পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

ETV ভারতের খবরের জের : হংসী প্রহরীর জীবনে আশার আলো

হংসী প্রহরীর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছিল ETV ভারত ৷ সেই খবর সামনে আসার সাথে সাথেই নড়েচড়ে বসে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন ৷ সাহায্য আসতে থাকে শাসক, বিরোধী দলসহ বিভিন্ন দিক থেকে ৷

ETV Bharat Impact: Uttarakhand Leaders Extend Hands To Help Hansi Prahari
হংসী প্রহরীর সহায়তায় হাত বাড়ালো উত্তরাখন্ড প্রশাসন

By

Published : Oct 20, 2020, 2:42 PM IST

দেরাদুন, 20 অক্টোবর : একসময় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা উত্তরাখণ্ডের কুমায়ু বিশ্ববিদ্যালয়ের হংসী প্রহরী বর্তমানে গঙ্গার ঘাটে ভিক্ষা করেন ৷ একসময় ছিলেন তিনি অসাধারণ ছাত্রী ৷ একাধারে ছাত্র নেতা ৷ লড়াই করেছিলেন নারী অধিকারের জন্যও ৷ কিন্তু, সময়ের মারে আজ তাঁকে জীবন কাটাতে হচ্ছে অসহায়ভাবে ৷ এই হংসী প্রহরীর জীবনকাহিনিই তুলে ধরেছিল ETV ভারত ৷ সেই খবর সামনে আসার সাথে সাথেই নড়েচড়ে বসে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন ৷ সাহায্য আসতে থাকে শাসক, বিরোধী দলসহ বিভিন্ন দিক থেকে ৷

হরিদ্বার প্রশাসন বাড়িয়েছে সাহায্যের হাত :

ETV ভারতে হংসী প্রহরীর খবর প্রকাশের পরই সাহায্যের হাত বাড়ান হরিদ্বারের ADM ৷ ADM গোপাল সিং দেখা করেন হংসীর সঙ্গে ৷ হংসীর ইংরাজিতে কথা বলা শুনে রীতিমতো অবাক হন তিনি ৷ তিনি আশ্বাস দেন, আগামী 1-2 দিনের মধ্যে হংসীকে সরকারের BHL কোয়ার্টারে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে ৷

হংসীর খরচ বহন করবে উত্তরাখণ্ড সরকার :

হংসী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়েছেন আলমোড়ার DM নীতিন ভাদৌরিয়া ৷ এরপর তাঁর সঙ্গে দেখা করেন হরিদ্বারের DM সি রবিশংকর ৷ ক্যাবিনেট মন্ত্রী মদন কৌশিক জানিয়েছেন, যতদিন না পর্যন্ত হংসী সুস্থ হয়ে উঠেছেন ততদিন তাঁর খরচ বহন করবে উত্তরাখণ্ড সরকার ৷ হংসী প্রহরীর পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি ৷ তিনি আরও বলেন, এই খবর পাওয়ার পর , সরকার হরিদ্বারে ভিখারিদের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করবে ৷ যেখানে হংসীর মতো আরও অনেক ভিখারিরাই থাকতে পারবে ৷ পাশাপাশি, উত্তরাখণ্ড বিধানসভা স্পিকার প্রেমচন্দ আগরওয়াল জানান, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে হংসীকে সবরকমের সাহায্যের চেষ্টা করবেন ৷

সাহায্যের হাত বিরোধীদেরও :

উত্তরাখণ্ডে বিরোধী দলের নেতা ইন্দিরা হৃদায়েশ বলেন, আমাদের রাজ্যের একজন অসারাধণ পড়ুয়া আজ ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়েছেন ৷ রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৷ যা অত্যন্ত দুঃখের ৷ রাজ্য সরকারের তার জন্য কিছু করা উচিত ৷

অন্যদিকে, রাজ্যসভা MP প্রদীপ টামটা বলেন, আমি অনেক সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি ৷ তারা হংসীকে সাহায্য করবে ৷ একসময় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চাকরিভিক্ষা করেছিলেন হংসী ৷ আজ তিনি রাস্তায় ভিক্ষা করছেন ৷ বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ৷ আমরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলব যাতে তাঁকে একটি চাকরি দেওয়া যায় ৷ যাতে তিনি পুনরায় জীবন শুরু করতে পারেন ৷

এই সংক্রান্ত খবর : রিদ্বারের গঙ্গাঘাটে ভিক্ষা করে দিন কাটছে কুমায়ু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী ছাত্রীর

হংসী প্রহরীর দুর্দশার খবর শুনে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন পারমার্থ নিকেতনের সুপ্রিম প্রেসিডেন্ট স্বামী ছিদানন্দ সরস্বতী ৷ তিনি হংসী ও তাঁর সন্তানকে তাঁর আশ্রমের আশ্রয় দেওয়ার কথাও জানান ৷

উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত বলেন, হংসীর ব্যাপারে জানতে পেরে আমি আমার দলের সদস্যদের তাঁর সাহায্যের জন্য পাঠিয়েছি ৷ তাঁর জন্য কাজেরও ব্যবস্থা করা হবে ৷ হংসীর সাহায্যের জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করব ৷

ETV ভারতের খবরের জের : হংসী প্রহরীর সহায়তায় হাত বাড়াল উত্তরাখণ্ড প্রশাসন

যে সব বেসরকারি সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছে :

উত্তরাখণ্ডের ইনার হুইল ক্লাব হংসী ও তাঁর সন্তানের থাকা খাওয়া ও পড়াশোনা - সহ সমস্তরকম দ্বায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়েছে ৷

পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে পুরোনো বন্ধুরাও :

একসময় কুমায়ু বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে পড়াশোনা করেছিলেন ৷ তাঁরাও যোগাযোগ করেছেন হংসীর সঙ্গে ৷ হংসীর সহপাঠী ও বন্ধু শালিনী এসেছেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ৷ এছাড়াও দেরাদুনের ডেপুটি কমিশনার ভুবন পান্ডেও কথা বলেছেন হংসীর সঙ্গে ৷ হরিদ্বারের গঙ্গ জ্যোতি সংস্থাও আর্থিক সাহায্য করেছে হংসীকে ৷

উল্লেখ্য, আলমোরা জেলার সোমেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের হাভালবাগ বিকাশখণ্ডের অন্তর্গত গোবিন্দপুরের কাছেই গোবিন্দপুর গ্রাম ৷ এই গ্রামে বড় হওয়া হংসী পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে ছিলেন সবচেয়ে বড় ৷ বাবা সামান্য আয় করতেন বটে তবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য দিনরাত এক করে দিতেন ৷ হংসী বাবার ইচ্ছা ও পরিশ্রমের সম্মান রাখেন ৷ গ্রামের স্কুলে পড়ার পর নিজের যোগ্যতায় কুমায়ু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন ৷ 1999 সালে আলাদা পরিচিতি হয় হংসীর ৷ যখন তিনি কুমায়ু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সহ সভাপতি নির্বাচিত হন । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ও পলিটিকাল সায়েন্সে ডাবল MA করার পর বিশ্ববিদ্যালয়েরই সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে প্রায় চার বছর চাকরি করেন ৷ এর পরই হংসীর জীবনে একটি মোড় আসে ৷ যদিও হংসী নিজে কিছু বলতে চাননি ৷ তবে জানা যায়, বিবাহিত জীবনের জটিল অবস্থার জেরেই হংসীর আজ এই পরিস্থিতি ৷ যদিও তিনি চান না তাঁর সমস্যার জন্য তাঁর দুই ভাই ও পরিবারের অন্যদের উপর কোনওরকম চাপ তৈরি হোক ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details