পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

ভারত-জাপান সম্পর্কের উদ্দেশ্য তৃতীয় কোনও দেশের বিরোধিতা করা নয়

আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে নিয়ে যে দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন হতে চলেছে । সেখানে ভারত এবং জাপান, বেজিংয়ের বিরুদ্ধে সংযুক্ত ফ্রন্ট গড়তে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে প্রচার করছে চিনের সরকার পরিচালিত সংবাদমাধ্যম । কিন্তু জাপানিজ় স্টাডিজ় বিষয়ে এক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ভারত ও জাপানের এই সম্পর্ক তৃতীয় কোনও দেশের বিরুদ্ধে নয় । আলোচনায় আরুণিম ভুইয়াঁ ।

india-modi
india-modi

By

Published : Aug 22, 2020, 8:22 AM IST

আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে নিয়ে যে দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন হতে চলেছে । সেখানে ভারত এবং জাপান, বেজিংয়ের বিরুদ্ধে সংযুক্ত ফ্রন্ট গড়তে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে প্রচার করছে চিনের সরকার পরিচালিত সংবাদমাধ্যম । কিন্তু জাপানিজ় স্টাডিজ় বিষয়ে এক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ভারত ও জাপানের এই সম্পর্ক তৃতীয় কোনও দেশের বিরুদ্ধে নয় ।

চিনের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ‘গ্লোবাল টাইমস’—এ প্রকাশিত ‘হার্ড ফর ইন্ডিয়া, জাপান টু ফর্ম এ ইউনাইটেড ফ্রন্ট এগেনস্ট চায়না’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সিংঘুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের অধিকর্তা কুইং ফেং বলেছেন, “ভারত যদি চিনকে দমাতে জাপানকে আসরে নামানোর চেষ্টা করে, তাহলে মুখ থুবড়ে পড়বে ।”

বিগত 45 বছরের মধ্যে এই প্রথম, চলতি বছরেই ভারত ও চিনের মধ্যে লাদাখে সীমান্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকায় দু’পক্ষেই জওয়ানদের মৃত্যু হয়েছে । আর সেই আবহেই প্রকাশিত হয়েছে কুইংয়ের লেখা । কুইং লিখেছেন, “সীমান্ত সংঘর্ষের পর, চিনের উপর চাপ বাড়াতে ভারত অযৌক্তিক এবং একতরফা পদক্ষেপ নিয়েছে ।” তিনি আরও লিখেছেন, “উদাহরণস্বরূপ, ভারত সীমান্ত সংঘর্ষের ঘটনার প্রেক্ষিতে টিকটক এবং উইচ্যাট—সহ 59টি চিনা মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে । ভারত চিনের উপর চাপ বাড়াতে জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে গোটা বিতর্কে টেনে এনেছে । কিন্তু এতে প্যানডেমিক—পরবর্তী সময়ে ভারতে কোনও আর্থিক উন্নয়ন হবে না বা অর্থনীতির হাল ফিরবে না । চিনের ক্ষতি করে ভারত অর্থনৈতিকভাবে আরও ভুগবে । চিনের জাতীয় স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করার মতো ক্ষমতা ভারতের নেই ।”

যদিও পাশাপাশি প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে যে চিন-ভারত এবং চিন-জাপানের সম্পর্ক মোটেও তত দ্রুত তলানিতে চলে যায়নি, যতটা চিন-অ্যামেরিকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে হয়েছে । যদিও নয়াদিল্লি চায় বেজিংয়ের উপর চাপ বাড়াতে, তবুও আলোচনার মাধ্যমে ভারত-চিন বিবাদ মেটানোর পন্থাই সাধারণভাবে অনুসরণ করা যেতে পারে ।”

“আর জাপানের নিরিখে বলা যায়, প্যানডেমিক—পরবর্তী সময়ে উন্নয়নের গুরুত্বের কথা ভেবে তারা হয়তো এখনও চিনের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক সুষ্ঠু করতেই চাইবে । আর তা হলে বেজিংকে চটানোর ধৃষ্টতা দিল্লি বা টোকিও, কেউই করবে না ।”

কুইং আরও লিখেছেন, যদিও চিনের ভারত ও জাপানের সঙ্গে বিবাদ রয়েছে । তবু নয়াদিল্লি এবং টোকিও, দুই'ই চায়, এশিয়ায় নিজেদের মধ্যে ভারসাম্য ও সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখার পথে হাঁটতে । আমরা দেখতে চাই এশিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারত এবং জাপানের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক স্বাভাবিকই থাকুক । কারণ তাদের সাফল্যে গোটা এশিয়ার উন্নতি নিশ্চিত হবে । কিন্তু যদি সেই সম্পর্কের উদ্দেশ্য হয় চিনের উপর একযোগে চাপ বৃদ্ধি করা, তাহলে আমরা কঠোরভাবে এর বিরোধিতা করব । কারণ, এর ফলে এশিয়া—প্যাসিফিক এলাকায় ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে ।”

