পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

আদালত CAA বিলের বিষয়টি দ্রুত দেখলে এ পরিস্থিতি হত না : খুরশিদ - শাহিনবাগ

কংগ্রেস দল বিচক্ষণতার সঙ্গে CAA-র বিরোধিতা করেছে এবং নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের বর্বরতার প্রতিবাদও করেছে ৷ আমাদের নেতা রাহুল গান্ধি ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ভাডরা ইতিমধ্যেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে পুলিশের বর্বরতার অভিযোগ জানিয়েছে ৷ আমরা মানুষকে সকলভাবে সাহায্য করবো ৷ আমাদের রাজ্য নেতৃত্বকেও এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বলা হয়েছে ৷ অমিত অগ্নিহোত্রীর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এমনই মন্তব্য করলেন সলমন খুরশিদ ৷

Salman Khurshid on CAA
সলমান খুরশিদ

By

Published : Feb 26, 2020, 8:21 PM IST

প্রশ্ন: নাগরিকত্ব বিল ও NRC-র বিপক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এই বিলের সমর্থনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে দিল্লির রাস্তায় সন্ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ৷ এই বিষয়ে আপনার কী মূল্যায়ন?

উত্তর: আমার মতে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ৷ সরকার এমন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা আমরা আইনজীবী হিসেবে সম্পূর্ণভাবে অস্থিতিশীল বলে মনে করি ৷ এর কোনও বৈধ উদ্দেশ্য নেই ৷ তবে আদালত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং বিষয়টি আদালতেরই বিচারাধীন ৷ যদি আদালত এই বিষয়টিকে দ্রুত গ্রহণ করত, তাহলে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না ৷ সরকার সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছে । মানুষের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে । দায়িত্বশীল সরকার হিসাবে উচিত যেসকল বিষয় নিয়ে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে, তা এমন ভাবে সামাল দেওয়া যাতে সেসব উদ্বেগের বিষয় আদৌ বৈধ কি না, তা জানা সম্ভব ৷ কিন্তু এই সরকার সবকিছুকেই নস্যাৎ করছে ৷ সংসদে তাদের সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এই আইন পাশ সম্ভব হলেও তা বাস্তবে প্রণয়নের সময় যখন জনতার মধ্যে সংশয় রয়েছে, তখন দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে সরকার চোখ বুজে রয়েছে ৷

প্রশ্ন: কিন্তু একদল নাগরিক অভিযোগ করছেন যে CAA-র বিরুদ্ধে আন্দোলন জনগণের রাস্তা আটকাচ্ছে এবং যাতায়াতে অসুবিধার সৃষ্টি করছে ৷ সুপ্রিম কোর্টও এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে ৷ এই বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ?

উত্তর: বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যেখানে ধরনা চলছে, সেখানে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে ৷ তবে বিগত কয়েকদিনে সরকারের সমর্থনে একদল ব্যক্তি রীতিমতো হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছে ৷ আপনি সমর্থন করতেই পারেন ৷ কিন্তু সমর্থন প্রদর্শনে অস্ত্র ব্যবহার এবং হিংসা তৈরি করে, আগুন লাগিয়ে বা অন্য কোনওভাবে সম্পত্তি ধ্বংস করা কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য় নয় ৷

প্রশ্ন: এই সংঘর্ষগুলি কি পরিকল্পনামাফিক?

উত্তর: হয়তো ৷ CAA বিরোধী আন্দোলনগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে স্বতঃস্ফূর্ত ৷ এখানে কোনও নেতা বা রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি নেই ৷ এ ধরনের তৃণমূলস্তরের প্রতিবাদ কখনও দেখিনি ৷ আমি এই আন্দোলনকে পরিবারকেন্দ্রিক আন্দোলন বলে মনে করি৷ ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে আসছে এবং এখানেই তাদের ক্লাস হচ্ছে ৷ আমি দিল্লির বাইরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ এটি দিল্লির ঘটনারই সম্পূর্ণ প্রতিফলন ৷

প্রশ্ন: কংগ্রেস CAA-র কঠোরভাবে বিরোধিতা করছে এবং বিভিন্ন বিরোধী সরকার এর বিরুদ্ধে রেজ়োলিউশন পাশ করেছে ৷ এর সঠিক আইনি অবস্থান কী?

