কলকাতা, 18 জুলাই: কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে আরও একবার প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের, বিশেষত গ্রামীণ ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে গেল ৷ ভারতের গ্রামীণ ক্ষেত্র বরাবরই শহুরে জীবনের থেকে পিছিয়ে রয়েছে ৷ ধীরগতিতে উন্নয়নের প্রধান কারণটি কেবল আর্থিক সম্পদের ঘাটতি নয়, এরসঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কার্যকরী জ্ঞানের অভাব, শিক্ষার অভাব এবং গ্রামীণ মানুষের চাহিদা পূরণে পশ্চিমী প্রযুক্তির ব্যর্থতাও দায়ী ৷ IIT খড়গপুরের গবেষকরা এই বিভেদকে মেটাতে গ্রামে কর্মসংস্থানের জন্য কৃষি ও অন্যান্য নতুন প্রযুক্তি এনেছে ৷
IIT খড়গপুর কৃষি উন্নয়ন কেন্দ্র উন্নত কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন, যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তির প্রচলন ও বিভিন্ন কৃষি সংক্রান্ত যন্ত্রাংশের আবিষ্কার করেছে ৷ এই প্রযুক্তিগুলির মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র সেচব্যবস্থা, উদ্ভিদ ও ফসল রোপণ, চিনাবাদাম উৎপাদন,শক্তিচালিত ট্রান্সপ্লান্টার ও আল্ট্রাসোনিক স্প্রেয়ার ৷ কৃষি ব্যতিত যে প্রযুক্তিগুলি আবিষ্কার ও প্রচলন করা হয়েছে সেগুলি হল ঢেকি, পাটের দড়ি তৈরি, পাপোশ তৈরি, অম্বর চরকা, ধান ঝাড়াই মেশিন ৷ এছাড়াও ধুয়োহীন চুল্লি, পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে এই প্রকল্পে ৷
এই উদ্যোগের বিষয়ে IIT খড়গপুরের ডিরেক্টর অধ্যাপক বিরেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘ভারত সরকারের তরফ থেকে গ্রামীণ ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণের জন্য বিশাল অঙ্কের ভরতুকি দেওয়া হয় কিন্তু কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে বাজার তৈরিতে সেই অর্থ সঠিকভাবে বিনিয়োগ করা হয়নি ৷ IIT খড়গপুরের বিশেষজ্ঞরা নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করছে, যা গ্রামে বসবাসকারী মানুষদের পক্ষে উপযুক্ত ৷’’
এই গ্রোগ্রামের অন্যতম প্রধান গবেষক অধ্যাপক কমলেশ তিওয়ারি জানান, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার 2500 কৃষককে ক্ষুদ্র সেচ ও সুরক্ষিত কৃষিব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৷ বহু কৃষক ইতিমধ্যেই এই কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন এবং কৃষিকাজে ও মজুরের খরচ হ্রাস, কৃষিজমির উর্বরতা বৃদ্ধি সম্পর্কে জানিয়েছেন ৷
এছাড়াও কৃষি ও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও গ্রামীণ উন্নয়ন কেন্দ্রের তরফ থেকে মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যন্ত্রচালিত কৃষিকাজ ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৷ IIT খড়গপুর ‘‘উন্নত ভারত অভিযান’’ ও ‘‘ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ ফর ডিজ়াইন ইনোভেশন’’-র মতো জাতীয় প্রকল্পগুলির আর্থিক অনুদানগুলিকে এই প্রকল্পে ব্যবহার করেছে ৷ এই বিষয়ে অধ্যাপক কমলেশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘কৃষিকাজে প্রযুক্তির ব্যবহার বা স্টার্টআপ ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে যাতে কর্মসংস্থান হয়, সেই বিষয়ে আমরা নজর রাখছি ৷ অসম, মণিপুর, ত্রিপুরা-সহ বিভিন্ন উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে এই নতুন প্রযুক্তি সাদরে গ্রহণ করা হয়েছে ৷ এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতেও এই প্রযুক্তি গ্রহণ করা হয়েছে ৷
এই বছরের শুরুর দিকে ভারত সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের ‘ইন্ডিয়া ব্র্যান্ড ইকুইটি ফাউন্ডেশন’ জানিয়েছিল কৃষি, বনপালন ও মৎস্য চাষের মাধ্যমে গ্রামীণ ক্ষেত্র থেকে প্রায় 20 ট্রিলিয়ন লাভ হতে পারে ৷ পাশাপাশি মে মাসে অর্থমন্ত্রকের তরফ থেকেও কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য 1.5 ট্রিলিয়ন আর্থিক অনুদানের ঘোষণা করা হয় , এরমধ্যে 400 বিলিয়ন গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি স্কিমের জন্য নির্ধারিত করা হয় ৷ এই বিষয়টি উল্লেখ করে IIT খড়গপুরের ডিরেক্টর বীরেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘ভারত দ্রুতগতিতে ডিজিটাইজ়েশনের দিকে এগোচ্ছে ৷ এই অগ্রগতি বজায় রাখার জন্য গ্রামীণ ও কৃষি ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়করণের প্রয়োজন ৷ গ্রামীণ জীবিকা কেবল উৎপাদন ও উপার্জনই বৃদ্ধি করবে না, গ্রামীণ ও কুটির শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং গ্রামীণ অঞ্চলে উদ্যোগপতিদের নতুন সুযোগ এনে দেবে ৷