পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

ট্রাম্পের সফরে গুরুত্ব পেতে চলেছে ডোকলাম-কাশ্মীরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইশুগুলি - নরেন্দ্র মোদি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম ভারত সফরের আর ১০ দিনও বাকি নেই । এই অবস্থায় দুই পক্ষই চাইছে বড় কোনও ঘোষণা করতে বা নিদেনপক্ষে আংশিক বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করতে যা বহু মাস আটকে রয়েছে । যদিও বিশ্বের অন্যতম সেরা থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক কারনেগি ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর রুদ্র চৌধুরির মতে, বাণিজ্য দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অন্তরায় হওয়া উচিত নয় । প্রাজ্ঞ, লেখক এবং স্ট্র্যাটেজিক বিশেষজ্ঞ রুদ্র চৌধুরির মতে, যে কোনওরকম বাণিজ্য চুক্তি হওয়াই বেশ কষ্টকর এবং এর সমাধানের কোনও রাস্তা খুঁজে পেতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ব্যক্তিগতভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে হবে । দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, ট্রাম্পের প্রথম সফর নিয়ে হওয়া প্রত্যাশা, রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে ভারতের ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠা সম্পর্ক, কাশ্মীর সমস্যা, CAA এবং NRC পরবর্তী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক, চিনের এবং ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে সিনিয়র জার্নালিস্ট স্মিতা শর্মার সঙ্গে কথা বললেন রুদ্র চৌধুরি ।

ট্রাম্পের সফর
ট্রাম্পের সফর

By

Published : Feb 16, 2020, 8:33 AM IST

Updated : Feb 16, 2020, 11:37 AM IST

দিল্লি, 16 ফেব্রুয়ারি : আংশিক বাণিজ্য চুক্তি প্রায় অসম্ভব, তবে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বাণিজ্য দিয়ে মাপা যায় না । বিশেষজ্ঞের মতে, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে রুপোলি রেখা হল সামরিক চুক্তি । উগ্রপন্থা নিয়ে পাকিস্তানের উপর মার্কিন চাপও চলবে ।’

ETV ভারত : নয়াদিল্লি থেকে ওয়াশিংটন ডিসি পর্যন্ত বহু কথোপকথনের সাক্ষী আপনি । ট্রাম্পের এই ভারত সফর থেকে আপনি কতটা কী আশা করছেন । আপনার প্রত্যাশা কতটা?

রুদ্র চৌধুরি : ভারতে যে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর নিজে থেকেই একটা বড় ঘটনা । আসন্ন ভারত সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্প দিল্লি এবং আমদাবাদে দু’দিন থাকবেন । আমেদাবাদে বিশাল জনসমারোহ হওয়ার কথা । সব মিলিয়ে এই বিষয়গুলি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই আশাপ্রদ । যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বিশেষ করে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে নীতির নড়াচড়া বা ঝালাইয়ের প্রয়োজন । অ্যামেরিকার ক্ষেত্রে, বা বলা ভালো ট্রাম্পের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নীতি ঝালিয়ে নেওয়ার এর থেকে ভালো সময় আর হয় না ।

প্রশ্ন : কয়েক মাসের মধ্যেই অ্যামেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন । আপনার কী মনে হয় অন্য প্রেসিডেন্টরা, যাঁরা তাঁদের মেয়াদের শেষ কয়েক মাসে একেবারেই যেন জড়ভরত হয়ে যান, তাঁদের তুলনায় ভারতে শক্তিশালী ট্রাম্প আসছেন,?

উত্তর : ট্রাম্প আদৌ আর পাঁচ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতো নন । তিনি কি খুব শক্তিশালী অবস্থায় আছেন? সেটা সত্যি বলে তখনই প্রমাণিত হবে, যদি তিনি একটা ভালো লড়াই দিতে পারেন । তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভারতে আসছেন । সদ্য তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে । প্রথম থেকেই মোটামুটি নিশ্চিত ছিল যে, সেনেটে ট্রাম্প এই অভিযোগ থেকে মুক্ত হবেন । কিন্তু আন্তর্জাতিক ইতিহাসের কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়াও একটা বিরাট ঘটনা । সে ক্ষেত্রে ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার মাসেই তাঁর ভারত সফরে আসা একটা বড় ঘটনা । এটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, ট্রাম্প নিজের জন্যই ভারতের সঙ্গে এবং বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে আগ্রহী ।

