পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

জৈব জ্বালানির মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব গ্রিন এনার্জির দিকে ভারতের পদক্ষেপ

জৈব আরসালান তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম বিশ্বের দেশগুলির সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করছে ভারত। এক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব গ্রিন এনার্জির দিকে নতুন পদক্ষেপ করছে দেশ ।

GREEN ENERGY
ছবি

By

Published : Dec 18, 2019, 2:44 PM IST

দিল্লি, 18 ডিসেম্বর : জৈব আরসালান তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম বিশ্বের দেশগুলির সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করছে ভারত। জত্রোফা গাছ থেকে ইতিমধ্যেই জৈব আরসালান তৈরি করেছে ভারত।
এখন চেষ্টা করা হচ্ছে ভোজ্য তেলকে কীভাবে ডিজেলে পরিণত করা যায়।

এদেশে জৈব জ্বালানি সংক্রান্ত কাজের সবিস্তার বিশ্লেষণ নিম্নরূপ :

জত্রোফা গাছ থেকে সফলভাবে জৈব জ্বালানি তৈরি করার পর ভারতের পেট্রোলিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউট (IIP) এবার চেষ্টা করছে ভোজ্য তেলকে ডিজেলে পরিণত করার। গত মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সমাবেশে IIP-র বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টি হাতে-কলমে করে দেখিয়েছেন। মিথানল ও কিছু রাসায়নিক ব্যবহার করে বিশুদ্ধ ভোজ্য তেলকে ডিজেলে রূপান্তরিত করা সম্ভব। এর ফলে ডিজেলের দামও অনেকটা কমে যায়। IIP-র বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েক বছর ধরেই জত্রোফা গাছ থেকে জৈব জ্বালানি তৈরি করে চলেছেন। বেশ কয়েকটি রাজ্যে বাণিজ্যিক ভাবে জত্রোফা চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। জত্রোফার ফলন বাড়াতে এদেশের কৃষকরা ইজরায়েলি প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছেন।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের মদতে দেশের বহু জায়গায় জ্বালানি হিসাবে ইথানল ব্যবহৃত হয়। ভোজ্য তেল থেকে জৈব জ্বালানি তৈরির কাজও চলছে । জত্রোফা গাছ থেকে IIP-র তৈরি করা জৈব জ্বালানি দিয়ে বহু বছর আগে পরীক্ষামূলক ভাবে দু’টি টু স্ট্রোক ইঞ্জিন সফল ভাবে চালানো হয়েছিল। মহারাষ্ট্র পরিবহন নিগমের কয়েকটি গাড়িও এই জ্বালানি দিয়ে চালানো হয়েছিল। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও বাণিজ্যিক ভাবে জৈব জ্বালানি তৈরির প্রক্রিয়া এখনও শুরুই হয়নি। তবে বিশুদ্ধ ভোজ্য তেল থেকে জৈব জ্বালানি তৈরির প্রক্রিয়া গতি পেয়েছে। জত্রোফা থেকে তৈরি ৩৩০ কেজি ডিজেলের সাহায্যে একটি বিমানও উড়েছিল।

স্পাইসজেটের সেই বিমান গত বছর দিল্লি থেকে দেহরাদূন পর্যন্ত ৪৫ মিনিটের যাত্রাপথ পাড়ি দিয়েছিল। চলতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের সময় বায়ুসেনার AS-32 মালবাহী বিমান ওড়ানো হয়েছিল জৈব জ্বালানি দিয়ে। জত্রোফা গাছে থাকে ৪০ শতাংশ তেল। অ্যাভিয়েশন টার্বাইন ফুয়েল (ATF)-এর সঙ্গে মিশিয়ে এই বিমান ওড়ানো হয়েছিল। বর্তমানে মাওবাদী অধ্যুষিত ছত্তিশগড়ে পাঁচশো কৃষক জত্রোফা চাষ করছেন। প্রাকৃতিকভাবে প্রায় 400 ধরনের বীজ থেকে জৈব জ্বালানি তৈরি করা হয়। ATF-এর সঙ্গে কেরোসিন মিশিয়ে চালানোর ফলে আবহাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রায় 4.9 শতাংশ ঘটে বিমান পরিবহণের জন্য। IIP-এর প্রবীণ বিজ্ঞানী ডক্টর রঞ্জন রায়ের দাবি, জৈব জ্বালানির ব্যবহারের ফলে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। ভারতে জেট বিমানের ব্যবহারের জন্য বছরে 60-70 লাখ টন ATF-এর প্রয়োজন হয়। এর অর্ধেক আসে জৈব জ্বালানি থেকে। বাকি অর্ধেকের এক তৃতীয়াংশ যদি ভোজ্য তেল থেকে পাওয়া যায়, তা হলে ATF-এর খরচ কমানোর পাশাপাশি তা কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও অনেকটাই কমাবে।

