দিল্লি, 29 ফেব্রুয়ারি : বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের সংখ্যা বর্তমানে 18 মিলিয়নের বেশি । পাশাপাশি বিদেশে বসবাসকারী সম্প্রদায়গুলির মধ্যে বৃহত্তম হওয়ার স্বীকৃতি এখনও ধরে রেখেছে ভারতীয়রা । এই তালিকায় রয়েছেন বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিক । ভারতের বাইরে যে সব দেশের বাসিন্দা তাঁরা, সেই সব দেশের উন্নয়নে তাঁদের ভূমিকা সর্বব্যাপী সমাদৃত । নিজেদের পরিশ্রম, নিয়মানুবর্তিতা ও নিষ্ঠাকে হাতিয়ার করে বিগত কয়েক বছরে তাঁরা সেই সব দেশের যোগ্যতম মানবসম্পদ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন । উত্তর অ্যামেরিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে ছড়িয়ে থাকা এই ভারতীয়দের কাজের তালিকায় রয়েছে ‘হোয়াইট কলার’ থেকে শুরু করে ‘ব্লু কলার জব’-ও ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদেশে বসবাসকারী সবচেয়ে বেশি ভারতীয়রা রয়েছেন যথাক্রমে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (3.4 মিলিয়ন), অ্যামেরিকা (2.6 মিলিয়ন) এবং সৌদি আরবে (2.4 মিলিয়ন) । সাম্প্রতিক ভারত সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অ্যামেরিকার উন্নয়নে সে দেশে বসবাসকারী চার মিলিয়ন প্রভাবশালী ভারতীয়দের ভূমিকার কথা তুলে ধরেছিলেন । উপসাগরীয় দেশগুলিতে মানবসম্পদের নিরিখে আর সকলের তুলনায় ভারতীয়রাই সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং ভারতীয়দেরই বেশি পছন্দ করা হয় । অস্ট্রেলিয়ার ‘অ্যান ইন্ডিয়া ইকোনমিক স্ট্র্যাটেজি টু 2035’-এ অস্ট্রেলিয়া সরকার সে দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের তাদের জাতীয় অর্থনৈতিক সম্পদ হিসাবে অভিহিত করেছে এবং জানিয়েছে, দেশের সবরকম কর্মকাণ্ডে ভারতীয়দের নিয়োগ করা হচ্ছে । অস্ট্রেলিয়া সরকার আরও ঘোষণা করেছে যে, এই দ্রুত ক্রমবর্ধমান সম্প্রদায়ের উদ্যোগপতি প্রতিভা, উদ্ভাবনী শক্তি, ঝুঁকি নেওয়ার সাহস এবং সর্বোপরি ভারতের বাজার সম্পর্কে এদের সম্যক জ্ঞান ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য ক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতা আরও বৃদ্ধি করবে । ভারতের বাইরে যে দেশে ভারতীয়রা রয়েছেন, সেখানে তাঁদের ক্রমবর্ধমান আর্থিক এবং রাজনৈতিক প্রাধান্য আখেরে তাঁদের সেই দেশের অন্যতম প্রভাবশালী কণ্ঠে পরিণত করেছে । বর্তমানে এই ভারতীয়রা একাধিক MNC-র উচ্চ পদে রয়েছেন । যা তাঁদের জন্মভূমি দেশের কাছে সমীহ করার মতো বিষয় । বিদেশে বসবাসকারী এই ভারতীয়দেরই সুবাদে আরও বেশি বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি ভারতে আসছে । বিশেষ করে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি এবং আর্থিক ক্ষেত্রের বিনিয়োগমুখী উন্নয়নে এই ভারতীয়দের বড় ভূমিকা রয়েছে । সবচেয়ে বড় কথা, ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ’ হিসেবে এই ভারতীয়দের বার্ষিক প্রেরিত অর্থ যার মূল্য 60 মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি, ভারতীয় অর্থনীতিকে একটি মজবুত ভিত্তি দিতেও সাহায্য করেছে ।
