমরা ভেবেছিলাম, মিশনের জন্য 420 থেকে 430 কোটি টাকা খরচ হবে ৷ শুরুর দিকে ঠিক ছিল, GSLV MK II রকেট ব্যবহার করা হবে ৷ আর রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে মিশনটি হবে ৷ তারাই ল্যান্ডার দেবে ৷ কিন্তু, পরবর্তীতে রাশিয়ার সঙ্গে পরিকল্পনা ভেস্তে যায় ৷ ফলে ল্যান্ডার ও রোভার বানাতে হয় আমাদেরই ৷ এটাই আমাদের প্রথমবার ৷ ফলে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় ৷ এর জেরে, মিশনের বাজেট বেড়ে 978 কোটি টাকা হয় ৷ " তা সত্ত্বেও মিশন চন্দ্রযান 2-এর বাজেট কম বলে মন্তব্য আন্নাদুরাইয়ের ৷ তাঁর কথায়, "প্রথম চন্দ্রাভিযানের তুলনায় চন্দ্রযান 2-এর বাজেট দ্বিগুণ হলেও এই পর্যায়ের মিশনের জন্য তা অত্যন্ত যুক্তিসম্মত ৷"

এই সংক্রান্ত আরও খবর :ভুল শুধরে সফল হবেই ISRO, আশাবাদী বিকাশ সিনহা

চাঁদে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মূলত দাপট অ্যামেরিকা ও তার বন্ধুরাষ্ট্রগুলির ৷ তাতে খুব একটা আমল পায় না ভারত ও চিন ৷ সেজন্য বিকল্প একটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তৈরি নিয়েও আলোচনা চলছে বলে জানান আন্নাদুরাই ৷ তাঁর কথায়, "আরও একটা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তৈরির প্রয়োজন রয়েছে ৷ এ নিয়ে আলোচনাও চলছে ৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সেভাবে ভারত ও চিনের ভূমিকা নেই ৷ কিন্তু, এই দুই দেশকে আলাদা রাখা ভবিষ্যতের জন্য মনে হয় ঠিক নয় ৷ "

কিন্তু, কোথায় হবে সেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ? সেই জায়গারও সন্ধান দিলেন আন্নাদুরাই ৷ তিনি বলেন, "বর্তমানে যেভাবে রয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, তার পরিবর্তে কেন চাঁদকে ব্যবহার করা হবে না ? কেন সেখানে গবেষণা স্টেশন তৈরি করা হবে না ? চাঁদকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে ৷"

Last Updated : Sep 6, 2019, 10:11 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details