পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

ভারত-অ্যামেরিকা বাণিজ্য ও অর্থনীতি : ভারতের পছন্দ ট্রাম্প না বিডেন? - america presidential election

#ব্যাটলগ্রাউন্ড USA 2020-র এই পর্বে সিনিয়র সাংবাদিক স্মিতা শর্মা ভারতের মুখোমুখি বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ভারতের পক্ষে ট্রাম্প বা বিডেনের মধ্যে কে বেশি উপকারে আসবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছেন ।

IndoUS Trade & Economy
IndoUS Trade & Economy

By

Published : Sep 6, 2020, 10:58 AM IST

দিল্লি, 6 সেপ্টেম্বর : ভারত ও অ্যামেরিকার মধ্যে শক্তিশালী কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সমঝোতা এবং মজবুত বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, যার পরিমাণ আজ 142 বিলিয়ন ডলার । কিন্তু অভিবাসন এবং বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ মতবিরোধ এখনও রয়েছে । সীমিত চুক্তি এখনও অধরা এবং ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভারত সফরের সময়ও এটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি । যদিও সম্প্রতি USISPF (ইউএস ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরাম) আয়োজিত বার্ষিক সম্মেলনে বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ঘোষণা করেন, একটা সীমিত বাণিজ্য চুক্তি সম্ভবত স্বাক্ষরিত হতে পারে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই।

ব্যাটলগ্রাউন্ড ইউএসএ টোয়েন্টি-টোয়েন্টির এই পর্বে ভারতের সামনে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ট্রাম্প ও বিডেনের মধ্যে কে ভারতের বেশি উপকারে আসবেন - তাই নিয়ে আলোচনা করেন সাংবাদিক স্মিতা শর্মা ।

সীমিত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, ওয়াশিংটনের হাডসন ইউনিভার্সিটির ইন্ডিয়া ইনিশিয়েটিভের অধিকর্তা ড. অপর্ণা পাণ্ডে বলেন, এর সম্ভাবনা অত্যন্ত কম । ‘ফ্রম চাণক্য টু মোদি’ এবং ‘মেকিং ইন্ডিয়া গ্রেট’ গ্রন্থের লেখিকা ড. পাণ্ডের কথায়, “আমি নিশ্চিত নই যে আগামী মাসগুলিতে কোনও মিনি বা মাইনর বাণিজ্য চুক্তি হবে । যেটা সম্ভব, যে আমেরিকা ভারতকে GSP (জেনেরালাইজ়ড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সেস) ফিরিয়ে দিতে পারে । এই সুবিধা সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল । এর পরিমাণ হবে 6 থেকে 8 বিলিয়ন ডলার । এক্জ়িকিউটিভ অর্ডারে এটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং আগামী দু-এক মাসে প্রেসিডেন্ট তা সম্পন্ন করতে পারেন । আর এটিকে মিনি বাণিজ্য চুক্তির মতোই দেখাবে ।”

ব্যাটলগ্রাউন্ড USA 2020

তিনি আরও বুঝিয়ে বলেন, “বৃহত্তর চুক্তির ক্ষেত্রে সমস্যাটা হল, আমরা এমন একটা সময়ে রয়েছি, যখন ভারত ও অ্যামেরিকা উভয়ই জাতীয়তাবাদী ও সংরক্ষণবাদী । তুমি যাকে শুল্ক চাপানোর রাজা বলো, যার বিরুদ্ধে তোমার কৃষিভর্তুকি থেকে মেধাস্বত্ত্ব নিয়ে অজস্র অভিযোগ রয়েছে - সেই দেশকে সুবিধা দেওয়ার পাশে ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতি রাখা কঠিন । তাই অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টের পক্ষে আগামী দু’মাসে এটা করা কঠিন । বিডেন বা ট্রাম্পের পরের সরকারের সময়ে এটা হবে কিনা, আমি জানি না । ভারতের দিক থেকেও এটা কঠিন । ভারতের অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে । নিজের কৃষক ও উৎপাদকদের বাঁচাতে এই শুল্ক বা করগুলি ভারতের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ।”

ফ্রান্সে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এবং বাণিজ্য মধ্যস্থতাকারী মোহন কুমারও একইরকম সংশয় প্রকাশ করে বলেন, 2021-এর প্রথম কোয়ার্টারের আগে বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম । তিনি সেইসব জটিল সমস্যাগুলি তুলে ধরেন, যা ভারতের আরও বেশি উদ্বেগের কারণ ।

জিন্দল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ় বিভাগের ডিন এবং RIS-এর চেয়ারম্যান মোহন কুমার বললেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, এখন অ্যামেরিকা আমাদের চিনের সঙ্গে একসারিতে ফেলে দিয়েছে আর বলছে, আমরা দু'জনেই উন্নয়নশীল দেশ নই । এটা আমার মতো একজন প্রাক্তন মধ্যস্থতাকারীর কাছে হতবাক করা যুক্তি । আপনি আপেল ও কমলালেবুর মধ্যে তুলনা করছেন । সবাই জানে যে চিনের অর্থনীতি 13 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের যেখানে আমরা 2.7 ট্রিলিয়ন ডলারের । এটাই আমাদের পরের অ্যামেরিকা সরকারকে বোঝাতে হবে, সেটা যারই হোক না কেন ।”

