দিল্লি, 28 জানুয়ারি : এবারের সাধারণতন্ত্র দিবসের ভারতের প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট জাহির বোলসোনারো । সাধারণতন্ত্র দিবসের আগের দিন 25 জানুয়ারি এক বিশাল প্রতিনিধিদল নিয়ে ভারতে আসেন ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট । তাঁর সঙ্গে ভারত সফরে রয়েছেন 59 জনের এক বিশাল বাণিজ্য প্রতিনিধিদল । যাঁরা ভারতের বণিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন, বৈঠক করবেন ।
বরাবরই বোলসোনারো অন্যতম একটি বিতর্কিত এবং বহু চর্চিত চরিত্র । 55 শতাংশের বেশি আসন নিয়ে ব্রাজ়িলের ক্ষমতায় এসেছেন বোলসোনারো । অ-বামপন্থী মানসিকতার জন্য বরাবরই আলোচনায় থেকেছেন ব্রাজ়িলের এই নতুন প্রেসিডেন্ট । প্রাক্তন সেনা কর্মী বোলসোনারো 2018 সালে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনীত হন । তারপর থেকে একাধিকবার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করতে দেখা গেছে তাঁকে । দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকছিল । বিদেশি বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখিয়ে বোলসোনারো 2018 সালে ব্রাজিলের ক্ষমতায় আসেন । বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও বোলসোনারো ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে এ দেশ সফর করেন ।
স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্ন উঠে আসে । কেন ব্রাজ়িল ভারতের অন্যতম প্রধান বন্ধুরাষ্ট্র । এর কারণগুলি অনুধাবন করা মোটেই শক্ত কাজ নয় । কূটনৈতিকভাবে ব্রাজ়িল ভারতের অন্যতম অংশীদার । 2006 সাল থেকে ভারত এবং ব্রাজ়িলের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় থেকে নিবিড়তর হয়েছে । ভারত এবং ব্রাজ়িল উভয় রাষ্ট্রই BRICS (ব্রাজ়িল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) , IBSA (ভারত, ব্রাজ়িল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) এবং জি-টোয়েন্টি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম হচ্ছে এই দুটি দেশ । জি ফোর ( ব্রাজ়িল, জার্মানি, ভারত এবং জাপান) । ব্রাজ়িল এবং ভারত একে অপরকে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ-নিবিড় ভাবে সাহায্য করেছে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে । রাষ্ট্রসংঘে বরাবর সন্ত্রাস দমন ইশুতে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে ব্রাজ়িল ।
অর্থনীতির দিক থেকেও ভারত এবং ব্রাজ়িলের অবস্থান মোটের উপর প্রায় একই রকম । 2010 সালের পর GDP-র দিক থেক ভারত এবং ব্রাজ়িলের অবস্থান প্রায় একই রকম । উভয় দেশ একইভাবে নিজেদের অর্থনৈতিক কাঠামো এগিয়ে নিয়ে গেছে । বর্তমানে ভারতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছুটা মন্দা দেখা দিয়েছে । স্বাভাবিকভাবেই ভারতের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্রাজ়িল । উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় । অপরিশোধিত তেলের অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ব্রাজ়িল । উপসাগরীয় অঞ্চল এলাকায় ভারত এবং ব্রাজ়িল উভয় দেশ যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে । ভারতের অন্যতম আমদানিকারক দেশ হচ্ছে ব্রাজ়িল । ব্রাজ়িল থেকে কফি, সোয়াবিনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিপুল চাহিদা সম্পন্ন দ্রব্যগুলি নিজের দেশে আমদানি করে ভারত । অন্যদিকে আবার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ব্রাজ়িল ভারতের মুখাপেক্ষী । ব্রাজ়িলে আছে বিশ্বের সবথেকে ঘন অরণ্য আমাজ়ন। এখানকার কাঠ ভারত নিজের দেশে আমদানি করে । ব্রাজ়িল এই মুহূর্তে মাংস উৎপাদনকারী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রথম । স্বাভাবিকভাবেই ব্রাজ়িল থেকে বিপুল পরিমাণ মাংস ভারত দেশে আমদানি করে ।
সামাজিক দিক থেকেও ভারত এবং ব্রাজ়িলের মধ্যে অদ্ভুত একটা মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায় । ব্রাজ়িলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভারতকে অংশগ্রহণ করতে এবং আমন্ত্রণ জানাতে দেখা গেছে । ব্রাজ়িলের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারত বরাবর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে । একই সঙ্গে সে দেশের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ক্ষেত্রে ভারত সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে । শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্রাজ়িলের প্রতি সাহায্য করতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা করেনি ভারত । আর এভাবেই ভারত এবং ব্রাজ়িল একে অপরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত নির্ভরশীল বন্ধু হিসেবে পথ চলা শুরু করেছে ।
ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর এই ভারত সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে পনেরোটি MoU স্বাক্ষরিত হবে । কল কারখানা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ওষুধ, শক্তি, খনি, পশুপালন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সরঞ্জাম প্রদান-সহ একাধিক বিষয়গুলির উপর উভয় দেশের মধ্যে MoU স্বাক্ষরিত হবে । সন্দেহ নেই এই চুক্তি উভয় দেশের অর্থনীতিকে অত্যন্ত মজবুত করবে ।