ডিজেলের সাহায্যে এক লিটার ভোজ্য তেল থেকে 850-950 মিলিলিটার জৈব জ্বালানি তৈরি করা যায়। ইন্ডিয়ান ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস এজেন্সি (FSSAI) হোটেল ও রেস্তরাঁয় ব্যবহারের পর ভোজ্য তেলের পুনর্ব্যবহারের উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ভোজ্য তেল থেকে পাওয়া জৈব জ্বালানি দিয়ে বিমান ও গাড়ি চালালে তা পরিবেশে কার্বন ফুটপ্রিন্টও রাখবে না। তাই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জৈব জ্বালানি তৈরির চেষ্টা অনবরত হয়েই চলেছে। ইতিমধ্যেই ন’টি রাজ্য ও চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে আখ থেকে ইথানল নিষ্কাশন করে তা দিয়ে ইঞ্জিন চালানো হচ্ছে । 2005 সালে ইথানল তৈরির ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ ছিল। চিরাচরিত জ্বালানি ও জৈব জ্বালানির সাহায্যে ভারত দেশে ডিজেলের চাহিদার 20 শতাংশ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে।

2007 সালে ইস্ট এশিয়ান এনার্জি সিকিউরিটিতে 10 আসিয়ান দেশ (অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম, লাওস, মায়ানমার এবং কম্বোডিয়া), চিন, জাপান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কিছু চুক্তি সই করে ভারত। এই চুক্তি অনুসারে জৈব জ্বালানি নিয়ে পরীক্ষা ও উন্নতিতে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চিরকালীন দুই বড় সমস্যা, বায়ু দূষণ রোধ এবং জ্বালানির সঞ্চয় ঠিক রাখতে একেবারে সঠিক পথে এগোচ্ছে দেশগুলি।

জৈব জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমেরিকা, ব্রাজিল, কানাডা, কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলা অনেকটা পথ অতিক্রম করেছে। গোটা বিশ্বে উৎপাদিত মোট জৈব জ্বালানির 40 শতাংশ তৈরি হয় অ্যামেরিকাতে। অ্যামেরিকায় বছরে 3-4 ট্রিলিয়ন টন জৈব জ্বালানি তৈরি হয়। এর পরেই রয়েছে ব্রাজিল। এই দেশে বছরে আড়াই বিলিয়ন টন জৈব জ্বালানি তৈরি হয়। এক টন তেল পোড়ালে 3.15 টন চারকোল গ্যাস তৈরি হয়।দূষিত তেলের পরিবর্তে নিরাপদ জৈব জ্বালানি তৈরির চেষ্টা করে চলেছে বিশ্বের বহু দেশ। আমেরিকা ব্যবহার করা ও ব্যবহার না করা ভোজ্য তেল এবং পশুর চর্বি থেকে জৈব জ্বালানি তৈরি করছে। 20 শতাংশ জৈব জ্বালানি এবং 80 শতাংশ সাধারণ ডিজেলের সাহায্যে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের গাড়ি এবং সেনাবাহিনীতে ব্যবহারের গাড়িতে এই জাতীয় জৈব জ্বালানি ব্যবহার হচ্ছে। 2018 সালে অ্যামেরিকা বড় আকারের বিমানের জন্য জৈব জ্বালানি তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সর্বত্র বিভিন্ন শস্য, কাঠের গুঁড়ো, শ্যাওলা, বিভিন্ন প্রাণীর বর্জ্য থেকে বায়ো-মিথেন, বায়ো-ডিজেল প্রভৃতি জৈব জ্বালানি তৈরির চেষ্টা চলছে। আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সি-র লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে এবং দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য 2030 সালের মধ্যে বিশ্ব জুড়ে জৈব জ্বালানির উৎপাদন তিন গুণ করতে হবে।

পাশাপাশি একটি চিন্তাও রয়েছে, এই জাতীয় ফসলের চাষ বাড়লে খাদ্য শষ্যের চাষ কমতে পারে এবং এর ফলে বিশ্ব জুড়ে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

ABOUT THE AUTHOR

...view details