দিল্লি, 2 অগাস্ট : চাকরি হোক বা ব্যবসা বর্তমান কোরোনা পরিস্থিতিতে ঘরে থেকেই প্রত্যেকে কাজ করছেন ৷ আর সেই সঙ্গে বাড়ছে তথ্য ও গোপনীয়তা ফাঁসের মতো একাধিক ঝুঁকি ৷ সাইবার হামলা বিশেষজ্ঞ কর্নেল ইন্দ্রজিৎ সিং এমনই কিছু সাইবার অ্যাটাক সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন ৷ একইসঙ্গে এই সাইবার অ্যাটাকগুলি থেকে বাঁচার উপায়ও বলেছেন তিনি ৷
বিভিন্ন কম্পানিগুলিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু
কোরোনার জেরে এমন এক পরিস্থিতির তৈরি হয় যার জন্য কোনও শিল্পক্ষেত্রই প্রস্তুত ছিল না ৷ প্রত্যেকে নিজেদের কাজ অফিসের বদলে বাড়ি থেকে করতে বাধ্য হয় ৷ তবে, বেশিরভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং বৃহৎ এন্টারপ্রাইজগুলি কখনওই বাড়ি থেকে কাজের এই ধারনার সঙ্গে অভ্যস্ত ছিল না ৷ তাই তারা সাইবার ঝুঁকি ও সুরক্ষা নিয়েও অবগত নয় ৷
অন্যদিকে এন্টারপ্রাইজগুলির কাছে এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে থার্ড পার্টিগুলির সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া ৷ কর্মীদের উপস্থিতি ও তাঁদের জন্য কাজের একটি যথাযথ পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রেও বড় চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন হতে হচ্ছে এন্টারপ্রাইজ়গুলিকে ৷ যাঁরা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছিলেন তাঁদের কাজেও যথোপযুক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ৷ ফলে কর্পোরেট তথ্য ফাঁস ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ৷
এই চ্যালেঞ্জগুলিকে সঙ্গে নিয়েই ব্যবসায়িক কার্যকলাপকে কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কর্মীদের স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যবসায়ে উন্নতি করতে ব্যবসায়ীরা তাঁদের সেরাটা দিয়েছেন ৷ এর ফলে বেশিরভাগ এন্টারপ্রাইজ়গুলি নিজের ব্যবসায়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনাগুলি যাচাইয়ের সুযোগ পেয়েছে ৷ এই মহামারি বিপর্যয় বা কোনও আচমকা ঘটনার মোকাবিলা করতে শিখিয়েছে ৷ সেইসঙ্গে সাইবার স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে শিখিয়েছে ৷ যা এন্টারপ্রাইজ়গুলিকে কর্মীদের জন্য ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ব্যবস্থা করতে সাহায্য করেছে ৷
কোরোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বেড়েছে সাইবার অ্যাটাক
সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রজিৎ ব্যাখ্যা করেন, কোরোনা ভাইরাস ছড়ানোর পর থেকেই সাইবার অ্যাটাকও বেড়েছে ৷ হ্যাকাররা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন এবং প্রতিটি সেক্টরকে নিশানা করছে ৷ IT পরিষেবার উপর নির্ভরশীল বড় সেক্টরগুলির মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা অন্যতম ৷ বর্তমানে এই সেক্টরে সাইবার অ্যাটাক বহু মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ অন্যদিকে এখন বেশিরভাগ ওষুধ কম্পানিগুলি কোরোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার ও পরীক্ষায় ব্যস্ত ৷ আর ঠিক এই সময় কম্পানিগুলির প্রতিষেধ টিকা ট্রায়ালের উপর নজর রাখতে স্পিয়ার-ফিসিং, ম্যালওয়ার, ব়্যানসামওয়্যার ও APTs অ্যাটাক করছে হ্যাকাররা ৷ তাই স্বাস্থ্যসেবা সেক্টর ও ওষুধ তৈরির কম্পানিগুলিকে সাইবার অ্যাটাক থেকে সুরক্ষিত রাখা প্রয়োজন ৷
ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে সাইবার আতঙ্ক
স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রেও বাড়ছে সাইবার অ্যাটাক ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে সাইবার অ্যাটাক আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে ৷ ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিশানা করছে হ্যাকাররা ৷ শুধু তাই নয়, কোরোনা চিন থেকে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর হ্যাকাররা সাইবার অ্যাটাকের রূপ ও প্রক্রিয়াও বদলেছে ৷ কোরোনা অ্যামেরিকা বা ইউরোপে ছড়ানোর পর একরকম প্রক্রিয়ায় সাইবার অ্যাটাক করা হচ্ছিল ৷ কিন্তু ভারতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সাইবার অ্যাটাকের প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ আলাদা ৷
সাইবার হামলা এড়ানোর উপায় এন্টারপ্রাইজ়গুলির তথ্য ফাঁসের থেকেও বেশি উদ্বেগজনক জটিল পরিকাঠামোযুক্ত ক্ষেত্রে সাইবার হামলা
অন্যদিকে পাওয়ার গ্রিড, ওয়াটার প্লান্ট, তেল ও গ্যাস প্লান্ট, টেলিকম নেটওয়ার্ক-এর মতো জটিল পরিকাঠামোযুক্ত ক্ষেত্রগুলিতেও সাইবার হামলার পরিমাণ বেড়েছে ৷ আর এই ক্ষেত্রগুলিকে সুরক্ষিত রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ কারণ কোরোনা পরিস্থিতির জেরে বেশিরভাগ কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করছে ৷ তাই আগের মতো সবকিছুর উপর নজর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ৷ এরই সুযোগ নিয়ে জটিল পরিকাঠামোযুক্ত ক্ষেত্রগুলিতে সাইবার হামলা করছে হ্যাকাররা ৷ এই ক্ষেত্রগুলিকে সুরক্ষিত রাখা যে কোনও দেশের নিরাপত্তার দিক থেকে ভীষণ প্রয়োজনীয় ৷
ফিশিং ই-মেইল কী ?
ফিশিং ই-মেইল হ্যাকারদের কাছে সব থেকে পরিচিত একটি পন্থা ৷ এর মাধ্যমে মেল বক্সে ম্যালওয়্যার পাঠায় হ্যাকাররা ৷ শেষ কয়েক মাসে এই ফিশিং ই-মেইল 600 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷
কীভাবে এই ফিশিং ই-মেলের শিকার হয় মানুষ ?
ধরা যাক, আপনার কাছে একটা নোটিফিকেশন এসেছে ৷ তাতে লেখা, WHO-র তরফে একটি ই-মেইল এসেছে ৷ ওই ই-মেলের সঙ্গে একটি ফাইলও রয়েছে ৷ সেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয় তার উল্লেখ রয়েছে ৷ কোরোনা পরিস্থিতিতে খুব সহজেই যে কেউ ওই ই-মেইলটি পড়তে চাইবেন ৷ তাই মেইলের সঙ্গে আসা অ্যাটাচমেন্টটিকেও ডাউনলোড করবেন ৷ আর তখনই শুরু সমস্যার ৷ কারণ যে মুহূর্তে মেইলে আসা লিঙ্কটিতে আপনি ক্লিক করবেন বা অ্যাটাচমেন্টটি ডাউনলোড করবেন তখনই আপনার সমস্ত তথ্য চুরি হয়ে যাবে ৷ অন্যথায় ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার ঢুকে যাবে ৷
সাইবার সুরক্ষার টিপস
সাইবার হামলা যেমন হচ্ছে ৷ তেমন সাইবার হামলা থেকে বাঁচার উপায়ও রয়েছে ৷ যেমন, ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কড়া এন্ড পয়েন্ট সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা উচিত বিভিন্ন কম্পানি ও সংস্থাগুলির ৷ কারণ কড়া এন্ড পয়েন্ট সিকিউরিটি ভাইরাসযুক্ত ফাইলগুলিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম ৷ তথ্য যাতে ফাঁস না হয় তার জন্য ডেটা লিকেজ প্রিভেন্সন(DLP) সলিউনের ব্যবহার করা উচিত ৷ ভাইরাসযুক্ত ওয়েবসাইটগুলিকে ব্লক করতে ওয়েব ফিল্টারের ব্যবহার করতে হবে ৷ ই-মেইলের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী স্প্যাম ফিল্টারের ব্যবহার করা ৷