পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

কোরোনা প্রতিরোধে জীবনদায়ী ওষুধ তৈরিতে ভারতের যুদ্ধ

টোসিলিজ়ুমাব ও রেমেডেসিভার কোরোনা আক্রান্তদের জীবন বাঁচাতে হিরোর ভূমিকা পালন করেছে ৷ তবে ভারতের বাজারে টোসিলিজ়ুমাবের ঘাটতি রয়েছে । আবার, রেমডেসিভির কালো বাজারি হচ্ছে বলে অভিযোগ সামনে আসছে ।

India's battle in procurement of life-saving drugs
কোরোনা প্রতিরোধে জীবনদায়ী ওষুধ তৈরিতে ভারতের যুদ্ধ

By

Published : Jul 14, 2020, 11:08 PM IST

COVID -১৯ প্রতিরোধে টোসিলিজ়ুমাব

টোসিলিজ়ুমাব হ'ল একটি রিকম্বিন্যান্ট হিউম্যানাইজ়ড মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি যা গুরুতর রিউম্যাটয়েড আর্থারাইটিস, সিস্টেমেটিক জুভেনাইল ইডিয়োপ্যাথিক আর্থারাইটিস, জায়ান্ট সেল আর্থারাইটিস ও মারাত্মক সাইটোকাইন রিলিজ় সিন্ড্রোম রোগের চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করা হয় । ভারত সরকার কর্তৃক COVID-19-এর ক্লিনিকাল ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল অনুসারে (13.06.2020), টোসিলিজ়ুমাব (অফ লেবেল) ক্রমবর্ধমান অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তাযুক্ত ও যান্ত্রিকভাবে অক্সিজেন নেওয়া রোগীদের স্টেরয়েড ব্যবহার সত্ত্বেও উন্নতি না হওয়ার পর তাদের উপর ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ তবে, COVID - 19 ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ এখনও অজানা । চিনের উহানে একটি কেন্দ্রের গবেষণায় কোরোনা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত 15 জন রোগীর সাইটোকাইন হয়েছিল ৷ তাদের চিকিৎসায় 80 থেকে 600 মিলিগ্রাম টোসিলিজ়ুমাব উপকার দিয়েছিল ৷

ল্যানসেটের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, গুরুতর COVID-19-এর আক্রান্তদের মধ্যে টোসিলিজ়ুমাব স্বল্প সময়ের ভ্যাসোপ্রেসার সহায়তার সঙ্গে যুক্ত ৷ যদিও পরিসংখ্যানগত দিক থেকে এর কোনও তাৎপর্য নেই ৷ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, টোসিলিজ়ুমাব ব্যবহারের ফলে চিকিৎসাগত দিক থেকে উন্নতি হয় ও ভেন্টিলেশনে রাখার সময়সীমাও কমে ৷ ( কোরোনা আক্রান্ত রোগীদের উপর এই ওষুধ প্রয়োগ করে ফলাফল পেলে ওষুধটির সঠিক গুরুত্ব বোঝা যাবে )

COVID-19 প্রতিরোধে রেমডেসিভির

ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিভাইরাল এজেন্ট রেমডেসিভির ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণের সময়ে ক্লিনিকাল ট্রায়াল করা হয়েছিল ৷ যদিও তার উপকারিতা ছিল সীমিত ৷ তবে, অ্যামেরিকার FDA বড়দের ও শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারের জন্য EUA (Emergency use authorization) অনুমতি দিয়েছে ৷ এটি ব্যবহারের ফলে কোরোনার উপসর্গ 15 দিন থেকে কমে 11 দিন হয় ৷ ফলে এর চাহিদাও বেড়েছে ৷ DCGI অর্থাৎ ড্রাগ কনট্রোলার জেনেরাল অফ ইন্ডিয়া রেমডেসিভির যুক্ত সিপ্রেমিকে জরুরি ও অরক্ষিত চিকিৎসায় প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহারে অনুমতি দিয়েছে ৷

ঘাটতি

ভারত সরকার কর্তৃক COVID-19-এর ক্লিনিকাল ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকলের নথিতে (13.06.2020), টোসিলিজ়ুমাবের ঘাটতি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ "এই ওষুধের ব্যবহার এখনও পর্যন্ত দেশে সীমিত ৷ " বিতরণ নীতি অনুসারে, পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার জন্য অনুমোদিত সংস্থাগুলি কেবলমাত্র হাসপাতালগুলিতে সরবরাহ করতে পারবে, কেমিস্টদের সরবরাহ করতে পারবে না । যে দামে পাওয়া যায় তার চেয়ে কিছুটা কম দামে ওষুধটি পাওয়ার জন্য কোরোনা রোগীর আত্মীয়রা বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ওষুধের দোকান ঘুরে বেড়াচ্ছে ।