প্রশ্ন : কিন্তু ট্রাম্প এর আগে একাধিক বার প্রধানমন্ত্রী মোদিকে নিয়ে মজা করেছেন এবং হার্লে নিয়েও একাধিক মন্তব্য করেছেন । তাঁর এই ধরনের মন্তব্যের ফলে দিল্লি অস্বস্তিতে পড়েছে । ট্রাম্প এ রকমই ধরে নিয়ে ভারতের কি উচিত এই ধরনের বিষয়গুলি তেমন গুরুত্ব না দেওয়া?

উত্তর : বাণিজ্য চুক্তি কোনও অবস্থাতেই কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় । বরং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, দুই দেশের মহাগুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কের মধ্যে অন্য কোনও কিছুকে যেন অতিরিক্ত গুরুত্ব না দেওয়া হয় । বাণিজ্য চুক্তির দু’টি দিক আছে । ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট হলেন, তখন তিনি শুধুমাত্র অ্যামেরিকা নয়, ভারত-সহ সমগ্র বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন । ঘটনা হল, তিনি তাঁর প্রচারপর্বে বাণিজ্য সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার প্রভাব পড়েছে ভারতের উপর । অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, GSP, সব ক্ষেত্রেই প্রভাব পড়েছে ভারতে । দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় চিন্তার জায়গা । কিন্তু দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে বাণিজ্যকে একটা বড় বিষয় হিসাবে দেখলে তা বৃহত্তর স্বার্থের ক্ষেত্রে মারাত্মক ভুল হবে । ঘটনা হল, ভারতে একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আসছেন । এই অবস্থায় দুই দেশই চাইছে অন্তত একটা মুখরক্ষার বাণিজ্য চুক্তি করতে, যা গত 18 মাস ধরে আটকে রয়েছে । কিন্তু যদি এই চুক্তি বাস্তবায়িত না-ও হয়, তাতে হয়ত ট্রাম্পের কিছু যাবে আসবে না ৷ কারণ, মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষের নাম রবার্ট লাইটাইজ়ার, কোনওভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্প নন ।

প্রশ্ন : অ্যামেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে নয়াদিল্লির উপর চাপ রয়েছে । আজকের দিনে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ক্ষেত্রে বাণিজ্য কতটা প্রভাব ফেলে বলে আপনার মনে হয়? শিল্পমহলেরই বা চাপ থাকে কতটা?

উত্তর : এই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা লাইটাইজ়ারের, যাঁর গত 30 বছর ধরে এই বিষয়ে নিজস্ব মতামত রয়েছে । 1980 এবং নব্বইয়ের দশকে সেমিকন্ডাক্টরের অনুমোদন বা শুল্ক নিয়ে এই বিষয়টির শুরু । এখন এই অনুমোদন বা শুল্কের বিষয়টি অ্যালুমিনিয়াম, লোহা, এবং একাধিক কৃষিজ বস্তুর উপর এসে পড়েছে । ভারতের দিক থেকে দেখতে গেলে, আমার মতে সম্পর্কটাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত । সম্পর্কটাকে যদি আমরা বাণিজ্য এবং স্ট্র্যাটেজি অথবা বাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষায় ভেঙে ফেলি, তা হলে দেখব, প্রতিরক্ষা বরাবরই ভারত-মার্কিন সম্পর্কে একটা রুপোলি রেখা হয়ে দেখা দিয়েছে । সমস্যাটা হচ্ছে, আমরা যখনই ভারত মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে কথা বলি, তখনই একেবারে পারমাণবিক চুক্তির মতো বড় বিষয়ে গিয়ে পৌঁছই । ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি আর কখনই বাস্তবায়িত হবে না । তাই এই বিষয় নিয়ে প্রত্যাশার পারদ বেশি বাড়িয়ে লাভ নেই । এই সফরের উদ্দেশ্য অনেকটাই বড় ধরনের স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করার । খুব সম্ভবত এই সফরে কোনও বাণিজ্য চুক্তি হবে না । কিন্তু তাতে সফরের গুরুত্ব এতটুকুও কমবে না । হয়ত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত একটা ভাল চুক্তি হবে বা যৌথ গবেষণার সুযোগ বাড়বে ।

প্রশ্ন : LEMOA প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট কী ?

উত্তর : এটি একটি ধীরগতির প্রক্রিয়া ৷ প্রতিরক্ষা সমন্বয় সাধন করে ৷ 2005 সালে তৎকালীন সরকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিল, যা ছিল কূটনৈতিক অংশীদারিত্বের পরবর্তী পদক্ষেপ ৷ এটি ছিল মূলত আইন, নীতি ও মানদণ্ডের সমন্বয়, যার ফলে অ্যামেরিকা ও ভারত একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও মজবুত করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ৷ তবে, লজিস্টিক্স এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অফ এগ্রিমেন্ট (LEMOA)-র বিষয়ে অনেকগুলি প্রশ্ন থেকে যায় ৷ অন্যদিকে, ডিফেন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ট্রেড ইনিশিয়েটিভ (DTTI)-র উপর আপনি এই অংশীদারিত্বের গতিবিধি লক্ষ্য করেছেন ৷ DTTI-তে বিপুল পরিমাণে অগ্রগতি দেখেছেন ৷ উভয় পক্ষই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির নূন্যতম সাধারণ সমঝোতার মধ্যে এসেছে ৷ সুতরাং প্রতিরক্ষা একটি ধীর প্রক্রিয়া হলেও আমরা টানেলের শেষে একটি আলো দেখতে শুরু করেছি ৷

প্রশ্ন : CAATSA—এর ছায়া কি এখনও রাশিয়া থেকে ভারতের কেনা S400-এর উপর ঘনিয়ে আছে? সেটা কি আদৌ আলোচনার অংশ হবে?

উত্তর : রাশিয়া হোক বা তেল বা ইরান, এই সব বিষয় নিয়ে সবসময়ই ভারত সরকারকে কথাবার্তা চালাতে হবে । আমি মনে করি না, ভারতের তরফে কেউ আগে থেকেই সব মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেয় । কিন্তু আমি মনে করি, বর্তমানে অ্যামেরিকার সঙ্গে যে কোনও বিষয়ে আমরা অনেকটাই পরিণতমনষ্কতার পরিচয় দিয়েছি । দেশ হিসাবে আমরা CAATSA (কাউন্টারিং অ্যামেরিকা’জ় অ্যাডভার্সারিজ থ্রু স্যাংশানস) রণকৌশল নিতে পেরেছি, অপরিশোধিত তেল ইশুতে ইরানের উপর থাকা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে, যার প্রভাব আমাদের উপর বেশ কঠোরভাবেই পড়েছে আবার একই সময় আমরা ইরান, রাশিয়া এবং আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কও সুষ্ঠু রাখতে পেরেছি । এটা শুধুমাত্র বিভিন্ন বিষয়কে সমকালীনভাবে নিয়ন্ত্রণ করার প্রশ্ন নয় কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে আমরা আমেরিকার অনিশ্চিত দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে চলার ব্যাপারে বেশ ভালই কাজ করেছি । অবশ্যই এই মুহূর্তে এটা আগের তুলনায় অনেক বেশি অনিশ্চিত । কিন্তু আমার বিশ্লেষণ অনুযায়ী ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি হল, ট্রাম্পের থেকে যা পার নিয়ে নাও এবং এই ধরনের কৌশলী বিষয় নিয়ে রণকৌশল তৈরি কর ।

প্রশ্ন : ডোকলাম উত্তর সময়ে আমরা দেখেছি, দিল্লি চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক পুর্নস্থাপন করেছে কারণ কি প্রত্যাশা অনুযায়ী অ্যামেরিকার অবস্থান ছিল না? এই কঠিন রজ্জুপথ অতিক্রম করা কি অদূর ভবিষ্যতে ভারতের জন্য কৌশলী হয়ে পড়বে কারণ আফগানিস্তানের জন্য তাঁর শান্তি চুক্তির পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে ট্রাম্প পাকিস্তানকে খুশি করার চেষ্টা করবেন?

উত্তর : ডোকলাম নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, তখন বলি, আমার সত্যিই এটা মনে হয় না যে, আমরা মনে করেছিলাম অ্যামেরিকা এটা নিয়ে বলিষ্ঠ কোনও পদক্ষেপ করার ঝুঁকি নিয়ে সমালোচনা ডেকে আনবে । যদি আপনি সেই সময় হোয়াইট হাউজ়ে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে করা মন্তব্যগুলি বিচার করেন, দেখবেন ভারতের নিরিখে তা নিরপেক্ষ, অবাধ ছিল । 2017 সালে যখন চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সুতো একেবারে ছুরির ডগায় ঝুলছিল, যখন চিন-ভুটান উপদ্রুত এলাকায় একশোরও বেশি ভারতীয় সেনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আরও একশোরও বেশি PLA সেনা, তখন ভারতের অন্তিম ইচ্ছা কখনওই এটা হত না যে অ্যামেরিকার অযাচিত হস্তক্ষেপে সংকট আরও আমি মনে করি না যে, ওই ঘটনা (ডোকলাম) ভারত-অ্যামেরিকা সম্পর্ককে কোনওভাবেই প্রভাবিত করেছে । দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের দিক দিয়ে বিচার করলে, আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে । যখন ইমরান খান DC-তে সফর করলেন, দেখে মনে হয়েছিল যেন দু’জন রকস্টার একত্রে সময় কাটাতে সক্ষম হয়েছেন । একে অন্যের প্রতি মুগ্ধ । কিন্তু পাকিস্তানের প্রতি ট্রাম্পের বৃহত্তর পরিকাঠামোগত বিরোধিতায় কোনও পরিবর্তন আসেনি । সন্ত্রাস নিয়ে চাপ অবশ্যই রয়েছে । এই গতকালই FATF (ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স)-এর তরফে চাপের জেরে পাকিস্তানিরা দাবি করেছিল যে, তারা হাফিজ় সইদকে জেলে পুরেছে । এটা সুখবর কিন্তু এই গল্প আমরা আগেও দেখেছি । এই ঘড়ি ওরা আগেও দেখিয়েছে, কিন্তু এবার দেখব বাস্তবে কী হয় । কিন্তু ইমরান খান ওয়াশিংটনে ভালো করেছেন বলে পাকিস্তানের উপরে এই চাপ কখনও বন্ধ হবে না ।

প্রশ্ন : কাশ্মীরকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে সমর্থন করে মার্কিন কংগ্রেসে একটি খসড়া বিল পেশ হয়েছে । ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম-সহ চার জন সেনেটর কাশ্মীর, CAA এবং NRC নিয়ে মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেওকে চিঠি লিখেছেন । এই ‘অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ’ নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে কি নয়াদিল্লি যোগাযোগ করতে পেরেছে এবং এই ইশুগুলি কি ট্রাম্পের সফরের সময় আলোচনায় উঠবে ?

উত্তর : অ্যামেরিকার ভারতীয় মিশন এবং আমাদের কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সবসময় মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে । ভারতীয় আধিকারিক এবং মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যে সাধারণভাবে নানা বিষয় নিয়ে মোটামুটি সুষ্ঠু আলোচনা হয় যদিও সোশাল মিডিয়ায় প্রায়ই কিছুটা হলেও অন্যথার খবর মেলে । এটা কি খুব কৌশলী সময় ? হ্যাঁ । এটা কি সেই সময় যখন কখনও কখনও ভারতের অভ্যন্তরীণ কাঠামো বিচার করে বা কখনও তা না করেই ভারতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের অনেক প্রশ্ন আছে ? হ্যাঁ । এটা কি ট্রাম্প এবং মোদির মধ্যে একটা প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়াবে ? আমার ধারণা বলে, না । এই বিষয়ে বিচারের ভার রাজ্য দপ্তর, আমলাদের উপরই বর্তাবে । হতে পারে ট্রাম্পের কথায় মোদির উল্লেখ হল, কারণ ট্রাম্প খুবই অনিশ্চিত, ওঁর মস্তিষ্ক নানাভাবে প্রশিক্ষণহীন । অ্যামেরিকায় অভ্যন্তরীণভাবে এটা কাজে লেগে যায় । যদি ট্রাম্প মোদিকে কিছু বলেন, আমি মনে করি না তা নিয়ে ইশু হবে । কোনও এজেন্ডা নিয়ে ট্রাম্প এখানে আসছেন না । লিন্ডসে গ্রাহাম ও অন্য তিন সেনেটরের লেখা চিঠি কখনওই ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির কথাবার্তার বিষয় নির্ধারণ করবে না ।

