কলকাতা, 16 ডিসেম্বর: আগেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মাদক ডন । এবার পুলিশ গ্রেপ্তার করল মাদক ডনের মাকে । ছেলেকে আটক করার পর কারবার সামলাচ্ছিল তার মা । মাদক ডন জয়দেব দাসকে গ্রেপ্তারের পর তার মাদক সাম্রাজ্য বছর বাহান্নর রিনা দাসই সামলাচ্ছিল । রবিবার সন্ধ্যায় এন্টালির কনভেন্ট রোড এবং কনাল স্ট্রিটের সংযোগস্থলে দুই মাদক কারবারির কাছে রিনা তুলে দিতে গিয়েছিল ৩০ কেজি গাঁজা । তখনই হাতেনাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ ।
পুলিশ সূত্রে খবর, বেলেঘাটা এলাকার এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠে জয়দেব। । ওই সময় থেকেই মাদক ব্যবসার সূত্রপাত । পরে অবশ্য রাজনৈতিক ওই নেতার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে । মানবাধিকারকর্মী এই পরিচয়- মুখোশের আড়ালে কা়জ চালাতে থাকে জয়দেব । গত লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় মানবাধিকার পার্টির তরফে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীও হয়ে যায় জয়দেব ।
লোকসভা নির্বাচনের পর সে যোগ দেয় একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলে । তদন্তকারীরা মনে করছেন, আসলে এই ব্যবসা চালিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে নিজের চারপাশে একটা বর্ম তৈরি করার । আর সে জন্যই রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে গা ঢাকার চেষ্টা । এভাবেই নিজের মাদক ব্যবসার জাল বাড়িয়ে চলছিল সে । এখন সেই জাল একটু একটু করে কাটছে কলকাতা পুলিশ ।
জয়দেব নিজে মাদক পাচার করত না । তার দলে লোকদের দিয়ে পাচারের কাজ চালাত । বিবেকানন্দ বিদ্যায়তন থেকে অষ্টম শ্রেণী পাস জয়দেব মাদক ব্যবসা করে উপার্জন করেছিল প্রচুর অর্থ । গোয়েন্দারা জেনেছেন, তার মাসেই রোজগার ছিল অন্তত 50 লক্ষ টাকা । নিজের নিরাপত্তার জন্য দু'জন নিরাপত্তা রক্ষী রেখেছিল । 2 নিরাপত্তা রক্ষীকে মাইনে দিতেই তার মাসে খরচ হত 56 হাজার টাকা ।
সম্প্রতি বিশেষ সূত্রে খবর পাওয়া যায় জয়দেব নিজেই আসছে মাদক পাচার করতে। শিয়ালদা স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে । শিয়ালদা থেকে পুলিশ সোজা যায় ট্যাংরায় জয়দেবের বাড়িতে । জয়দেবের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে ছিল তার স্ত্রী গৌরি দাস । শিয়ালদা থেকে লালগোলা যাবার পথেই তার কাছে খবর চলে যায় গ্রেপ্তার হয়েছে জয়দেব । সঙ্গে সঙ্গে সে বাড়িতে মজুত গাঁজায় আগুন ধরিয়ে দেয় । পুলিশ তার বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে পোষা কুকুর লেলিয়ে দেয় পুলিশের দিকে । কুকুরের কামড়ে গুরুতর জখম হন পুলিশের এক কনস্টেবল । পরে গৌরিকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ । বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রায় 22 কেজি গাঁজা।
জয়দেব-গৌরী এই মুহূর্তে জেলে। কিন্তু তার সম্রাজ্য যে বন্ধ হয়নি তা প্রমাণ হয়ে যায় জয়দেবের মা রিনা দাস ও বাবা নেপাল দাসের গ্রেপ্তার হওয়ার পর । গত সন্ধ্যায় রিনা এন্টালি এলাকায় পাচার করতে আসে গাঁজা । নদীয়ার চাকদার করুণাসিন্ধু মাঝি এবং ধাপা রোডের অজয় রাউতের হাতে রিনা গাঁজা তুলে দিতে চেষ্টা করছিল। তক্কে তক্কে ছিল পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় তিন জনকে। উদ্ধার হয় 30 কেজি গাঁজা এবং 62 হাজার টাকা। পরে রিনাকে সঙ্গে নিয়ে মথুরবাবু লেনে তার বাড়িতে তল্লাশি করে পুলিশ। সেখানে উদ্ধার হয় আরও 4 কেজি গাঁজা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এই চক্রে জড়িত আছে আরও অনেকে। তাদের খোঁজ চলছে।