নাগরিকত্বের জন্য অভিবাসী ভিসা পেতে অ্যামেরিকায় পাঁচটি বিভাগ আছে । যেমন-রাষ্ট্রের তরফে স্বাভাবিকভাবে নাগরিক অধিকার দান, স্থায়ী নিবাস (গ্রিন কার্ড), পরিবার, শরণার্থী ও দত্তক । অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক শ্রেণিতে অ্যামেরিকায় অভিবাসী নয় যারা তাদের স্বল্পমেয়াদী প্রবেশের অধিকার নিয়ন্ত্রিত হয় H1B, H2B, J ও L ভিসার মাধ্যমে । এই শ্রেণিতেই ট্রাম্প প্রশাসন 24 জুন, 2020 থেকে 31 ডিসেম্বর, 2020 পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ৷ তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে ।
1990 সালের "U.S. ইমিগ্রেসন অ্যাক্ট"-এর আওতায় অ্যামেরিকায় নিয়োগকারীদের H1B ভিসা দেওয়া হয়, যাতে তারা অস্থায়ীভাবে বিদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ডিগ্রিপ্রাপ্ত, কর্মচারীদের নির্দিষ্ট কিছু পেশায় নিয়োগ করতে পারে । সাধারণত, এই ভিসা 3 থেকে 6 বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে, আর ভিসাধারী যে পদে কাজ করছিল, সেই পদে কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাকে অ্যামেরিকা ছাড়তে হয় না । H2B ভিসা দেওয়া হয় অন্য কর্মচারীদের জন্য, যারা আসেন বিশ্বের নির্দিষ্ট 81 টি দেশ থেকে (ভারত ছাড়া) । এদের অ্যামেরিকায় প্রবেশের জন্য কোনও নির্দিষ্ট শিক্ষাগত বা অন্য কোনও যোগ্যতা লাগে না ৷ কোনও মার্কিন নিয়োগকর্তার দেওয়া অস্থায়ী কাজ করতে এরা 6 মাস থেকে 1 বছর পর্যন্ত অ্যামেরিকায় থাকতে পারে । J ভিসা দেওয়া হয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের মানুষদের, যাতে বিশ্বব্যাপী বোঝাপড়ার ভিত মজবুত থাকে ৷ এই ভিসাধারীদের কর্মসূচী শেষ হলে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হয় । L ভিসা দেওয়া হয় সেই সব ‘এক্সিকিউটিভ’দের, যারা অ্যামেরিকার বাইরের কোনও সংস্থায় কাজ করেন ৷ কিন্তু সংস্থার কাজেই অস্থায়ীভাবে বা কোনও বিশেষ দরকারে তাদের অ্যামেরিকায় পাঠানো হয় ।
22 এপ্রিল 2020 অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় ৷ গত 60 দিন ধরে চলা কোরোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে অভিবাসীদের প্রবেশ প্রতিহত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয় ৷ এপ্রিলের এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যে HIB/H2B/L শ্রেণির ভিসার উল্লেখ ছিল না । যারা অভিবাসী নয় তাদের অ্যামেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ততদিন কার্যকর থাকবে যতদিন না 2020 - র নভেম্বরে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজিত হচ্ছে । এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের অ-বিদেশী নীতিরই প্রতিফলন ৷ যা তিনি আসন্ন নির্বাচনের কথা ভেবে ভোট পাওয়ার কথা ভেবে করেছেন ৷
বিগত 3 বছর ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন বিরোধী নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে । অ্যামেরিকায় আফ্রিকান ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অধিবাসীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে ৷ এর ফলে যারা অ্যামেরিকায় শরণার্থী হিসাবে প্রবেশ করতে চান, তাদের পক্ষেও তা করা নিতান্তই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে । দেশের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে যাতে অবৈধ শরণার্থীরা অ্যামেরিকায় ঢুকতে না পারে, সেজন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অ্যামেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণে ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহিত ছিলেন । ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (USCIS) যা অ্যামেরিকায় অভিবাসন সংক্রান্ত নজরদারি চালানোর কাজে নিযুক্ত ৷ তা চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ । ফলে অ্যামেরিকায় প্রবেশের জন্য ইতিমধ্যে যে আবেদনগুলি জমা পড়েছিল, তার দেখাশোনার কাজও অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে ।
এই নয়া পদক্ষেপের পিছনে রয়েছে অ্যামেরিকার কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে COVID—১৯ প্যানডেমিকের নেতিবাচক প্রভাব । 2020 সালের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে অ্যামেরিকায় নামী শিল্পক্ষেত্রে 20 মিলিয়নের বেশি মার্কিন নাগরিক কাজ হারিয়েছেন । আর তাদের ছেড়ে যাওয়া পদে নিয়োগকারীরা H1B ও L ভিসাধারীদের নিয়োগ করেছেন । আবার 17 মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক সেই সব শিল্পক্ষেত্রে কাজ হারিয়েছেন, যেখানে বিদেশ থেকে H2B ভিসাধারী কর্মচারীদের নিয়ে এসে নিয়োগ করার চেষ্টা করা হচ্ছিল ।