দিল্লি, 3 নভেম্বর : ভারত বিশ্বের অন্যতম সেরা বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষেত্র ৷ থাইল্যান্ডের মঞ্চ থেকে এমনই বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাষ্ট্রের মর্যাদা বিলোপের ফলে দেশে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ কমবে ৷ সফরের প্রথম দিনে ব্যাংককে একথাও স্পষ্ট করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷
তিনি বলেন, "বিগত পাঁচ বছরে ভারত বিশ্ব ব্যাঙ্কের বাণিজ্যিক তালিকায় 79টি স্থান এগিয়ে এসেছে ৷ বর্তমানে ভারত বিশ্বের অর্থনৈতিক বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ৷ এটিই চলতি সময়ে ভারতের অর্থনীতিতে সবথেকে সেরা সময় ৷ বিগত 5 বছরে ভারতে 286 বিলিয়ন বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) এসেছে ৷ এটি ভারতে গত 20 বছরের মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় অর্ধেক ৷ আমরা বিশ্বের সেরা 10টি বিনিয়োগ কেন্দ্রের মধ্যে একটি ৷ " ব্যাংককে এক বাণিজ্য সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে যোগদান করতে গিয়ে এমনটাই বললেন প্রধানমন্ত্রী ৷
উত্তর-পূর্ব ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবেশদ্বারে পরিণত করার পরিকল্পনার কথাও এদিন জানান প্রধানমন্ত্রী ৷ ভারত-মায়ানমার-থাইল্যান্ড সড়কপথটি চালু হয়ে গেলেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে ৷ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এমনটাই জানান তিনি ৷
ব্যাংককে এক অনুষ্ঠানে যোগদান করে তিনি বলেন, " আপনারা জানেন দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ নির্মূল করতে ভারত কিছু বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ৷ সিদ্ধান্ত সঠিক হলে সারা বিশ্ব থেকে তার সাড়া মেলে ৷ আমি থাইল্যান্ড থেকেও তা শুনতে পাচ্ছি ৷ "
তিনদিনের থাইল্যান্ড সফরের প্রথম দিনের এই অনুষ্ঠানে ব্যাংককে উপস্থিত ছিলেন প্রায় 5000 ভারতীয় বংশোদ্ভুত ৷ কেন্দ্রীয় সরকার 5 অগাষ্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাষ্ট্রের মর্যাদা বিলোপ করে দুটি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় গত বৃহস্পতিবার ৷ ভারতের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে পাকিস্তান ৷ ঘটনাটিকে আন্তর্জাতিক স্তরেও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ইসলামাবাদ ৷ সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টাও করা হয় ৷ এতকিছুর পরেও ঘটনাটি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ দিল্লি থেকে সোজা জানিয়ে দেওয়া হয়, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনও রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ভারত কখনও বরদাস্ত করবে না ৷ পাশাপাশি 370 ধারার বিশেষ রাষ্ট্রের মর্যাদার কারণে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে ৷ এদিন মঞ্চ থেকে আবারও কাশ্মীর ইশু নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন নরেন্দ্র মোদি ৷ পাশাপাশি, দেশে বাণিজ্যিক উন্নতি ও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়েও জোর সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী ৷
আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দশটি এবং ভারত, চিন-সহ আরও ছয়টি— মোট 16টি দেশের মধ্যে মুক্ত আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর করতে আলোচনা চলছে গত কয়েক মাস ধরে । ব্যাঙ্ককে এই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কথা । যদিও সেই চুক্তি করা নিয়ে একাধিক আপত্তি রয়েছে । কিন্তু বাণিজ্য চুক্তিই লক্ষ্য এই সফরের ৷ সেই কথা মাথায় রেখে ভারতই যে বিদেশি বিনিয়োগের সেরা দশটি কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে, তা জানাতে ভোলেননি প্রধানমন্ত্রী ৷ এর আগেওভারতকে 5 ট্রিলিয়ন অর্থনীতির দেশে তুলে ধরার কথা তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ৷ এ জন্য শুধু দেশের নয়, বিদেশের মাটিতে বসবাসকারী প্রতিটি ভারতীয়র কাছে সাহায্য চাওয়ার কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি ৷
তিন দিনের থাইল্যান্ড সফরে প্রধানমন্ত্রী 16তম ASEAN-ভারত বৈঠক, 14তম পূর্ব এশীয় বৈঠক এবং তৃতীয় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন মোদি ৷ পাশাপাশি সোমবার বার্ষিক পূর্ব এশীয় বৈঠকে প্রায়ুৎ চ্যান-ও-চা -এর সঙ্গেও আলোচনায় বসবেন তিনি ৷