পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

আজ ভাগ্য নির্ধারণ দিল্লির, CAA-শাহিনবাগের প্রভাব পড়বে ?

BJP যদি সত্যিই আশাতীত কোনও ফল করে, তবে আম আদমি পার্টি (AAP) আর কংগ্রেস অভিযোগ তুলতেই পারে EVM কারচুপির ৷ আর যদি এমন হয় তাহলে আরও বড় কোন প্রতিবাদের সাক্ষী থাকতে পারে রাজধানী ৷ এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ ৷

By

Published : Feb 10, 2020, 11:56 PM IST

Updated : Feb 11, 2020, 3:47 AM IST

Delhi Assembly Election
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন

দিল্লি, 10 ফেব্রুয়ারি : রাজধানীর আকাশে এখন ভোটের হাওয়া ৷ বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত যদি মিলে যায় এবং কেজরিওয়াল অ্যান্ড কোংয়ের জয়ের ব্যবধানও যদি বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেব মতোই হয়, তবে CAA ও NRC-র চালু করার জন্য এটাই সঠিক সময় কি না তা আরও একবার ভেবে দেখতে হবে কেন্দ্রকে ৷

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের আসরে BJP আগ্রাসী ভূমিকায় না নামা পর্যন্ত আম আদমি পার্টির জয় একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল ৷ কিন্তু কেজরিওয়ালও মাঠে নেমেছিলেন পাঁচ বছরের সাফল্যের খতিয়ান হাতে নিয়ে৷ সবগুলি না হলেও বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি গত পাঁচ বছরে পালন করেছে কেজরিওয়ালের সরকার ৷ দুর্নীতি দমন থেকে শুরু করে নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও জল পরিষেবাসহ একগুচ্ছ আশ্বাস পালনে সফল কেজরিওয়ালের সরকার ৷ মহল্লা ক্লিনিক চালু করা থেকে শুরু করে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও বিশেষ ক্ষেত্রে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বাধ্য করেছেন তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদে ৷ রাজধানীর বুকে বিনামূল্যে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের মতো ঘটনাও ঘটেছে কেজরিওয়ালের মেয়াদকালে ৷

নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগেও সেভাবে চোখে পড়ার মতো কোনও কর্মসূচিতে নামতে দেখা যায়নি BJP দলকে ৷ শেষে প্রাক্তন BJP সভাপতি অমিত শাহের নেতৃত্বে নির্বাচনী প্রচারে নামে BJP শিবির ৷ মোটের উপর এই নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই অনেকটা পিছিয়ে ছিল BJP ৷ তার উপর আরও যোগ হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে শাহিনবাগে মহিলাদের প্রতিবাদ ৷ নির্বাচনের প্রচারে নেমে অমিত শাহ বলেছিলেন, "ভোটের বোতাম এত জোরে টিপুন, যাতে শাহিনবাগ থেকে সেই আওয়াজ শোনা যায় ৷"

এর আগে শাহিনবাগের বিক্ষোভকারীদের প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেছিলেন, গুলি করে মারা উচিত ৷ BJP-র আর এক সাংসদ প্রবেশ বর্মা বিতর্ক উসকে দিয়ে বলেছিলেন, "বিক্ষোভকারীরা হিন্দুদের ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করবে ৷" উনি মনে হয় ভুলে গেছিলেন, শাহিনবাগে যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাদের সিংহভাগই মহিলা ৷ এই ধরনের উত্তেজক মন্তব্যের জেরে শাহিনবাগ ও জামিয়ানগরের কাছে দুই যুবক গুলি চালায় ৷ যদিও কেউ মারা যায়নি সেই ঘটনায় ৷

এই সমস্ত বিদ্বেষ মেশানো কথার উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনের আগে ভোটারদের ধর্মীয় মেরুকরণ সুস্পষ্ট করা ৷ BJP-র দিক থেকে দেখলে, এই মেরুকরণের চেষ্টা অনেকটাই সাহায্য করেছে তাদের ৷ এই কথা মেনেও নিয়েছেন BJP-কর্মকর্তাদের একাংশ ৷ ধর্মীয় ভিত্তিতে না হলেও, CAA ও NRC -র প্রতিবাদের জেরে শাহিনবাগে দিনের পর দিন রাস্তা বন্ধ করে রাখা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষের একাংশ ৷ দিনের পর দিন, রাতের পর রাত ধরে যে সমস্ত মহিলারা দিল্লির ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে শাহিনবাগে অবস্থান করছিল, শুধুমাত্র সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, তাদের শাহিনবাগ থেকে হটিয়ে দিতে যতরকমভাবে চেষ্টা করার ছিল , তা করেছে BJP ৷

