কাশ্মীরের সংঘাতকে প্রায়শই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা চালিত ছায়া যুদ্ধ বলা হয় ৷ প্রশাসনের একাংশ বলেন, সীমান্তের এপারে আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদরাও এতে মদত দেন । এতে অংশ নিতে কিছু পথভ্রষ্ট ও মৌলবাদী স্থানীয় যুবক হাতে বন্দুক তুলে নেয় ৷ এধরনের বর্ণনা যে একেবারে ভুল, তা নয় ৷ কিন্তু এর মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার আসল ছবিটা উঠে আসে না ৷
জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনও সশস্ত্র বিদ্রোহ তিরিশ বছর ধরে চলতে পারে না ৷ সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের মদতকে দুর্বল করা এবং হিংসাত্মক ঘটনা রুখে দেওয়া ছাড়া কাশ্মীরের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমাধান সূত্র খুঁজতে হলে আমাদের নাগরিকদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে । কাশ্মীরে সন্ত্রাসের পরিবর্তে ‘বিদ্রোহ’ শব্দটি ব্যবহারের জন্য কেউ আপত্তি তোলার আগে এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে বিদ্রোহের সময় সন্ত্রাসবাদকেও একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় ৷
বিদ্রোহের বিরুদ্ধে লড়াইকে প্রায়ই ‘হার্টস অ্যান্ড মাইন্ডস’ প্রচার বলে অভিহিত করা হয় ৷ কিন্তু বাস্তবে এই অভিযানগুলির সঙ্গে হৃদয়ের চেয়ে মাথার সম্পর্ক আরও বেশি । আজকের পৃথিবীতে যেখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার এবং ভুয়ো খবর বিস্ফোরণের মতো ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে কোনও দ্বন্দ্ব মেটাতে মানুষের মনকে প্রভাবিত করাই আসল চ্যালেঞ্জ ৷ সন্ত্রাসবাদী এবং সরকার উভয়পক্ষই জনগণকে নিজেদের দিকে রাখতে তথ্য ছড়ানোর কৌশল নেয় ৷ যাতে জনগণের আস্থা ও আনুগত্য অর্জন করা যায় ৷ সামরিক ক্ষেত্রে, এটিকে তথ্য যুদ্ধ বলা হয় ৷
এই যুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীরা এগিয়ে থাকে ৷ কারণ, তারা মূলত ভুয়ো খবরের উপর নির্ভর করে ৷ উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, ‘‘সত্য নিজের প্যান্ট পরার আগেই অর্ধেক বিশ্বে মিথ্যা ছড়িয়ে যায় ৷’’ এটা এমন এক সময়ে বলা হয়েছিল, যখন বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের মূল মাধ্যম ছিল রেডিয়ো এবং টেলিগ্রাফ ৷ আর এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের যে কোনও জায়গায় যোগাযোগ করা যায় ৷ ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির তরফে করা 2018 সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে মিথ্যে সংবাদ সত্যি সংবাদের তুলনায় 70 শতাংশ বেশি রিটুইট হয়েছে ৷ সত্যি ঘটনার চেয়ে মিথ্যে ঘটনা ছয়গুণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ৷
জম্মু ও কাশ্মীরে পাকিস্তানের তরফে মূলত দু’টি বিষয়কে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচার চলতে থাকে ৷ প্রথমটি হল কাশ্মীরের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জাতিগত পরিচয়ের রক্ষাকারী হিসেবে সন্ত্রাসীদের চিত্রিত করা ৷ যারা নাকি ক্রমবর্ধমান হিন্দু জাতীয়তাবাদের থেকে কাশ্মীরের মানুষজনকে রক্ষা করবে ৷ দ্বিতীয়টি হল কাশ্মীরের জনগণকে কোনও নির্দিষ্ট ইশুতে দমিয়ে দেওয়া ও সুরক্ষাবাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘণের বিষয়টিকে তুলে ধরতে হবে । এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, যাতে এই দু’টি উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচারকে প্রতিহত করতে পারে ভারত সরকারের তথ্যপ্রদান এবং গণজ্ঞাপনের রণকৌশল ।
দ্বিতীয় বিষয়টি সম্ভবত খুব সহজেই দূর করা সম্ভব ৷ কারণ, এর জন্য ধারাবাহিকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে ৷ যা ইতিমধ্যে সুরক্ষাবাহিনী করে দেখিয়েছে । এমনকি যখন শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন হয়, তখন সন্ত্রাসবাদীদের এমনভাবে নিশানা করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি কম হয় ৷ যারা সেনাবাহিনীর হাত শক্ত করা, বা নাগরিক এলাকায় নানা অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কথা বলে,তাদের কথায় প্রভাবিত হলে চলবে না ৷