যদিও বিদেশমন্ত্রক মোদি এবং আবের মধ্যে হতে চলা বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনের তারিখ এখনও নিশ্চিত করেনি, তবু সংবাদমাধ্যমসূত্রে দাবি, সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে তাঁদের বৈঠক হতে পারে । জাপান সেই দুই দেশের মধ্যে অন্যতম, যাদের সঙ্গে ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন করে । দ্বিতীয় দেশটি হল রাশিয়া ।

যদিও গত বছরের বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন অসমের গুয়াহাটিতে হওয়ার কথা ছিল । নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের জেরে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল । জুনে লাদাখে ভারত এবং চিনের সেনাবাহিনীর মধ্যে যে রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে গত মাসে জাপান ভারতের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল । দিল্লির একটি থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের তরফে আয়োজিত ‘ইন্ডিয়া—জাপান রিলেশনস ইন দ্য পোস্ট কোভিড এরা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় ভারতে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাতোশী সুজুকি বলেছেন যে, লাদাখ সীমান্তে ভারত—চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (LAC) বরাবর এলাকায় স্থিতাবস্থা বদলের চিনের তরফে কোনও প্রচেষ্টার কড়া বিরোধিতা করছে টোকিও ।

গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদন সম্পর্কে অবসারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ডিশটিংগুইশড ফেলো এবং জাপানিজ় স্টাডিজ় বিষয়ে অন্যতম অগ্রণী ভারতীয় বিশেষজ্ঞ, K V Kesavan, ETV ভারতকে বলেছেন যে ভারত-জাপান সম্পর্ক তৃতীয় কোনও দেশের বিরোধিতা করার জন্য গড়ে ওঠেনি ।

ভারত-জাপানের সম্পর্ক 2014 সালে ‘বিশেষ কৌশলগত এবং বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব’—এর পর্যায়ে উন্নীত হয়, যখন প্রধানমন্ত্রী মোদি পূর্ব এশিয়ার এই দেশে সফর করেছিলেন । কেসাভান বলেছেন, “আমরা (ভারত ও জাপান) পরস্পরের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশদারীরত্বের সম্পর্ক বজায় রাখি এবং আমরা এই এলাকায় শান্তি এবং নৌ—নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র রাখার উদ্যোগে সফল হব । চিন যদিও দক্ষিণ চিন সাগর এবং পূর্ব চিন সাগর এলাকায় উৎপাত করেই চলেছে ।”

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদ ছাড়াও চিন দক্ষিণ চিন সাগর এলাকার আরও অনেক দেশের সঙ্গেই আঞ্চলিক বাদানুবাদে জড়িয়ে রয়েছে । পূর্ব চিন সাগরে, সেনকাকু দ্বীপ (যাকে চিন দিয়ায়ু দ্বীপ বলে) নিয়ে টোকিওর সঙ্গে বেজিংয়ের বিবাদ চলছে । আর গত মাসে যখন চিনের নিরাপত্তীরক্ষীদের নৌকা ওই দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন সাগরে ঢুকে পড়েছিল, তখন তা নিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল জাপান । ভারতকে এইভাবে টার্গেট করতে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে চিন, পাকিস্তানও সেই তালিকায় রয়েছে । আর তা উল্লেখ করে কেসাভান জানিয়েছেন, এটা করে বেজিং আদপে নতুন আঞ্চলিক ক্রমবিন্যাস তৈরি করতে চাইছে ।

তিনি এই প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ করেছেন গত মাসে অ্যামেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের তরফে জারি করা যৌথ বিবৃতির কথা, যেখানে তাঁরা ‘ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় সদাজাগ্রত ত্রিস্তরীয় প্রতিরক্ষামূলক সহযোগিতার আদানপ্রদানের কথা বলেছিলেন, যার মাধ্যমে সেটি অবাধ, মুক্ত, সর্বব্যপী এবং বিকাশশীল হয়ে ওঠে ।”

আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো ভারতও ‘কোয়াড’—এর অংশ, যারা বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য সত্ত্বেও পূর্বদিকে জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে থেকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ইন্দো—প্যাসিফিক এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টারত ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details