উত্তর: এই ঘটনার দুটি দিকের মধ্যে একটি হল আইনি দৃষ্টিভঙ্গি এবং আমি আদালতকেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেব ৷ অন্যদিকে এই বিষয়ে কোনও বক্তব্য আন্দোলনকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই এই বিষয়ে কিছু না বলাই শ্রেয় ৷ তবে এই আন্দোলনের সঙ্গে আইন অমান্য আন্দোলনের একটি সংযোগ রয়েছে , যেমন গান্ধিজির সত্যাগ্রহ ও মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা এবং খান আব্দুল গফ্ফর খানের আদর্শের সঙ্গে মিল রয়েছে ৷ আইন অমান্য নিয়ে বহু সাহিত্য রচনা হলেও তা মূলত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যক্তির লড়াইকে কেন্দ্র করে রচিত ৷ কিন্তু আমি এমন কোনও সাহিত্য দেখেনি যা সংবিধানসম্মত সরকার বা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আইন অমান্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয় ৷ আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর জন্য নাগরিকদের আইন অমান্যের একটি উপাদান রয়েছে যা আইনত বৈধ হতে পারে এবং এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক সম্পর্ক রয়েছে ৷ আশা করি সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্তগুলির দিকে দৃষ্টিপাত করবে ৷

প্রশ্ন: জাতীয়স্তরে কংগ্রেস কীভাবে CAA-র বিরুদ্ধে লড়াই চালাবে?

উত্তর: কংগ্রেস দল বিচক্ষণতার সঙ্গে CAA-র বিরোধিতা করেছে এবং নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের বর্বরতার প্রতিবাদও করেছে ৷ আমাদের নেতা রাহুল গান্ধি ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা ইতিমধ্যেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে পুলিশের বর্বরতার অভিযোগ জানিয়েছে ৷ আমরা মানুষকে সকলভাবে সাহায্য করবো ৷ আমাদের রাজ্য নেতৃত্বকেও এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বলা হয়েছে ৷

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন যে CAA ও প্রস্তাবিত NRC ক্ষমতাসীন BJP-র সংখ্যালঘুদের টার্গেট করার জন্য গোপন অ্যাজেন্ডার অংশ?

উত্তর: আমি মনে করি এটি খুবই স্বস্তিদায়ক যে সকল সম্প্রদায়ের মানুষই CAA-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন ৷ দলিতরা যেমন এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে, তেমনই শিখরাও এগিয়ে আসছেন ৷ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত হিন্দু সম্প্রদায়ও এর বিরোধিতায় শামিল হচ্ছে ৷ CAA বিরোধী আন্দোলনে প্রতিবাদে একধরনের স্বর উঠে আসছে এবং আমাদের উচিত তা এরকমই বজায় রাখা উচিত ৷ সরকার হয়তো এই ঘোষণা করতে খুব খুশি হবে যে কেবল কিছু সংখ্যক মুসলিমই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন, কারণ তাদের আশঙ্কার কারণ রয়েছে ৷ আমার মতে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে প্রতিবাদ জানানোর বিষয়টি ৷ তারা নিজেদের জন্য ভয়ে প্রতিবাদ করছে না ৷ তারা প্রতিবাদ করছে দেশের মঙ্গল চেয়ে ৷

প্রশ্ন: সম্প্রতি দিল্লির নির্বাচনের প্রচারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শাহিনবাগে CAA বিরোধী আন্দোলনের কথা তুলেছিলেন, কিন্তু তা কাজে আসেনি ৷ এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য ৷

উত্তর: আমাদের মোদি বা অমিত শাহের ফাঁদে পা না দিয়ে তাদের এইসব মন্তব্যকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা উচিত ৷ এটি সংবিধানের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ৷

প্রশ্ন: কংগ্রেস তার নেতৃত্ব নিয়ে দোলাচলে রয়েছে ৷ এটা থেকে কি তারা চাঙ্গা হয়ে উঠবে ?

উত্তর: হ্যাঁ, পর পর দুটি ধারাবাহিক মেয়াদের পর আমাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়া উদ্বেগের কারণ । কিন্তু আমরা কাটিয়ে উঠবই, এই বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী । খুব শীঘ্রই তা ঘটবে দেখবেন । দেশের অবস্থা এমন যে কংগ্রেস কোথাও আটকে থাকে না । আমরা শীঘ্রই এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে পারব ৷ নেতৃত্ব বলতে, সোনিয়া গান্ধি আমাদের দলের সভানেত্রী । তারপর আমাদের কাছে রয়েছেন রাহুল গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ও অন্যান্য নেতারা । এটি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এই সিদ্ধান্তটি আমাদের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details