যখন ভারত তার ভূখণ্ড রক্ষা করতে চিনের সঙ্গে গুরুতর সংঘাতে ব্যস্ত , ঠিক সেই সময় গত রবিবার বিহারের পূর্ব চম্পারণ জেলায় একটি নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ বন্ধ রাখার নেপালের সিদ্ধান্তে অবনতির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত-নেপাল সম্পর্ক ।
এই নিয়ে চলতি মাসে দ্বিতীয়বার দুই দেশের সীমান্তে সমস্যা দেখা দিল । 12 জুন একজন ভারতীয় নাগরিক মারা যান, এবং অন্তত দু'জন আহত হন , যখন বিহারের সীতামারি জেলায় একদল মানুষের ওপর নেপালের সশস্ত্র পুলিশ গুলি চালায় । ভারতীয় কর্তৃপক্ষ একে ‘স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা ও আদেশ ইশু’ আখ্যা দেয় । কিন্তু রবিবারের (21 জুন) ঘটনাক্রম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও গভীর সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত করছে ।
এইসব ঘটনা নেপাল সরকারের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রে অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে ঘটছে । যেখানে কালাপানি, লিপুলেখ আর লিম্পিয়াধুরাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এতে দুই দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা সংঘাতের সুরটাই ধরা পড়ছে ।
2015 সালে ভারতের দ্বারা নেপালের অর্থনৈতিক অবরোধকেই ভারত-নেপাল বিশেষজ্ঞরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার জন্য দায়ি করছেন । পাশাপাশি তাঁরা ভারত-নেপাল তিক্ততার সুযোগ নিতে চিনের প্রয়াসের দিকেও ইঙ্গিত করছেন ।
প্রাক্তন কূটনীতিক এবং ভারত-নেপাল সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এস ডি মুনি বলেন , “তৃতীয় শক্তির প্রভাব সবসময়ই ছিল, এবং আমি মনে করি যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নেপালের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক আরও মজবুত হওয়ায় বর্তমান নেপালি নেতৃত্বকে অনেক দিক থেকেই উৎসাহিত করেছে ।”
দিল্লির অবজ়ার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো কে ইহোম বলেন , কালাপানি-বিবাদ ভারত ও নেপালের মধ্যে দীর্ঘদিনের ইশু , যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে ফেলা উচিত ছিল ।
কে ইহোম ETV ভারতকে বলেন , “সমস্যাটা হচ্ছে কালি নদীর উৎস নিয়ে । ভারত এর একরকম ব্যাখ্যা দেয় , আবার নেপালেরও নির্দিষ্ট ব্যাখা আছে ।”
তিনি বলেন , “ সীমান্ত-বিবাদ এবং আঞ্চলিক সমস্যাগুলি আবেগের বিষয় , তাই দু'পক্ষই এর সমাধান করতে সক্ষম হয়নি ।”
নেপাল এই ইশু প্রথমবার তোলেনি । ২০১৫ সালেও , ভারত-চিন যৌথবিবৃতিতে লিপুলেখ পাসকে অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করেছিল নেপাল ।
২০১৫ সালের ১৫ মে ভারত ও চিন তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেছিল , “বাণিজ্যের পণ্যের তালিকা নিয়ে আলাপ-আলোচনায় দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে । নাথু-লা, কিয়াংলা/লিপুলেখ পাস এবং শিপকি-লাতে সীমান্ত বাণিজ্যের প্রসারে সম্মত হয়েছে দুই দেশ ।”
অধ্যাপক এস ডি মুনি অবশ্য এটা পুরানো বিবাদ বলে মানতে নারাজ । কারণ 1954 সালে ভারত-চিন পঞ্চশীল চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সময় , লিপুলেখ পাসকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে নেপাল কোনও প্রতিবাদ করেনি ।
অধ্যাপক এসডি মুনি বলেন , “ চিন শুধু 2015 সালেই লিপুলেখকে ভারতের অংশ বলে মানেনি, এছাড়াও 1954 সালে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চুক্তির সময়ও আট থেকে ন'টি রুটের কথা বলা হয়েছিল । যার মাধ্যমে ভারত ও চিনের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান চলবে ।”
অধ্যাপক মুনি উল্লেখ করেন, “ ২০১৫ সালে চিনারা যেটাই করে থাকুক , সেটা তাদের আগের অবস্থানেরই পুনরাবৃত্তি । নেপালের অবস্থানে বদল হয়েছে , ভারতের নয় ।”
যদিও , বহু বিশেষজ্ঞকে যা অবাক করেছে এবং যার থেকে বাইরের প্রভাবের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে , তা হল যে গতির সঙ্গে নেপাল সেই নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিল , যেখানে ভারতের কালাপানি , লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেইসময় , যখন লাদাখে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনী একটা উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে পরস্পরের মুখোমুখি ।
গত সপ্তাহেই গালওয়ান উপত্যকায় পিএলএ-র সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের 20 জন জওয়ান শহিদ হন ।
নেপালের নতুন ম্যাপ অনুমোদনের পিছনে চিনের হাত?