পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

ক্রমাগত ভূমিক্ষয়ে সংকটে ভবিষ্যৎ

মানুষের জীবনে মাটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু, ক্রমেই জমি তার উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলছে । এর অন্যতম কারণ ভূমিক্ষয় ।

By

Published : Dec 5, 2019, 11:51 PM IST

Erosion
ছবি

দিল্লি, 5 ডিসেম্বর : মানুষের জীবনে মাটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । মানুষ থেকে পশু-পাখি সবার খাদ্য যোগায় জমি । উর্বর জমি শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে । কিন্তু, ক্রমেই জমি তার উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলছে । এর অন্যতম কারণ ভূমিক্ষয় ।

রাষ্ট্রসংঘ 2013 সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ব মাটি দিবস পালন করে আসছে । এ বছরের স্লোগান ভূমিক্ষয় রোধ এবং বসবাসের পক্ষে পৃথিবীকে উপযুক্ত করা । ভূমিক্ষয় বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যার কারণ এবং তা মানব সমাজের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করেছে । আন্তর্জাতিক খাদ্য-কৃষি সংগঠনের অধিকর্তা অধ্যাপক মারিয়া সালিনা আমেডোর মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, সরকারের নির্দিষ্ট নীতি এবং তার কার্যকর করার পরিকল্পনার উপর ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ নির্ভরশীল ।

ক্ষতির পরিমাণ

  • এতে কোনও সন্দেহ নেই উর্বর জমি যে কোনও দেশে মানব স্বাস্থ্যের সম্পদ । সঠিক পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে উর্বর জমির বিকল্প কিছু নেই ।
  • আমরা ভূমি থেকে 95 শতাংশ খাদ্য এবং 99.9 শতাংশ পানীয় জল পেয়ে থাকি । কার্বন এবং দূষণ হ্রাস, ফসলে জল দেওয়া, প্রয়োজনীয় খাদ্য- সরবরাহ জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে । ভারত-সহ গোটা বিশ্বজুড়ে নির্বিচারে এবং ভয়ঙ্কর ভাবে মাটির ব্যবহার হচ্ছে ।
  • রাসায়নিক সারের নির্বিচার ব্যবহার, সার, কীটনাশক, অপ্রয়োজনীয় কর্ষণ এবং অবৈজ্ঞানিক ভাবে জলবণ্টন, অনিয়ন্ত্রিত চাষাবাদ জমি দূষণের অন্যতম কারণ ।
  • উর্ব্বরতা হ্রাসের অন্যতম ফল খাদ্য উৎপাদন হ্রাস, বৃষ্টি এবং বাতাসের দ্বারা ভূমিক্ষয় । আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে ভুল চাষ বড় আকারে ভূমিক্ষয়ের কারণ । কেন্দ্রীয় ভূমি ও জল নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, উচ্চ এলাকায় 8.26 কোটি হেক্টর জমি মুছে গেছে ।
  • প্রায় 5334 টন উর্ব্বর জমি এবং 84 লাখ টন প্রোটিন জলে ধুয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর, এর অন্যতম কারণ ভূমিক্ষয় । 2050 সালের মধ্যে ভূমিক্ষয়ের মাত্রা 90 শতাংশ হয়ে যাবে বিশ্বজুড়ে ।
  • রাষ্ট্রসংঘ সতর্ক করেছে ভূমিক্ষয় খাদ্যসংকট তৈরি করবে । গ্রামীণ এলাকা এবং গরিবদের জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে । এই হারে ভূমিক্ষয় চলতে থাকলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা সংকটজনক অবস্থায় পৌঁছে যাবে । জলস্তর অনেক নিচে নেমে যাবে । যার অর্থ খাদ্য উৎপাদনের মাত্রা প্রায় 50 শতাংশ হ্রাস পাবে ।
  • সবুজ বিপ্লবের জনক স্বামীনাথন জানিয়েছেন, কম উর্বর জমিতে ফসল চাষ করার ফলে উৎপাদিত ফসলের গুণমান অনেক কমে যাবে । শুধু গুণগত মানই নয়, সেই সব ফসল খেলে মানুষের শরীরেও নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
  • এক ইঞ্চি মাটি তৈরি হতে প্রায় হাজার বছর লেগে যায় । গাছ কাটা এবং অন্যান্য শস্য নির্বিচারে কাটার ফলে 80 শতাংশ ভূমিক্ষয় ঘটেছে । বর্তমানে বিশ্বে 33 শতাংশ ভূমিক্ষয় হয়েছে ।
  • ভূমি সংরক্ষণের হার অত্যন্ত কমে যাচ্ছে ভূমিক্ষয়ের ফলে । একই সঙ্গে বাড়বে দূষণের মাত্রা । জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জলের অভাব দেখা দেবে ।
  • এটি রাস্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, যানবাহন, খাদ্য নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলির উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে ।
  • অভিযোজন সমস্যা দক্ষিণ আফ্রিকার নানা দেশ ছাড়া ভারতের মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায় দেখা যায় । ভূমিক্ষয় ভারতের অর্থনীতির উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করবে ।
  • ভূমিক্ষয় সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কৃষক, সরকার এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি দল গঠন করে ভূমিক্ষয় রোধে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা ।
  • জৈব চাষ, পরিমিত নির্মাণ কাজ, সারের যথাসম্ভব কম ব্যবহার, নানা ধরনের চাষ ভূমিক্ষয় প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা নেবে । একইসঙ্গে ঘাস উৎপাদন, স্বল্পকালীন ফসলের বিকল্প চাষ ইতিবাচক ফল দেবে ।
  • কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে সরকারকে।

ABOUT THE AUTHOR

...view details