GSP-র সঙ্গে আরেকটা জটিলতা হচ্ছে ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স, এ'কথা উল্লেখ করে মোহন কুমার বলেন, “মৎস্যচাষ নিয়ে আসন্ন বহুমাত্রিক দর কষাকষির কারণে আমাদের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ফেরত পেতেই হবে । আমেরিকা যদি বলে যে তোমাদের সঙ্গে আমরা চিন বা অন্যদের মতো ব্যবহার করব, তাহলে আমরা WTO-তে দর কষাকষি করতে পারব না । বাকি সবকিছুরই আমরা সমাধান করতে পারি, কিন্তু এটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যেটা নিয়ে লাইটহাইজারকে (অ্যামেরিকান বাণিজ্য প্রতিনিধি) সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে না ।”

তিনি আরও যোগ করেন, “ফ্রান্সের বিপরীত অবস্থান নিয়ে অ্যামেরিকা শাস্তিমূলক শুল্ক বসানোর চেষ্টা করছে ফ্রান্সের ডিজিটাল সার্ভিসেস ট্যাক্সের জবাবে । আমরা এরমধ্যেই সেটা করেছি । আমরা একে সমান কর বা অন্যকিছু বলি । আমরা অ্যামেরিকাকে যথাসাধ্য বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে এটা গুগল বা অ্যামাজ়নের জন্য নয় । তাই আমার মনে হয় পরের বছরের কোয়ার্টার পর্যন্ত সময় লেগে যাবে ।”

আদানপ্রদানপন্থী ট্রাম্পের তুলনায় জো বিডেন প্রশাসন শক্তি, বাণিজ্য এবং অভিবাসনের মতো অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোতে ভারতের সঙ্গে বেশি সহযোগিতা করবে কিনা, আলোচনা হয় তা নিয়েও । হোয়াইট হাউসে কে আসবেন, তার ভিত্তিতে নভেম্বরের পর আমেরিকা-চিনের বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হওয়ার ফলে ভারতের সামনে কী কী ধাক্কা বা সুযোগ থাকবে, তা নিয়েও পর্যালোচনা হয় ।

ডক্টর পাণ্ডের যুক্তি, “যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরেন, এটা হবে তাঁর শেষ চার বছর কারণ তিনি এরপর আর প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না । সুতরাং তিনি একটা কি দুটো - সম্ভবত একটাই নীতি নেবেন - যা হল তিনি সেই কাজগুলোই করে যাবেন, যার জন্য তিনি আটের বা নয়ের দশক থেকে ভয় পাচ্ছেন । অভিবাসন তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ । এখনও পর্যন্ত তিনি বেশিরভাগটাই এক্জ়িকিউটিভ অর্ডার দিয়েছেন, কারণ অ্যামেরিকায় কংগ্রেসই অভিবাসন সংস্কার করতে পারে, এক্জ়িকিউটিভ নন । কিন্তু, তিনি অভিবাসন আটকানোর জন্য আরও নীতি প্রণয়নের চেষ্টা করবেন, তা সে এইচওয়ানবি, এল-ওয়ান, গ্রিন কার্ড হোক বা স্টুডেন্ট ভিসা । আর সেটা ভারতকে আঘাত করবে । শুধু এই জন্য নয় যে ভারতীয়রা এখানে পড়তে আসে । কারণ অর্থপ্রেরণ ধাক্কা খাবে, আর যে সম্পর্ক আমরা এতবছর ধরে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি ।”

তিনি মনে করিয়ে দেন, যে শেষ পর্যন্ত দিল্লি এবং ওয়াশিংটন ডিসিকে একটা রাজনৈতিক অবস্থান নিতে হবে, যে কেন অর্থনীতির দিকটা কৌশলগত অবস্থান থেকে এখনও এতটা দূরে । মোহন কুমার বিশ্বাস করেন, অত্যন্ত দক্ষ অভিবাসীরা বিডেন প্রশাসনের আনুকূল্য পাবে, কিন্তু সেখানেও ভালো ও খারাপ দুটো দিকই আছে ।

অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক বলেন, “যদি বিডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসে, তখন আমাদের সামনে অন্য ইশু আসবে । এমন সম্ভাবনা থাকতে পারে যে WTO-র পুনরুজ্জীবন ঘটল । তখন আমরা কয়েকটি দেশের গোষ্ঠী হিসেবে বা দ্বিপাক্ষিকভাবে একটা সমঝোতা করতে পারি, এবং তাদের বদলে পারি যে আমরা তোমাদের সঙ্গে বসব, আমরা ব্যবসা করব কিন্তু তোমরা এই এই জিনিসগুলো কোরো না । বিশেষ মর্যাদা নিয়ে নিও না, GSP নিয়ে নিও না । কিন্তু, তখন অন্য সমস্যা আসবে । উদাহরণ হিসেবে, শ্রমের মান, পরিবেশ মানদণ্ডের ক্ষেত্রে এটা আরও কঠিন হবে, আর তারা WTO-তে এই সবকিছুই অন্তর্ভূক্ত করবে । ডেমোক্রেটরা পারম্পরিকভাবেই বাণিজ্যের মাধ্যমে পরিবেশ ও শ্রমের মানদণ্ড কার্যকর করে থাকে ।”

ABOUT THE AUTHOR

...view details