দিল্লি, 3 জুন : লাদাখ সীমান্ত সমস্যায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হবে । এনিয়ে ইতিমধ্যেই কূটনৈতিক ও সেনা পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে । ভারত ও চিনের বিদেশ মন্ত্রক আগেই জানিয়ে দিয়েছিল একথা । সেই সূত্র ধরেই 6 জুন (শনিবার) পূর্ব লাদাখের কাছে দুই দেশের সেনা পর্যায়ে আলোচনা হবে ।
শনিবার লাদাখের ভারত সীমান্ত চুশুল-মোল্ডোতে দুই দেশের সেনা প্রতিনিধিদের মধ্যে এই বৈঠক হবে । ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন 14 নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনেরাল হরিন্দর সিং । সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই দুই দেশের সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে । যার ফল শনিবারের সেনা পর্যায়ে বৈঠক । এর আগেও সীমান্তে মোতায়েন থাকা দুই দেশের সেনা প্রধানদের মধ্যে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে । তবে তাতে কোনও সমাধানের পথ বেরোয়নি ।
সীমান্ত সমস্যার খবর প্রকাশ্যে আসে মে মাসের শুরুর দিকে । চিন নিজেদের LAC (লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল)-এর পাশে নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য রাস্তার কাজ শুরু করেছিল । এরপর ভারতও বর্ডার রোডস অর্গানাইজ়েশনকে দিয়ে LAC-র পাশের নেটওয়ার্ক তৈরি করার কাজ শুরু করে । কিন্তু তাতে বাধা দেয় চিনের সেনা । রুখে দাঁড়ায় ভারতীয় সেনা । এর জেরে লাদাখের তিন জায়গায় মুখোমুখি হয় দুই দেশের সেনা । ক্রমশ বাড়তে থাকে উত্তেজনা । এরপর মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে লাদাখ গেছিলেন সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে । পরে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে নর্দার্ন কম্যান্ডের আধিকারিকদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করেন । এর কয়েকদিন পরই সীমান্তের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে তিন সেনার প্রধানদের সঙ্গে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং । স্থল সেনাপ্রধান মনোজমুকুল নারাভানের কাছ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেন তিনি । আলাদা করে তিন সেনার প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী । সেদিনই এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিন সেনার প্রধান জেনেরাল বিপিন রাওয়াত ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল । এর মাঝে ট্রাম্পের টুইট ঘিরেও বিস্তর জল্পনা শুরু হয় । ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ।
এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে খানিকটা হলেও শান্তির ভাবনা প্রতিফলিত হয় । বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, সীমান্ত সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে মেটানোর জন্য দুই দেশের মধ্য়ে কথা হয়েছে । এনিয়ে সেনা ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চলছে । বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, "সীমান্ত ইশুতে বেজিং ও দিল্লি তৎপর । আমাদের সেনাবাহিনীর অত্যন্ত দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে । সমস্ত নিয়ম, প্রোটোকল ও উভয় দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তিকে যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে । তবে একইসঙ্গে আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করব ।" একইরকম সুর শোনা যায় চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানের গলায় । তিনি বলেন, "সীমান্তে ভারতের সঙ্গে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা স্থিতিশীল । তা সামগ্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে । সীমান্ত ইশুতে চিনের অবস্থান স্পষ্ট । আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে বিষয়গুলি সমাধান করার জন্য উভয় দেশেরই যথাযথ পরিকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে ।"
আগেই উভয় দেশের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি ইঙ্গিত দিয়েছিল । এবার সেই আলোচনার মাধ্যমে সামাধানের দিকেই এগোচ্ছে ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা । আপাতত শনিবারের সেনা পর্যায়ের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব ।