পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Mar 24, 2020, 11:59 PM IST

ETV Bharat / bharat

ঢাকার ভারতীয় পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে হাই কমিশন: বিদেশ সচিব

পড়ুয়ারা সোমবার রাতে সীমান্ত এলাকায় উপস্থিত হয় যদিও ভারতীয় হাই কমিশনসূত্রে স্পষ্টভাবে তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে, এই মুহূর্তে ভারতে আন্তর্জাতিক এবং আন্তর্দেশীয় সফরের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ বলবৎ রয়েছে, তা মেনে যেন পড়ুয়ারা কখনওই দেশে ফেরার চেষ্টা না করেন।

High Commission in Dhaka in touch with Indians - Foreign Secretary
High Commission in Dhaka in touch with Indians - Foreign Secretary

ঢাকা ও দিল্লি, 24 মার্চ: ঘণ্টাখানেক আগেই সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল, যেখানে স্বরাষ্ট্র এবং বিদেশ মন্ত্রকের কাছে কাশ্মীরের এক দল পড়ুয়া বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরার আরজি জানিয়েছিল । অথচ বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, পড়ুয়াদের বার্তা দেওয়া হয়েছে, তারা যেখানে আছেন, সেখানেই যেন থাকেন । বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধই থাকবে, ভারতীয় পড়ুয়ারা যেন অবিলম্বে হস্টেলে ফিরে আসেন, জানিয়েছেন সে দেশের শীর্ষ আধিকারিকরা ৷

ETV ভারতকে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে দেশের বিদেশ সচিব হর্ষ শ্রিংলা জানিয়েছেন, “ঢাকার হাই কমিশন বাংলাদেশের ভারতীয়দের সঙ্গে (যার মধ্যে পড়ুয়ারাও রয়েছেন) প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছে এবং তাঁদের কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য যা যা করণীয়, সব কিছুই করছে।”

এর আগে মঙ্গলবার সোশাল মিডিয়ায় কিছু ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল, যেখানে দেখা গিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁয় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পেট্রাপোল-বেনাপোল চেক পোস্টের (যা বর্তমানে বন্ধ) কাছে অন্তত ৭০ জন মেডিকেলের পড়ুয়া আটকে রয়েছেন। এরা প্রত্যেকেই কাশ্মীরের বাসিন্দা।

ভিডিয়োয় সেই তরুণ কাশ্মীরি পড়ুয়াদের মধ্যে একজনের গলায় এই আর্তি শোনা গিয়েছে যে, “আমরা বেশ কয়েক বার বিদেশ মন্ত্রকের কাছে আবেদন জানিয়েছি যে আমাদের এই চেকপয়েন্ট দিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। আমরা একেবারেই নিরাপদ বোধ করছি না। এই এলাকা অত্যন্ত জনাকীর্ণ এবং এখানে আমরা রীতিমতো বিপন্ন বোধ করছি। আমরা আপাতত এখানে রাতটুকু কাটাতে রাজি আছি।’’

আর এক জন পড়ুয়ার আবেদন, “আমরা এখানে মোট ৭০ জন কাশ্মীরি পড়ুয়া আছি। সকলে বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছি। কিন্তু বর্তমানে আমরা এই পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে আটকে আছি। ১২-১৬ ঘণ্টা সফর করে এখানে এসে পৌঁছেছি আমরা । আমাদের কলেজ, হস্টেল সব বন্ধ। আমাদের বলা হয়েছে, সব খালি করে দেশে ফিরে যেতে । আমরা এই সীমান্তে গতকাল সন্ধ্যা থেকে আটকে আছি আর কেউ এক দানা খাবারও মুখে তুলতে পারিনি । আমরা এখানেই বসে থাকব যতক্ষণ না আমাদের সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়।”

যদিও ভারতীয় আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এই মুহূর্তে সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোনও উদ্ধারকাজ চালানো হবে না। কারণ ওই সীমান্ত এলাকা বর্তমানে লক ডাউনের আওতায় থাকা জমি বিধি মোতাবেক সেই সব পড়শি দেশের চেকপোস্ট তালিকার অন্তর্গত, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান এবং ভুটান। আধিকারিকদের ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের কথায়, “ভারতে এবং ভারতের মধ্যে অন্য দেশ থেকে আসা যাওয়ার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আর এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা মেনেই সমস্ত সীমান্তবর্তী ক্রসিংগুলিও বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই, পড়ুয়াদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, নিজেদের এবং সকলের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে দ্রুত নিজ নিজ হোস্টেলে ফিরে যান ।”

সূত্রের তরফে আরও দাবি, এই সব পড়ুয়ারা সোমবার রাতে সীমান্ত এলাকায় উপস্থিত হয় যদিও ভারতীয় হাই কমিশনসূত্রে স্পষ্টভাবে তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে, এই মুহূর্তে ভারতে আন্তর্জাতিক এবং আন্তর্দেশীয় সফরের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ বলবৎ রয়েছে, তা মেনে যেন পড়ুয়ারা কখনওই দেশে ফেরার চেষ্টা না করেন।

সেই ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, “জানা গিয়েছে, হস্টেল ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল বলে যে দাবি ওই পড়ুয়ারা করেছিলেন, কলেজের অধ্যক্ষ তা অস্বীকার করেছেন। এবং এ কথা স্পষ্ট করেছেন যে পড়ুয়ারা যে যে হস্টেলে ছিলেন, সেখানেই থাকতে পারবেন ।’’

বাংলাদেশে অন্তত ৭,০০০ ভারতীয় পড়ুয়া রয়েছেন । যদিও সোশাল মিডিয়ায় বর্তমানে নানা ধরনের বার্তা এবং ভিডিয়ো-বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখানো এবং বলা হচ্ছে যে ভারতে লক ডাউন জারি এবং ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে আন্তর্দেশীয় বিমান পরিবহণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে নানা দেশে বহু ভারতীয় পড়ুয়া বর্তমানে আটকে পড়েছেন। আর এই তালিকায় রয়েছে আমেরিকা, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্স।

বিদেশমন্ত্রক সূত্রে এ কথা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, বর্তমান পরিস্থিতির জেরে বিশ্বের বহু দেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের জন্য ঘর-গৃহস্থলির জিনিসপত্র কেনার ব্যাপারে নিয়মকানুন লঘু করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় যারা কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ট্রানজিটে আটকে পড়েছেন, তাঁদের ভারতীয় দূতাবাসের তরফে কিছু খাবারের প্যাকেট বিলি করা হয়েছে। নিউ ইয়র্কের মতো কিছু শহরে যে সব ভারতীয়রা আটকে পড়েছেন, তাঁদের জন্য স্থানীয় হোটেলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে অথবা গুরুদ্বারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠিকই। তবু আধিকারিকদের দাবি, যদিও তাঁরা নানা দেশে আটকে পড়া মানুষের সাহায্যার্থে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলেছেন, তবুও আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে ফেরানোর জন্য কোনও উদ্যোগ গৃহীত হবে না। এর ব্যতিক্রম কেবল তখনই হবে, যখন পরিস্থিতি ইরান বা ইতালির মতো সংকটজনক হয়ে উঠবে।

For All Latest Updates

ABOUT THE AUTHOR

...view details