সিপলা সংস্থা COVID-19 রেমডেসিভির ড্রাগের জিনেরিক সংস্করণ বাজারে এনেছে । সিপলা এক বিবৃতিতে বলেছে, 100 মিলিগ্রাম শিশি প্রতি ওষুধের দাম 4 হাজার টাকা । তবুও, এই ওষুধের কালো বাজারির খবর পাওয়া যাচ্ছে ৷ এছাড়াও সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কোরোনা প্রতিরোধে রেমডেসিভির ড্রাগ ও ফ্যাভিপিরাবির তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালগুলিকে আটকে রেখেছে শুল্ক দপ্তর ৷ যা উৎপাদনকে প্রভাবিত করছে ।

BMC কমিশনার IS চাহাল প্রতিটি সিভিক হাসপাতালের ডিনকে এক মাসের মতো অ্যান্টিভাইরাল টোসিলিজ়ুমাব ও রেমডেসিভির সংগ্রহ ও মজুত রাখতে বলেছিলেন । যাতে ওষুধগুলি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের ফার্মা সংস্থাগুলির সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন ।

রোসে প্রোডাক্টস (ভারত) প্রাইভেট লিমিটেড

রোসে প্রোডাক্টস (ভারত) প্রাইভেট লিমিটেড , যা ভারতে টোসিলিজ়ুমাব ড্রাগ প্রস্তুত করে ৷ তারা তাদের পণ্যের দাম কারও সাথে ভাগ করে না ৷ তবে, তাদের রোগী সহায়তা কর্মসূচিতে (PSP) তালিকাভুক্ত রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধের সরবরাহ করার জন্য, তারা বর্তমানে ভারতের প্রধান শহরগুলিতে অবস্থিত তাদের স্থানীয় বিতরণকারীর মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীভূত প্রেরণ সিস্টেম থেকে বিকেন্দ্রীভূত মডেলে চলে গেছে । তাদের PSP দলগুলি স্থানীয় বিতরণকারীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে ৷ যাতে নিশ্চিত হয় যে, রোসে PSP - র অধীনে থাকা সমস্ত রোগীর কাছে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

কালো বাজারি

COVID-19 রোগীদের জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ওষুধের কালো বাজারির খবর সামনে আসছে ৷ রেমডেসিভির ওষুধটি কালো বাজারে 30 হাজার বা তারও বেশি টাকায় বিক্রি করার খবর পাওয়া গেছে ৷ সরকার একটি শিশি 5 হাজার 400 টাকায় বিক্রি করছে ৷ সেটিই কালোবাজারিতে বিক্রি হচ্ছে 30 হাজার টাকায় ৷ ফুড অ্যান্ড ড্রাগস কন্ট্রোল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDCA) আহমেদাবাদে একটি র‌্যাকেট ফাঁস করে, যা টোসিলিজ়ুমবের মতো একটি ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ড্রাগের কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত ৷ ঘটনায় 4 জনকে বেআইনিভাবে বেশিদামে ওই ড্রাগের ইনজেকশন বিক্রির অভিযোগে আটক করা হয় ৷

সরবরাহ ও চাহিদা ব্যবধান

অ্যামেরিকার গিলিয়েড সায়েন্সেস, যা মূলত ইবোলার চিকিৎসার জন্য রেমডেসিভির তৈরি করেছিল ৷ যা 4 টি ভারতীয় সংস্থা সিপলা, জুবিল্যান্ট লাইফ, হেটেরো ড্রাগস ও মাইলনকে ভারতে এটি উৎপাদন ও সরবরাহ করার অনুমতি দেয় । তবে, এগুলির মধ্যে কেবল একটি সংস্থাই - হেটেরো এখনও পর্যন্ত এটি তৈরি করে এসেছে । সংস্থাটি 5টি রাজ্যে ওষুধের 20 হাজার ডোজ় বিতরণ করেছে ।

টোসিলিজ়ুমাবের গুরুত্ব বাড়ার পাশাপাশি এর চারপাশের বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং ক্রয়ক্ষমতাযোগ্যতার একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা রয়েছে । এর মূল কারণ হ'ল বর্তমানে একমাত্র সংস্থা সুইজ় ফার্মাসিউটিক্যাল মেজর রোসে এই ওষুধটি তৈরি করে ৷ বিকল্প হিসেবে জেনেনটেক সংস্থা এটি তৈরি করে । রোসে এটিকে অন্য কোনও সংস্থাকে তৈরির লাইসেন্স দেয়নি । ভারতে টোসিলিজ়ুমব আমদানি করা হয় ও পরে ভারতীয় জেনেরিক ড্রাগ সংস্থা সিপলা এটিকে বিতরণ করে ৷ এর ফলে টোসিলিজ়ুমাবের দামও বেশি থাকে এবং ভারতে এর সরবরাহ কম থাকে ৷ ফলে সাধারণ মানুষের কাছে এই ড্রাগটি পাওয়া খুবই দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে ৷ এই ড্রাগটি পেতে অনেক সংগ্রাম করতে হয় ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details