ট্রাম্পের সফরে কোন কোন বিষয় গুরুত্ব পেতে চলেছে জানালেন রুদ্র চৌধুরি

প্রশ্ন : মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের কৌশলগত বিষয়ের বাইরে আমরা শুনেছি ট্রাম্প এইচওয়ান বি ভিসা এবং অভিবাসন সংস্কার নিয়ে ভারতের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেছেন । আজকের দিনে তা নিয়ে কী বলবেন ?

উত্তর : এটা একটা বাস্তব বিষয় । যা কখনওই শুধুমাত্র অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের বিমূর্ত সমালোচনা নয় । ভারতীয় কর্মচারীদের উপর এর কঠোর প্রভাব পড়েছে । আমরা সকলেই জানি, এইচওয়ান বি-র অনিশ্চয়তার ফলে কত মানুষ ধাক্কা খেয়েছেন । ভারত এটা খুব গুরুত্ব সহকারেই দেখছে । কিন্তু আমার ধারণা হল, এই ইশুগুলি এমন, যা অতীতেও কোনও না কোনও সময় দ্বন্দ্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । এর মীমাংসার জন্য কূটনৈতিক স্তরে একে ছেড়ে দেওয়া উচিত । দু’দেশের সম্পর্কে ট্রাম্পের সফর দৃঢ় হবে । আমার আশা, ভারত লাইটাজ়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করুক, ট্রাম্পের কাছে আবেদন করুক এবং তাদের স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে দিক আদপে ভারত এবং অ্যামেরিকার মধ্যে সুষ্ঠু বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে ।

প্রশ্ন : ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতকে মাথায় রেখে অ্যামেরিকার ধ্যানধারণায় কী কী তাৎপর্যপূর্ণ বদল এসেছে ?

উত্তর : এটা দু’ভাবে কাজ করে । অ্যামেরিকা এবং ভারত, দু’ই দেশই এর অন্তর্ভুক্ত । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা আরও বেশি করে বুঝেছে । ঠিক এই জায়গাতেই বিগত কয়েক বছরে ভারতীয় কূটনৈতিকরা ভাল কাজ করেছেন । অ্যামেরিকার কৌশলগত মানচিত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকা আর নেই । এটা এখন ইন্দো বা ভারতের কৌশলগত মানচিত্রের বড় অংশজুড়ে রয়েছে । আমরা এখনও বোঝার চেষ্টা করছি এই ম্যাপের সীমাসূচক রেখাগুলি বাস্তবে কী ? তা কি শুধুমাত্র অনুশীলন সংক্রান্ত বা ‘ব্লু ইকনমি’, অর্থনৈতিক সংযোগস্থাপন এবং অখণ্ডতা বিষয়ক ? না কী তা চার বা পাঁচটি মুখ্য সেনাবাহিনীর নেপথে্য কঠিন শক্তি পুঞ্জীভূত করা নিয়ে, যা জোটবদ্ধ হয়ে কিছুটা হলেও ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় অবাধ আধিপত্যের ছাড় দেয় ? সেটা এখনও দেখা বাকি । ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকা বাদে, আপনি নিজেই কোয়্যাড-এ অনেক বেশি উদ্যম দেখে থাকবেন । চিন নিয়ে এই প্রশ্ন আপনি আগে আমায় করেছেন । আমার নিজের ধারণা হল, চিনের ক্ষেত্রে ভারত কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বা কার্যগত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, দু’টোই সমান গতিতে সচল রাখে । কৌশলগত দিক থেকে চাপের মূল কেন্দ্র হল চতুর্ভুজাকার, ইন্দো-প্যাসিফিক । কূটনৈতিক দিকে বেগ দ্বিপাক্ষিক আর চাপ চতুর্ভুজাকার ।

প্রশ্ন : যদিও বরাবরের দাবি হল, চিনকে বাদ দেওয়া বা দমন করতে কোয়্যাড পরিচালিত হয় না?

উত্তর : কিন্তু তাই হয় আর আমাদের তা বোঝা উচিত ।

Last Updated : Feb 16, 2020, 11:37 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details