চেন্নাই, 28 জানুয়ারি : চলতি বছরের বাজেট পেশ 1 ফেব্রুয়ারি । তার আগে ETV ভারতের মুখোমুখি কৃষি বিজ্ঞানী ও ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক ডঃ এম এস স্বামীনাথন। তাঁর কথায় এই দশক স্থিতিশীল কৃষির দশক । শুধু সবুজ বিপ্লবের দশক নয় চিরসবুজ বিপ্লবের দশক । জ়িরো বাজেট ফার্মিং থেকে কৃষকদের দ্বিগুণ আয় কিংবা কৃষিতে বিনিয়োগ একাধিক বিষয়ে কথা বললেন তিনি ।
ETV ভারত : কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে । বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি সম্ভব বলে আপনার মনে হয়?
ডঃ স্বামীনাথন : প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছিলেন যে, কয়েক বছরের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে হবে । আমাদের ভাবনায় এটি সম্ভব । কিন্তু, কোনওকিছুই সহজে হয় না । কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা গুরুত্বপূর্ণ ।
ETV ভারত : কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার জন্য এবং কৃষির অবস্থা স্থিতিশীল করে তোলার জন্য সরকারকে কী পদক্ষেপ নিতে হবে?
ডঃ স্বামীনাথন: চাষবাসে যে উৎপাদন খরচ, বিক্রয় মূল্য, করনীতি, সেচসহ বাজারের পরিকাঠামো, ফসল কাটার পরের প্রযুক্তি সবকিছুতেই আমাদের মনোনিবেশ করা দরকার । উদাহরণ হিসেবে মায়ানমারের কথা বলা যেতে পারে । সেখানে একটি ধানগাছের প্রতিটি অংশকে ব্যবহার করেন কৃষকরা । এর মাধ্যমে কৃষকদের উপার্জন তিনগুণ এমনকি চারগুন পর্যন্ত বেড়েছে । একে রাইস বায়ো পার্ক বলা হয় । একইভাবে আমাদের দেশে, একটি রাইস বায়ো পার্ক বা হুইট বায়ো পার্ক তৈরি করা যেতে পারে । যে কোনও শস্যের একটি গাছের প্রতিটি অংশের অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে । এই মুহূর্তে আমরা একটি গাছের 40-50 শতাংশ ব্যবহার করছি । তাই আমাদের কাছে প্রচুর সুযোগ রয়েছে ।
ভিডিয়োয় শুনুন ডঃ স্বামীনাথনের বক্তব্য ETV ভারত : কৃষকরা যখন রাস্তায় প্রতিবাদ করেন, আপনার কি মনে হয় তা দেখে যুবসমাজ কৃষিকাজে উৎসাহী হবে ?
ডঃ স্বামীনাথন : যুবকরা যদি কৃষিকাজে আগ্রহী না হয়, তাহলে কৃষকদের কোনও ভবিষ্যত নেই । একমসয় আমিও কৃষিকাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম । আমি মেডিকেল কলেজে ভরতি হয়েছিলাম । কিন্তু পরে কৃষিক্ষেত্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই । কারণ আমার মনে হয়েছিল ভবিষ্যৎ কৃষির উপরই নির্ভরশীল । কৃষির অগ্রগতি আবার বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল । এজন্যই আমি চিকিৎসাবিদ্যা থেকে কৃষিবিদ্যায় চলে আসি ।
ETV ভারত : কেমন দেখছেন কৃষির ভবিষ্যৎ ?
ডঃ স্বামীনাথন : যদি প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও জলবায়ুর সঙ্গে আমরা কাজ করতে পারি, তাহলে কৃষির ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল । তবে কৃষিক্ষেত্রে টাকার চেয়ে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা বেশি । কৃষকদের বেশি আয় করা অত্যন্ত জরুরি, পাশাপাশি কৃষিতে বেশি বিনিয়োগও জরুরি । সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে স্থিতিশীল কৃষির জন্য আমরা কতটা প্রাথমিক পরিকাঠামো দিতে পারছি, তার উপরই নির্ভর করছে পুরো বিষয়টি । এই দশক স্থিতিশীল কৃষির দশক । এটি সবুজ বিপ্লবের দশক নয় চিরসবুজ বিপ্লবের দশক । আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার (ITO)-র বিশ্ব বাজার নীতির প্রভাব আমাদের উপর পড়া উচিত নয় । আমাদের একটি জাতীয় বাণিজ্য কমিশন থাকা উচিত ।
ETV ভারত : জ়িরো বাজেট ফার্মিং প্রসঙ্গে বিস্তর আলোচনা চলছে । এর মাধ্যমে কি পুরো দেশকে খাওয়ানো যাবে ?
ডঃ স্বামীনাথন : জ়িরো বাজেট ফার্মিংয়ের সঙ্গে একমত নই আমি । কোনওকিছুই শূন্য নয় । জ়িরো বাজেটে কৃষিকাজ বলতে অর্থমন্ত্রী বুঝিয়েছেন, আমরা যাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করতে পারি ও উৎপাদন আরও বাড়াতে পারি ।
ETV ভারত : কৃষিতে বিনিয়োগের ভূমিকা কী?
ডঃ স্বামীনাথন : প্রথম ও প্রধান বিষয় হল বিনিয়োগ । মাটির স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে গাছের স্বাস্থ্য নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রয়োজন । বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আশা করি, নতুন ভারতের নতুন কৃষি হবে কৃষক সহায়ক, দারিদ্র সহায়ক ও গ্রাহক সহায়ক ।