পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

সুস্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গাজর অপরিহার্য

গাজরের রস আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়িয়ে তোলে । পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমাতেও এর জুড়ি মেলা ভার । এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার উপস্থিত থাকায় গাজর শরীরের পরিপাক প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে । এর পাশাপাশি, এতে উপস্থিত থাকে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন । এই বিটা ক্যারোটিন স্ট্রেস কমাতে খুবই সাহায্য করে ।

By

Published : Dec 24, 2020, 1:45 PM IST

health-and-beauty-benefits-of-carrot
health-and-beauty-benefits-of-carrot

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে গাজরের ভূমিকার কথা সর্বজন বিদিত । গাজর যে শুধু খেতে ভাল তা-ই নয়, এই সব্জি স্বাস্থ্যকরও বটে । শীতকালের এই দুর্দান্ত সব্জি দিয়ে তৈরি হয় একাধিক জনপ্রিয় পদ । এর মধ্যে অন্যতম হল গাজরের হালুয়া । এ ছাড়া রুটি বা চাপাটির সঙ্গে তরকারি হিসাবে বা কেক, পুডিং, আচার, জুস, সালাড— বহু ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় গাজর । কিন্তু আপনি কী জানেন এই পদগুলির মধ্যে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর কোনগুলি? আমরা এখানে বেশ কয়েকটি উপায় বলব যার মাধ্যমে গাজরের পুষ্টিগুণের পুরোটা পাওয়া যেতে পারে । কিন্তু তার আগে এক বার দেখে নেওয়া যাক যে গাজরের মধ্যে ঠিক কী ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে ।

কী কী পুষ্টিকর পদার্থ রয়েছে গাজরে

গাজরে বিটা ক্যারোটিন, ফাইবার, অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট, পটাসিয়াম, আয়রন, কপার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আয়োডিন এবং সোডিয়াম রয়েছে । এই সব উপাদানই খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে প্রয়োজনীয় । এই সবই আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারে লাগে ।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মীর সাতটি গুণ

গাজরের হালুয়ার গুণাগুণ

শীতের মরসুমে ভারতের প্রায় প্রতিটি ঘরেই অত্যন্ত জনপ্রিয় জিভে জল আনা এই মিষ্টি পদ । এর অসাধারণ মিষ্টি স্বাদের সঙ্গে সবচেয়ে জরুরি হল, এটি শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিয়ে থাকে । একাধিক পরীক্ষায় এটা প্রমাণিত যে, রান্না করার ফলে ফেনোলিক অ্যাসিড এবং বিটা ক্যারোটিনের অনেকটা বেড়ে যায় যা গাজরে প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত থাকে । অন্য দিকে, যদি দুধ বা ঘিয়ের সঙ্গে গাজর রান্না করা হয়, তা হলে গাজরে উপস্থিত ফ্যাট উপাদান ক্যারোটিনয়েডের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যায় । আর এই ভাবে আমাদের শরীর গাজরে উপস্থিত পুষ্টির পুরোটা পেয়ে থাকে । এই কারণে গাজরের হালুয়াকে বলা হয় অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাদ্য ।

আরও পড়ুন: বিট-গাজরের ভেষজ লিপস্টিক আসতে চলেছে বাজারে

গাজরের রসের উপকারিতা

গাজরের রস আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়িয়ে তোলে । পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমাতেও এর জুড়ি মেলা ভার । এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার উপস্থিত থাকায় গাজর শরীরের পরিপাক প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে । এর পাশাপাশি, এতে উপস্থিত থাকে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন । এই বিটা ক্যারোটিন স্ট্রেস কমাতে খুবই সাহায্য করে । গাজরে উপস্থিত ভিটামিন এ যে শুধুমাত্র দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে তা-ই নয়, নিয়ম করে এক গ্লাস গাজরের রস খেলে ত্বকও হয়ে ওঠে জেল্লাদার । গাজরে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড হার্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করা হয় । প্রতি দিন নিয়ম করে এটি খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে ।

আরও পড়ুন: সবুজ শাক সবজি? বর্ষাকালে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো

ক্যারট মারমালেড বা গাজরের মোরব্বার গুণাগুণ

আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানি চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ হিসাবে গাজরের মোরব্বা দেওয়া হয় । যে কোনও ধরনের শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং মানসিক অবসাদের সঙ্গে লড়াই করতে এই খাবারকে সুপারফুড বলা হয় । এ ছাড়াও গাজরের মোরব্বার আরও অনেক গুণ রয়েছে । সেগুলি কী? দেখে নেওয়া যাক—

  • মনে করা হয় যে, গাজরের মোরব্বা খেলে ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি কমে যায় । এর কারণ হল, গাজরে উপস্থিত থাকে ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান যা ক্যানসারের কোষগুলিকে মেরে ফেলে ।
  • গাজরের মোরব্বায় প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিনয়েড উপস্থিত থাকে । এই উপাদান থাকার ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় । আলফা ক্যারোটিন, বিটা ক্যারোটিন এবং লুটেইন খুব বেশি পরিমাণে উপস্থিত থাকে শীতকালের এই সব্জিতে ।
  • এই সব্জি খেলে বয়স বেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া স্তিমিত হয় এবং ত্বক দাগ ছোপহীন হয় । বিপাক প্রক্রিয়ার ফলে শরীরের কোষের যে ক্ষতি হয়, তা পুষিয়ে দেয় গাজরে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন । এটি অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে শরীরের উপকার করে ।
  • চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য গাজরকে সবচেয়ে ভাল এবং সবচেয়ে উপকারী উপাদান বলা হয় । আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানি চিকিৎসায় গাজরের মোরব্বাকে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করার রেওয়াজ রয়েছে । এর মধ্যে উপস্থিত বিটা ক্যরোটিন লিভারে পৌঁছে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয় । এর পর এই ভিটামিন এ রূপান্তরিত হয় রোডপ্সিনে । এই রোডপ্সিন রাতের জন্য প্রয়োজনীয় দৃষ্টিকে শক্তিশালী করে তোলে । ছানি হওয়া থেকেও চোখকে রক্ষা করে গাজর ।
  • গাজরের মোরব্বা খেলে দাঁতের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয় । গাজরের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে লালারস মিশে গিয়ে বিভিন্ন অ্যাসিড তৈরি হয় যা দাঁতে ক্যাভিটি তৈরি করা ব্যাকটিরিয়া ধ্বংস করে ।

গাজরের ফেস প্যাক

শুধুমাত্র খাওয়াই নয়, ত্বকে, অর্থাৎ বহিরঙ্গে গাজরের ব্যবহারও যথেষ্ট উপকারী । গাজর থেকে তৈরি ফেস প্যাক ব্যবহার করলে পরিষ্কার, চকচকে এবং জেল্লাদার ত্বক পাওয়া যায় । ত্বকের ধরনের উপর নির্ভর করে পেঁপে, ডিম, ক্রিম, মিল্ক পাওডার, দারুচিনির সঙ্গে গাজরের রস বা পেস্ট মিশিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফেস প্যাক তৈরি ও ব্যবহার করা যায় ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details