পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

জাতীয় হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট ডে - Transplantation of Human Organs Act (THOA) 1994

2003 সালে দেশে প্রথম হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট অপারেশনের উদযাপনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ি 3 অগাস্টকে " ন্যাশনাল হার্ট ট্রান্সপ্ল্যন্ট ডে" হিসেবে পালনের ঘোষণা করেছিলেন । সেই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছিলেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের (AIIMS) অঙ্গ পুনরুদ্ধার ব্যাঙ্কিং সংস্থা দেশজুড়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সাহায্য করবে ।

heART
heart

By

Published : Aug 3, 2020, 10:28 PM IST

ভূমিকা

নরম্যান শামওয়েকে হার্ট প্রতিস্থাপনের জনক বলা হয় । অ্যামেরিকান সার্জন নরম্যান শামওয়ে 1958 সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কুকুরের হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেন । সেটাই ছিল প্রথম কোনও হার্টট্রান্সপ্ল্যান্ট । যদিও বিশ্বের প্রথম প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হার্ট প্রতিস্থাপন হয়েছিল 1967 সালের 3 ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের গ্রুয়েট শিউর হাসপাতালে । প্রতিস্থাপন করেছিলেন ক্রিশ্চিয়ান বার্নার্ড । অ্যাড্রিয়ান ক্যান্ট্রোয়েটস 1967 সালের 6 ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম পেডিয়াট্রিক হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেন এবং নরম্যান শামওয়ে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে 1968 সালের 8 জানুয়ারি অ্যামেরিকায় প্রথম প্রাপ্ত বয়স্ক হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেন ।

ক্রিশ্চিয়ান বার্নার্ড সফলভাবে পেডিয়াট্রিক হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার পর ভারতে ডাঃ পি কে সেন মানুষের শরীরে প্রথম হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের চেষ্টা করেছিলেন । তবে তাঁর প্রথম এবং পরবর্তী রোগীরা মারা যান । 1994 সালে ভারতে প্রথম সফল হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করেছিলেন দিল্লি AIIMS-র ডাঃ পি ভেনুগোপাল। এরপর ডাঃ কে এম চেরিয়ান ভারতে প্রথম পেডিয়াট্রিক এবং প্রথম হার্ট লাঙ ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছিলেন।

2003 সালে দেশে প্রথম হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট অপারেশনের উদযাপনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ি 3 অগাস্টকে "নাশনাল হার্ট ট্রান্সপ্ল্যন্ট ডে" হিসেবে পালনের ঘোষণা করেছিলেন । সেই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছিলেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের (AIIMS) অঙ্গ পুনরুদ্ধার ব্যাংকিং সংস্থা দেশজুড়ে অঙ্গপ্রতিস্থাপনের সাহায্য করবে । তাঁর ধারণা ছিল, এই দুটি সিদ্ধান্ত দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন অভিযানে পথ দেখাবে । তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী প্রয়াত সুষমা স্বরাজ জানান, অ্যামেরিকা ও ইংল্যান্ডের পরে ভারত তৃতীয় দেশ হিসেবে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছে । যা গোটা দেশের কাছে গর্বের বিষয়।

ভারতের আইনি কাঠামো

1994 সালের 7 জুলাই "মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিল " রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে । মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন ( THOA)1994 দেশজুড়ে চিকিৎসার জন্য জন্য মানব অঙ্গের অপসারণ, সংরক্ষণ ও প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা ও মানবঅঙ্গের ব্যবসায়ীক লেনদেন বন্ধ করার ব্যবস্থা করে । অন্ধ্রপ্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীর বাদে সমস্ত রাজ্যই এই আইন গৃহীত হয় । এই দুই রাজ্য মানবঅঙ্গ প্রতিস্থাপনের আলাদা আইন রয়েছে ।

মস্তিষ্কের স্টেম মৃত্যুকে ভারতে মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনের (THOA) অধীনে অন্য অনেক দেশের মতো আইনি মৃত্যু হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে । যা মৃত্যুর পরে অঙ্গদানের ধারণাকে বৈপ্লবিক রূপ দিয়েছে ।

ভারত সরকার মানবঅঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন (THOA) 1994 -র সংশোধন ও সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল । এর ফলস্বরূপ, মানবঅঙ্গ প্রতিস্থাপন (সংশোধনী) আইন 2011 কার্যকর করা হয়েছিল ।

এই আইনের মাধ্যমে ব্রেন ডেথ সার্টিফিকেশন বোর্ডের সংবিধান সরল করা হয়েছে । যেখানে নিউরোফিজিশিয়ান বা নিউরোসার্জন পাওয়া যাবে না সেখানে কোনও অ্যানাস্থেটিস্ট বা অন্য কোনও চিকিৎসক সেই জায়গায় বোর্ডের সদস্য হতে পারেন, তবে তিনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট দলের সদস্য হতে পারবেন না ।

