দিল্লি, 25 জুন : COVID-19 পরবর্তী সময়ে ভারত কীভাবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়াবে ? এই বিষয়ে ভার্চুয়াল আলোচনা করলেন কেন্দ্রের মুখ্য অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম । মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (MCCI)-এর তরফে ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করা হয় । আলোচনায় কেন্দ্রীয় পরামর্শদাতাকে স্বাগত জানান MCCI-এর সভাপতি বিবেক গুপ্তা ।
আলোচনায় যে সব বিষয়গুলো উঠে এসেছে……
এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত আগে থেকে আর্থিক মন্দায় জর্জরিত । এর উপর COVID-19 আসায় অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে । টানা দু'মাসের লকডাউনের জেরে মানুষের হাতে নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে । পরিযায়ী শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন । স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বিরাট চাপ তৈরি হয়েছে । নোটবন্দী এবং GST, দু'টোই ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে । চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভারতীয় অর্থনীতি 3.1 শতাংশ প্রসার লাভ করেছে । যা 2004 সালের পর সবথেকে কম । মে মাসে চর্মশিল্প, হস্তশিল্প, রত্ন ও গয়নার বাজারে 36.47 শতাংশ হারে অর্থাৎ 19.05 বিলিয়ন অ্যামেরিকান ডলার রপ্তানি হয়েছে । পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে । উন্নত দেশগুলিতে লকডাউনের পর ত্রাণ বিলির ঘোষণা করা হয়েছিল । এভাবে এদেশে লকডাউনের পর পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে ত্রাণ বিলি করা হয়েছে । এক্ষেত্রে সরকার প্রাথমিকভাবে নিজেদের দেওয়া কথা থেকে সরে এসেছে এবং দেশের নাগরিকের প্রতি যৎসামান্য কর্তব্য পালন করেছে । পাশাপাশি সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়েছে এবং শিল্পক্ষেত্র চালু রেখেছে সরকার ।
UK- র রাজস্ব দপ্তরের চ্যান্সেলর ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক বলেন, "এখন রক্ষণশীলতা বা নিজেদের চিন্তাভাবনা চাপিয়ে দেওয়ার সময় নয় । আমরা চাকরি, আয় এবং ব্যবসাকে সমর্থন করি । রাজ্য সরকার এবং পৌরসভা কর্তৃপক্ষগুলি শিল্প- কারখানাগুলির পাশে দাঁড়িয়েছে । এর ফলে সাধারণ মানুষ কিছুটা লাভবান হয়েছেন । কিন্তু ভারতে সমস্ত বেসরকারি সংস্থাকে কর্মীদের পুরো বেতন দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে । বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি বছরে আর্থিক ক্ষতি আরও বড় আকার ধারণ করবে । কাঁচামাল উৎপাদন বন্ধ থাকায় রাজস্ব আয় তলানিতে ঠেকেছে । GDP-র 7.4% পর্যন্ত রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে । 28 টি রাজ্য থেকে যে রাজস্ব কেন্দ্র সরকারের আয় হতো তার হিসেব করলে এবছর GDP-র 11.4 শতাংশ ক্ষতি হতে পারে । কেন্দ্রীয় সরকারকে আর্থিক নীতি পরিবর্তন করতে হবে তা নাহলে GDP 3 শতাংশে পৌঁছবে ।
কেন্দ্রের মুখ্য অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “পশ্চিমের দেশগুলিতে অর্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় । কিন্তু ভারতে দরিদ্র মানুষের দিকে মানবিকতার খাতিরে সাহায্যের হাত বাড়ানো হয় । তাদের খাবার থেকে রান্নার গ্যাসের মতো বিভিন্ন জরুরি জিনিস কেন্দ্রের তরফে বিলি করা হয় । এর আগে অর্থনৈতিক সংকটের ক্ষেত্রে চাহিদা পূরণ না হওয়ার পিছনে শুধুমাত্র আর্থিক কারণ ছিল । কিন্তু এবারের সংকটে COVID-19 এর মতো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় যুক্ত হয়েছে । যতদিন না এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আর্থিক চাহিদা মিটবে না । পশ্চিমের দেশগুলিতে সাধারণ মানুষ শুধুমাত্র জরুরি জিনিসের উপর খরচ করে । কিন্তু ভারতে তা হয় না । প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে অনেক টাকা জমা পড়েছে । অর্থাৎ দরিদ্র মানুষ সঞ্চয় করছেন । এর ফলে যখন মহামারী চলে যাবে তখন অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সুবিধা হবে ।"
COVID-19 এর মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার যে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করেছে তা অন্যদের তুলনায় ভিন্ন । মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প গুলিকে ঋণ দিতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক । COVID-19 পরবর্তী ক্ষেত্রে দ্রুত আর্থিক সংকট মেটাতে প্রয়োজন ভ্যাকসিনের আবিষ্কার । কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “লকডাউন শিথিল হওয়ার পরেও শপিংমলগুলিতে সাধারণ মানুষের ভিড় নেই । এর থেকে বোঝা যাচ্ছে মানুষ ভীত । অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ভ্যাকসিনের আবিষ্কার এক্ষেত্রে জরুরি ।”
তিনি আরও বলেন, “1991 সালের পর থেকে রপ্তানি ক্ষেত্রে ভারত অনেক পিছিয়ে পড়েছে । সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারত কখনওই আত্মনির্ভর হতে পারবে না । একমাত্র নিজেদের সেরাটা দিয়ে বিশ্ববাজারে ভারত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে । চিন কিন্তু কাঁচামাল আমদানি করে জিনিস তৈরি করে । তারপর সেটা বিক্রি করে । সুতরাং চিনের সঙ্গে ব্যবসা করা এত সহজ হবে না । বিশ্ববাজারে ভারতকে অন্যদের প্রতিদ্বন্দ্বী করে গড়ে তুলতে গেলে সবার আগে শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে । শ্রম আইনে পরিবর্তন এবং বিদ্যুতের খরচ কমাতে হবে । এর ফলে দেশে ব্যবসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে ।”