বিশাখাপটনম, 7 মে : কাল রাতে যা ঘটল তা হাড়হিম করা । আমাদের বাড়ি গোপালপাট্টানামে । যেখানে গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে । রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আবাসনের ওয়াচম্যান ইন্টারকমে ফোন করে বেরিয়ে আসতে বলে । নীচে এসে যা শুনলাম তাতে হাড়হিম হয়ে গেল । আমাদের পাড়া থেকে চার কিলোমিটার দূরের গ্যাসের কারখানায় গ্যাস লিক হয়েছে । তাই সবাইকে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে । স্থানীয় লোকেদের অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে । গ্যাস লিকের আতঙ্ক, ফলে সোস্যাল ডিসট্যান্সিং সব ভুলে গিয়েছিলাম । গ্যাসের গন্ধে মাথা ধরে আছে এখনও । বিশাখাপটনম গ্যাস লিকের ঘটনায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন এক প্রত্যক্ষদর্শী ।
কোরোনা আতঙ্কের মধ্যেই ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার স্মৃতি উস্কে দিল কেমিকেল প্ল্যান্টে গ্যাস লিকের ঘটনা । আর আর ভেঙ্কটাপুরমের LG পলিমার কারখানার কেমিকেল প্ল্যান্টে বিষাক্ত স্টাইরিন গ্যাস লিক করে এক শিশুসহ 11 জনের মৃত্যু হয়েছে । প্রায় 200 জনকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে । গ্যাসের তীব্রতা এতটাই ছিল যে তা ছড়িয়ে পড়তেই রাস্তায় কিছু লোক অজ্ঞান হয়ে পড়েন । অসুস্থ 5 হাজার মানুষ ।
ভাইজ়্যাগ থেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তন্দ্রা চক্রবর্তী জানালেন সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্তের কথা । তাঁর কথায়, "রাত সাড়ে তিনটের সময় আমাদের আবাসনের ওয়াচম্যান ইন্টারকমে ফোন করে বেরিয়ে আসতে বলে । কারণ জিজ্ঞাসা করলে জানায়, পুলিশ এসেছে । এত রাতে পুলিশ ! স্বাভাবিকভাবেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । এমনিতে কোরোনা ভাইরাসের আতঙ্ক সবসময় । স্বামী ও ছেলে সূর্যর হাত ধরে নীচে নেমে এসে দেখলাম আবাসনের সবাই বাইরে চলে এসেছে । জানতে পারলাম, আমাদের পাড়া থেকে চার কিলোমিটার দূরের গ্যাসের কারখানায় গ্যাস লিক হয়েছে । তাই সবাইকে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে । আমার আগের পাড়ার লোকেদের অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে । গ্যাস লিকের আতঙ্ক, ফলে সোস্যাল ডিসট্যান্সিং সব ভুলে গিয়েছিলাম । সকাল সাড়ে ন'টা অবধি বাইরে বসেছিলাম ।"
ভাইজ়্যাগ থেকে ভয়ঙ্কর মুহূর্তের কথা জানালেন প্রত্যক্ষদর্শী তিনি আরও বলেন, "আমাদের আবাসনটা বড় রাস্তার ওপর । সকাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স, দমকলেরর সাইরেনে মাথা ধরে গিয়েছে । গ্যাসের গন্ধে মাথা ধরে আছে এখনও । লোকজনকে উদভ্রান্তের মত দৌঁড়তে দৌঁড়তে পড়ে যেতে দেখেছি । স্কুটি চালিয়ে যেতে যেতে পড়ে যেতে দেখলাম । মানুষকে ছটফট করে মরে যেতে দেখার অভিজ্ঞতা এই প্রথম ।"
"2008 সালে ভাইজ়্যাগে এসেছিলাম । তারপর থেকে এই শহরেই বাস । আমার স্বামী সুমন চক্রবর্তী রেলের উচ্চপদস্থ কর্মী । বারো বছরের বেশি সময় এই শহরে সুখেই রয়েছি । আমি ব্যারাকপুর মহকুমার বেলঘড়িয়ার মেয়ে । ফলে এই শহরের প্রাণবন্ত পরিবেশ, এখানকার সমুদ্র সৈকত নিয়ে বেশ খুশিই ছিলাম । কিন্তু কাল রাতের ঘটনার ঘোর কাটেনি এখনও । অটোয় করে নিস্তেজ শরীর নিয়ে যেতে দেখছি । যত সংখ্যায় লোক মারা গিয়েছে বলা হয়েছে তার থেকেও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে আমি নিশ্চিত । ছোটবেলায় ভোপাল গ্যাস দূর্ঘটনার কথা শুনেছিলাম । এবার গ্যাস দুর্ঘটনার সাক্ষী হলাম । পুরোটাই দুঃস্বপ্নের মত লাগছে । পুরো জায়গাটা ঘিরে রাখা হয়েছে", বললেন তন্দ্রাদেবী । কবে কাটবে এই দুঃসময় জানেন না তিনি । জানে না কেউ-ই ।