যদিও উপসাগরীয় দেশগুলিতে ‘ব্লু কলার’ চাকুরিজীবীদের শোষণ এবং নিষ্কাশনের কাহিনী খুবই করুণ । এর অন্যতম কারণ নিয়মনীতির অবহেলা, বিবেকহীন লোকবল যোগানকারী এজেন্ট এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসহানুভূতিশীল নিয়োগকর্তা । বেশিরভাগ সময়ই আবার এঁদের ক্ষেত্রে ‘ভিখারিদের কখনও কিছু বেছে নেওয়ার অধিকার থাকে না’—এই প্রচলিত আপ্তবাক্যটিও প্রযোজ্য হয় । স্বপ্নের মোহে বুঁদ ভারতীয় তরুণদের একটা বড় অংশ চাকরির খোঁজে পশ্চিমের দেশগুলিতে যায় । সেখানে গিয়ে তাঁদের স্বপ্নভঙ্গ হয় । পরে তাঁরা অবৈধ অভিবাসী হিসাবে দুঃস্বপ্নের জীবন কাটাতে শুরু করেন । উপসাগরীয় দেশগুলিতে কাজের পারমিটে বেশিরভাগ সময়ই দেশছাড়ার ক্ষেত্রে কড়া নিয়মনীতি থাকে আর কাজের চুক্তিপত্রগুলিও একতরফা হয় । ভারত সরকারের পাসপোর্ট আইন লঙ্ঘণ করে অনেক নিয়োগকর্তাই এদের পাসপোর্টও আটকে রাখে । কোনও সমস্যায় পড়লে পরিচয়পত্র হিসেবে থাকে শুধু আধার কার্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স । মিডলম্যান তথা মধ্যস্থতাকারী এবং এজেন্টরা বেশিরভাগ সময়ই তথ্য লুকোয় এবং চাকরিপ্রার্থীকে বোঝায় বিদেশে চাকরি করা মানেই স্বপ্নপূরণ । তাই, যাতে ঠকতে না হয়, তাই চাকুরিপ্রার্থীদের উচিত আগেভাগে ভারতে রাজ্য সরকারগুলির একাধিক রিসোর্স সেন্টারে যোগাযোগ করে, তাদের পরামর্শ নেওয়া এবং বাড়িতে অন্য দেশে ভ্রমণ এবং চাকরির চুক্তিপত্রের নথির কপিও রেখে যাওয়া । এর পাশাপাশি ভারতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার তরফে সঠিক দিশানির্দেশ চেয়ে নেওয়া এবং যাওয়ার আগে আরবি ভাষায় কিছু দরকারি শব্দ ও বাক্য শিখে যাওয়াও জরুরি । চাকরিসূত্রে বিদেশে গমনকারী ভারতীয়দের নিরাপত্তার জন্য তাঁদের পাসপোর্টে ‘অভিবাসন ছাড়পত্র প্রয়োজন’-এর সিলমোহর দেওয়া থাকে, যা বেশ কয়েক দফা পরীক্ষা করার পরই পাওয়া যায় প্রোটেক্টরেট জেনারেল অফ ইমিগ্রান্টস-এর তরফে । বর্তমানে এই বিষয়টি বিদেশ মন্ত্রকের অন্তর্গত । বিওরো অফ ইমিগ্রেশনের সহযোহিতায় ‘ই-মাইগ্রেট’ সিস্টেমের মাধ্যমে একটি সক্রিয় ডেটাবেসও প্রস্তুত করা হয়, যেখানে বিদেশি নিয়োগকর্তাদেরও নাম, ধাম নথিভুক্ত করা হয়, যাতে প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যায় । ভারতীয় দূতাবাসগুলির তরফে একটি ভারতীয় সম্প্রদায় কল্যাণ তহবিলও পরিচালনা করা হয়, যা বিদেশে বিপদের সম্মুখীন হওয়া বা আটকে পড়া ভারতীয়দের আপদকালীন সাহায্য করতে পারে । তাঁদের নিয়োগকর্তা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয় সাধন করে । এরকম বহু ঘটনা ঘটেছে যে বিদেশে কর্মরত ভারতীয় পরিচারিকা এবং সেবিকাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে এবং তখন এই সব দূতাবাসের তরফে তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং আশ্রয়ও দেওয়া হয়েছে । যাঁরা যাঁরা বিদেশে কাজের খোঁজ করছেন, তাঁদের প্রত্যেককে বিমার বন্দোবস্ত অবশ্যই করতে হবে, যা তাঁদের সে দেশ থেকে হঠাৎ চলে আসতে বা প্রয়োজনে কাজের চুক্তি ভাঙতে সাহায্য করবে ।