শুধুমাত্র শাহিনবাগ ইশুই নয় ৷ রাজধানীর বুকে আম আদমি পার্টির যাবতীয় উন্নয়নের দাবিকেও উড়িয়ে দিয়েছে BJP ৷ উলটে কেজরিওয়ালের সরকারকে নৈরাজ্যবাদী বলেও নির্বাচনী প্রচারে নেমে জানিয়েছিল BJP ৷

2019-এর লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে মোটামুটি সম্মানজনক অবস্থায় ছিল কংগ্রেস ৷ সাতটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বেশিরভাগেই দ্বিতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস ৷ কেজরিওয়ালের উন্নয়নের খতিয়ানের সমালোচনা করেছে সেই কংগ্রেসও ৷ শীলা দীক্ষিতের আমলের কংগ্রেসের উন্নয়নের তুলনাও টেনেছে তাদের শিবির ৷ জাতীয় ও আঞ্চলিক পরিকাঠামোর মাঝেই আটকে গেছে কংগ্রেসের বৈতরণী ৷ তাই BJP-কে সেভাবে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো অবস্থায় নেই কংগ্রেস ৷ প্রায় সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষাই ইঙ্গিত দিচ্ছে দিল্লির বিধানসভায় ফের একবার আসতে চলেছে আম আদমি পার্টি ৷ দ্বিতীয়তে থাকছে BJP ৷ আর সবথেকে শেষে থাকছে কংগ্রেস ৷ যদিও BJP এই সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষার রিপোর্টকেই একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে ৷ তাদের দাবি 70 টি আসনের মধ্যে 48 টি আসছে তাদের দখলে ৷

8 ফেব্রুয়ারি ভোটের হারের চূড়ান্ত কোনও তথ্য নির্বাচন কমিশন প্রকাশ না করায়, BJP- এই দাবি নিয়ে জল্পনাও শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে ৷ 8 ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোটের হার জানানো হয়েছিল 57 শতাংশ ৷ এরপর দিনই যখন আম আদমি ও অন্য দলগুলির মধ্যে ভোটের হারের চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশ হতে দেরি হওয়া নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়, ঠিক তখনই নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয় মোট 62 শতাংশ ভোট পড়েছে ৷ 2015-র বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় এই নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ কম ভোট পড়েছে ৷ বিরোধীরা অভিযোগ তুলছে EVM কারচুপির ৷ বিরোধীরা বলছে, বিকেল 5 টায় ভোট পড়েছিল 50 শতাংশ ৷ সেখান থেকে সন্ধ্যা 6টায় 62 শতাংশ ৷ এই নিয়েই EVM কারচুপির অভিযোগ তুলছে বিরোধী শিবির ৷

BJP যদি সত্যিই আশাতীত কোনও ফল করে, তবে আম আদমি পার্টি আর কংগ্রেস অভিযোগ তুলতেই পারে EVM কারচুপির ৷ আর যদি এমন হয় তাহলে আরও বড় কোন প্রতিবাদের সাক্ষী থাকতে পারে রাজধানী ৷ এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ ৷

তবে BJP হারলেও তারা কিন্তু চুপ করে বসে থাকবে না ৷ CAA ও NRC বিরোধী প্রতিবাদের উপর এবার আরও কড়া হবে BJP ৷ প্রতিবাদকারীদের গ্রেপ্তার করে রাখার জন্য কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন পুলিশ স্টেডিয়ামগুলিকে ব্যবহার করার জন্য ইতিমধ্যেই অনুমতি চেয়ে রেখেছে ৷ বোঝাই যাচ্ছে ভোটের ফলঘোষণার পর আরও বিক্ষোভকারীদের অবস্থা আরও খারাপ হতে চলেছে ৷


(প্রতিবেদনটি লিখেছেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক সঞ্জয় কাপুর)

Last Updated : Feb 11, 2020, 3:47 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details