NOTTO-র জাতীয় নেটওয়ার্ক বিভাগ অঙ্গ ও কলা সংগ্রহ, বিতরণ এবং দেশে অঙ্গ এবং কলা দান ও প্রতিস্থাপনের রেজিস্ট্রির জন্য দেশডুড়ে সমন্বয়ের শীর্ষ কেন্দ্র হিসাবে কাজ করবে।

ভারতে হার্ট ট্রান্সপ্যান্ট

শেষ পর্যায়ে হার্টের সমস্যায় ভুগতে থাকা শিশুদের মধ্যে প্রায় একচতুর্থাংশ 6 মাসের মধ্যে মারা যায় এবং তাদের বেশিরভাগই দুই বছরের বেশি বেঁচে থাকে না।

2018 সালে ভারতে 241 টি হার্ট ট্রান্সপ্যান্ট হয়েছিল । চিকিৎসকরা বলছেন , ভারতে প্রায় দুই লক্ষ লোকের প্রতিবছর হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রয়োজন হয়, তবে খুব কম লোকই সঠিক সময়ে চিকিৎসার সুযোগ পায় ।

তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং তেলঙ্গানা এই চারটি রাজ্যে দেশের ৯৫ শতাংশ প্রতিস্থাপন হয়।

বছর অঙ্গদানের সংখ্যা
2014 54
2015 110
2016 237
2017 294
2018 241

প্রতিবন্ধকতা ও প্রক্রিয়া

যদিও ডাঃ পি ভেনুগোপাল 194 সালে ভারতে প্রথম সফল হার্ট ট্র্যান্সপ্যান্ট করেন । তবুও দেশে AIIMS এবং অ্যাপোলো-র মতো হাতো গোনা কয়েকটি হাসপাতালেরই স্থায়ি হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম রয়েছে।

যেসমস্ত রোগিরা হার্টের প্রতিস্থাপনের জন্য দাতার অপেক্ষা করছে তাদের আরও কিছুটা সময় দেওয়ার জন্য ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইসগুলো (VADs) ব্যবহার করা হয়।

পরিকাঠামোগত অভাব, লজিস্টিকাল সীমাবদ্ধতা এবং অঙ্গদানের সাথে যুক্ত জনশ্রুতি ও অনিচ্ছার জেরে ভারতে হার্ট প্রতিস্থাপনের হার "অতিশয় নিম্নতম" ।

ভারতে বছরে প্রায় 50000 ব্যক্তির হার্টের প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয়, তবে প্রতিস্থাপন করা হয় মাত্র 10 থেকে 15টি হার্ট ।

হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য চারটি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে : সঠিক দাতা, , সঠিক রোগী, সঠিক ডাক্তার এবং সঠিক জায়গা। দাতার শরীর থেকে হার্ট বের করার পরে 4-6 ঘন্টার মধ্যে তা প্রতিস্থাপন করতে হয় ।

প্রাকৃতিক কার্ডিয়াক মৃত্যুর পরে কেবল কয়েকটি অঙ্গ / কলা দান করা যায় (যেমন কর্নিয়া, হাড়, ত্বক এবং রক্তনালী) এদিকে মস্তিষ্কের স্টেম মৃত্যুর পরে কিডনি, হার্ট, লিভার এবং ফুসফুসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি সহ প্রায় 37 টি বিভিন্ন অঙ্গ এবং কলা দান করা যায় ।

হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টে সমস্যা হ'ল বিপুল ব্যয়। সার্জারির জন্য 8-10 লাখ টাকা ব্যায় হয় যদি কোনও বড় ধরনের জটিলতা না ঘটে। বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বীমা সংস্থা হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য অর্থ প্রদান করে না । এটা কেবল সার্জিরির ব্যয় নয়, দীর্ঘমেয়াদী ব্যয়, পর্যায় ক্রমে দীর্ঘদিন ধরে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা চলে । ইমিউনোসপ্রেশন, বারবার হার্টের পরীক্ষা করা, সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা - এই সমস্ত চিকিৎসায় বিভিন্ন পর্যায়ে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়।

চিকিৎসকদের অনুমান যে প্রতিস্থাপনের পরে একজন রোগীর জন্য প্রথম বছরে প্রায় এক থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হয় । যদিও ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রাপকরা সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে । তবে তাদের সবসময় ওষুধ খেতে হয় । দিনের শেষে, এটা রোগির শরীরের বাইরের অঙ্গ । প্রথম 2-3 বছর পরে, হার্ট প্রত্যাখ্যানের হার কমে আসে তাই ওষুধ কমিয়ে দেওয়া হয় ।

প্রাথমিক পর্যায়ে, প্রতিস্থাপনের এক বছর পরে 80-85 শতাংশ রোগি বেঁচে থাকে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details